HomeBharatPoliticsমমতার আমলে কিভাবে বদলাল জনসংখ্যা? বিস্ফোরক বিজেপি

মমতার আমলে কিভাবে বদলাল জনসংখ্যা? বিস্ফোরক বিজেপি

- Advertisement -

কলকাতা: বাংলায় হুহু করে বাড়ছে জনসংখ্যা। স্বাধীনতার ঠিক পরে এবং এই মুহূর্তে বাংলার জনসংখ্যা কিভাবে বদলে গেল তার পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যা-পরিবর্তন নিয়ে নতুন করে রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রে বিজেপি।

রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছে গেরুয়া শিবির। তাঁদের দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে বাংলার বিভিন্ন জেলার জনসংখ্যা কাঠামোতে ‘উল্লেখযোগ্য বদল’ ঘটেছে, এবং এই পরিবর্তন আর নীরব বা ধীরে চলা নয় বরং ‘স্পষ্ট ও দ্রুত’। এই দাবি সামনে আসতেই রাজনৈতিক মহলে তীব্র তরজা শুরু হয়েছে।

   

রাজ্যজুড়ে ১৭৫ ইন্সপেক্টরের বদলি, নজর পশ্চিম মেদিনীপুরে

বিজেপির বক্তব্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার কিছুদিন পর এবং বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যে তুলনা করলে দেখা যায়, রাজ্যে হিন্দু–মুসলিম জনসংখ্যার অনুপাতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেছে। বিজেপি নেতা–মন্ত্রীরা সামাজিক মাধ্যমে ও সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি করেছেন, “১৯৫১ সালে পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু জনসংখ্যা ছিল ৭৮.৪৫ শতাংশ এবং মুসলিম জনসংখ্যা ছিল ১৯.৮৫ শতাংশ। কিন্তু বর্তমানে মুসলিম জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৩ শতাংশ এবং হিন্দু জনসংখ্যা কমে হয়েছে আনুমানিক ৬৫ শতাংশ।”

বিজেপির অভিযোগ, এই পরিবর্তন ‘স্বাভাবিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার’ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না। তাঁদের দাবি, এর পেছনে রয়েছে “অবৈধ অনুপ্রবেশ, সীমান্ত এলাকায় তদারকির অভাব এবং রাজনৈতিক স্বার্থে জনসংখ্যা পরিবর্তনকে প্রশ্রয় দেওয়া।” বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের মতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার সীমান্ত নিরাপত্তাকে উপেক্ষা করেছে, যার ফলে সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে জনসংখ্যার ভারসাম্য বদলে গেছে।

বিজেপির আরও অভিযোগ, রাজ্যের কয়েকটি জেলা বিশেষ করে উত্তর ২৪ পরগনা, মালদা, মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ দিনাজপুর ও উত্তর দিনাজপুর গত দেড় দশকে দ্রুত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলায় পরিণত হয়েছে। তাঁদের মতে, “মমতার আমলে আরও বেশি জেলা মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।,” যা তাঁরা ‘গুরুতর জনসংখ্যাগত পরিবর্তন’ হিসেবে ব্যাখ্যা করছেন।

তবে তৃণমূল কংগ্রেস এই অভিযোগকে ‘নির্বাচনের আগে বিভাজনের রাজনীতি’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে। শাসকদল দাবি করছে, বিজেপি নিয়মিতভাবেই ‘ভীতি ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর রাজনীতি’ করছে এবং জনসংখ্যা নিয়ে যেসব পরিসংখ্যান দেখানো হচ্ছে, তা আসল সরকারি তথ্য নয় বরং রাজনৈতিকভাবে সাজানো দাবি মাত্র।

রাজ্যের মন্ত্রীদের বক্তব্য, জনসংখ্যা পরিবর্তন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, যেখানে বিভিন্ন জেলার জন্মহার, নগরায়ন এবং অভ্যন্তরীণ অভিবাসনের মতো সামাজিক–অর্থনৈতিক কারণগুলিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তৃণমূল নেতৃত্বের মতে, বিজেপি ইচ্ছাকৃতভাবে বিষয়টিকে ধর্মীয় রঙ দিচ্ছে।

বিশেষজ্ঞ মহলের একটি অংশ অবশ্য বলছে, জনসংখ্যা সংক্রান্ত তথ্য নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে সরকারি আদমশুমারির হালনাগাদ তথ্যই একমাত্র নির্ভরযোগ্য সূত্র। রাজনৈতিক দাবি বা অনুমানকে তথ্য হিসেবে গ্রহণ করলে ভুল ব্যাখ্যা তৈরি হতে পারে। তাঁদের মতে, রাজ্যের দীর্ঘমেয়াদি জনসংখ্যা পরিবর্তন বিশ্লেষণ করতে হলে প্রয়োজন বিস্তৃত গবেষণা ও তথ্যভিত্তিক মূল্যায়ন।

তবে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে একথা স্পষ্ট—বিজেপির এই নতুন দাবি জনসংখ্যা ও ধর্মচর্চাকে কেন্দ্র করে নতুন বিতর্ক তৈরি করেছে। তৃণমূল ও বিজেপির তরজা যত বাড়বে, ততই বাড়বে জনমতের বিভাজনের আশঙ্কা। বাংলার রাজনীতিতে জনসংখ্যা প্রশ্ন নতুন মাত্রা যোগ করেছে বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

- Advertisement -
এই সংক্রান্ত আরও খবর
- Advertisment -

Most Popular