কলকাতা, ১৪ নভেম্বর: বিহারের ২০২৫ বিধানসভা নির্বাচনে এনডিএ যেভাবে মহাজোটকে কার্যত মাটিতে মিশিয়ে দিল, তাতে রাজনৈতিক মহলের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু এখন একটাই বিজেপির অস্বাভাবিক উচ্চ স্ট্রাইক রেট। সব বিরোধী শিবির স্তব্ধ হয়ে দেখছে, আর ঠিক এই অঙ্কের রহস্য সমাধানে নেমেছেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুনাল ঘোষ।
পরিসংখ্যান হাতে নিয়ে তিনি যেভাবে বিশ্লেষণ টেবিলে সাজিয়ে ধরছেন, তাতে সৃষ্টি হয়েছে তুমুল রাজনৈতিক ঝড়। তিনি সরাসরি বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট চুরির অভিযোগ এনেছেন এবং বলেছেন নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করে বিজেপি এই ফায়দা তুলেছে।
নক্ষত্রপতন: না ফেরার দেশে ‘লাল সিং চাড্ডা’ ছবির অভিনেত্রী
কুনালের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিহারের এই নির্বাচনে বিজেপি লড়াই করেছিল মোট ১০১টি আসনে। সেই ১০১টির মধ্যে তারা জিতেছে ৯৫টি আসনে অর্থাৎ প্রায় ৯৪.৫৯% স্ট্রাইক রেট। ভারতের নির্বাচনী ইতিহাসে এমন নির্ভুলতা খুব কমই দেখা গেছে। তুলনায় নীতীশ কুমারের দল জেডিইউ লড়েছিল সমান সংখ্যক ১০১টি আসনে, যেখানে জয় এসেছে ৮৫টিতে, অর্থাৎ প্রায় ৮৪% সাফল্য।
এই পরিসংখ্যান সামনে এনেই কুনাল ঘোষ করলেন তুলনা। তিনি স্মরণ করিয়ে দিলেন ভারতের একটি ঐতিহাসিক নির্বাচন—১৯৮৪, যেখানে রাজীব গান্ধী ৫১৪টির মধ্যে ৪০৪টি আসন জিতেছিলেন। তাঁর জয় শতাংশ ছিল ৭৮.৬%। আবার বিজেপির নিজের ইতিহাসে সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেট দেখা গিয়েছিল ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে, যেখানে ৫৪২টি আসনে লড়ে বিজেপি জয় করেছিল ৩০৩টি আসন—সাফল্যের হার ৫৫.৯%।
এমন পরিসংখ্যান তুলে ধরে কুনালের প্রশ্ন “তাহলে বিজেপির এই ৯৪.৫৯% স্ট্রাইক রেট কীভাবে সম্ভব?” রাজনৈতিক মহলের একাংশ বলছেন, এটা শুধু জয়ের গল্প নয়, বরং এক অস্বাভাবিক পরিসংখ্যানগত বিস্ময়। কারণ যে দল নিজেই যদি এত প্রবল শক্তিশালী হয়, তাদের আদৌ কোনো জোটের প্রয়োজন ছিল কি?
কুনালের সুরেও সেই প্রশ্নই ঝরল। কুনাল তার মন্তব্যে বলেছেন “বিজেপি যদি নিজে এত শক্তিশালী হতো যে ১০১টির মধ্যে ৯৫টি আসন জিততে পারে, তাহলে নীতীশ কুমারের সঙ্গে জোট করার কী দরকার ছিল? বিজেপির মুখেই তো মুখ্যমন্ত্রীর শপথ হত!”
বিজেপিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে কুনালের এই প্রশ্ন সম্বদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব বলেছে যে বিহারের জয়ে ভয় পেয়েছে তৃণমূল। তাই আগামী বছরের নির্বাচনের আগে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে তারা।
বিহারের ফলাফল ঘোষণা হতেই সারা দেশে যে আলোচনা শুরু হয়েছে ভোটের প্যাটার্ন, বুথওয়ারি অঙ্ক, জোটগত লাভ–ক্ষতির বিশ্লেষণ সবকিছুর কেন্দ্রে এখন বিজেপির প্রায় ‘অতিপ্রাকৃত’ সাফল্যের হার। সোশ্যাল মিডিয়াতেও প্রশ্ন উঠছে এটা কি রাজনৈতিক কৌশল, সাংগঠনিক শক্তির প্রদর্শন, নাকি এর পিছনে রয়েছে আরও জটিল সমীকরণ?
কুনাল ঘোষের বক্তব্যে সেই সন্দেহকেই যেন ভাষা দিল। তিনি বলেন, “এই সাফল্যের পরিসংখ্যান স্বাভাবিক নয়। ভোটের অঙ্কে অনেক প্রশ্ন আছে। গণতন্ত্রে প্রশ্ন তোলা অপরাধ নয়—উত্তর দেওয়া রাজনৈতিক দলের দায়।” বিহারের এই ঝোড়ো ফলাফল যেমন এনডিএ-কে ক্ষমতায় ফিরিয়েছে, ঠিক তেমনই বিরোধী শিবিরে বাড়িয়েছে অস্বস্তি। আর সেই অস্বস্তির গরমে এখন তুঙ্গে উঠেছে রাজনৈতিক বিশ্লেষণ। আগামী কয়েকদিন এই ভোটের অঙ্কই যে জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে, তা বলাই বাহুল্য।


