আসানসোল: পশ্চিম বর্ধমান জেলার অন্ডাল এলাকায় ছটপুজোকে কেন্দ্র করে নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে বিতর্ক। স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ ঘোষণা করেছে, ছটপুজোর দিন যদি কেউ মাছ বা মাংস বিক্রি করে, তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে — এমনকি “বাংলা ছাড়া করার ফতোয়া”ও জারি করা হয়েছে! এই মন্তব্য ঘিরে রাজনৈতিক মহল থেকে সাধারণ মানুষ সবাই বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ।
ঘটনার সূত্রপাত অন্ডাল থানা এলাকার কয়েকটি বাজারে। ছটপুজোর আগের দিন স্থানীয় বিজেপি কর্মীরা বাজার ঘুরে বিক্রেতাদের সতর্ক করে দেন যে, উৎসবের দিন মাছ বা মাংস বিক্রি করা যাবে না। তাদের বক্তব্য “ছটপুজো হিন্দু সমাজের পবিত্র উৎসব। এই দিনে মাছ-মাংস বিক্রি করা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত।”
চা শিল্পে জটিলতা, তিনটি বাগান বন্ধ থাকায় শ্রমিকদের উদ্বেগ
কিন্তু এই ঘোষণার পরেই জোর প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। বহু মানুষ বলছেন, বাংলা এমন এক রাজ্য যেখানে ধর্ম, উৎসব, খাদ্যাভ্যাস সবকিছুতেই মিলেমিশে থাকে। এক সম্প্রদায়ের উৎসব মানে অন্যদের ভয় বা নিষেধ নয়। “আমরা দুর্গাপুজোর সময় কেউকে নিরামিষ খেতে বাধ্য করি না, তাহলে ছটপুজোতে কেন আমাদের মাছ-মাংস বিক্রি বন্ধ করতে হবে?” ক্ষোভ ঝরেছে এক মাছ বিক্রেতার গলায়।
ঘটনা জানাজানি হতেই রাজনৈতিক তরজাও শুরু হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা সরাসরি বিজেপিকে আক্রমণ করে বলেছেন, “বাংলার মাটিতে এই ধরনের ধর্মীয় ফতোয়া চলবে না। বিজেপি আবারও প্রমাণ করল, তাদের একমাত্র লক্ষ্য সমাজে বিভাজন তৈরি করা।” অন্যদিকে, বাম ও কংগ্রেসও সমালোচনার সুরে বলেছে, “খাদ্যাভ্যাসের স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ বাংলার সংস্কৃতির পরিপন্থী।”
তবে বিজেপি নেতৃত্বের শীর্ষ মহল বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। জেলা নেতৃত্বের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, “পার্টির কোনও সরকারি নির্দেশ নয় এটি। হয়তো কেউ ব্যক্তিগতভাবে মন্তব্য করেছেন। বিজেপি কারও ব্যবসা বন্ধের পক্ষে নয়।” কিন্তু স্থানীয়দের বক্তব্য, যাঁরা ওই হুমকি দিয়েছেন তাঁরা প্রকাশ্যে বিজেপির পতাকা ব্যবহার করেছেন এবং বাজারে ঘুরে বিক্রেতাদের ভয় দেখিয়েছেন।
সামাজিক মাধ্যমেও বিষয়টি ভাইরাল হয়েছে। একাধিক ভিডিও ক্লিপে দেখা গিয়েছে কিছু বিজেপি কর্মী বিক্রেতাদের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে হুমকি দিচ্ছেন, “ছটের দিনে মাছ-মাংস বিক্রি করলে বাংলায় থাকা যাবে না।” এই দৃশ্য ঘিরে নেটিজেনদের মধ্যে ক্ষোভ ও ব্যঙ্গ দুই-ই ছড়িয়েছে। কেউ লিখেছেন, “যাদের ধর্ম এত ভঙ্গুর যে মাছের গন্ধেই ভেঙে যায়, তারা অন্য রাজ্যে চলে যাক।”
রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, এই ঘটনা শুধু একটি স্থানীয় বিবাদ নয়, বরং এটি বাংলার বহুত্ববাদী ঐতিহ্যের উপর সরাসরি আঘাত। খাদ্যের স্বাধীনতা ও ধর্মীয় সহনশীলতা – দুই-ই এ রাজ্যের পরিচয়। ছটপুজো যেমন গঙ্গার পাড়ে বাংলার হিন্দু-বিহারি মানুষ একসাথে পালন করেন, তেমনি মাছ-মাংসও এখানে দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ। এই ঘটনায় পুলিশও নড়েচড়ে বসেছে। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বাজারে কেউ জোর করে দোকান বন্ধ করানোর চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


