বোলপুর, ৩ ডিসেম্বর: এ যেন কেঁচো খুঁড়তে কেউটে। চোলাই মদের গোপন সন্ধানে গিয়ে পুলিশ যা হাতে পেল, তা দেখে গা শিউরে উঠল (Birbhum TMC Leader Socket Bomb Recovery)। বীরভূমের লাভপুর থানার অন্তর্গত কিরনাহারের কাছে এক তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য তথা বুথ-স্তরের নেতা শেখ সাহেবুদ্দিনের বাড়িতে অভিযান চালাতেই বেরিয়ে এল ৩২টি শক্তিশালী সকেট বোমা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে বম্ব স্কোয়াড। বোমাগুলো নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে, আর শেখ সাহেবুদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
কিন্তু এই ঘটনা নতুন নয় গত এক মাসে বীরভূম জেলা থেকে উদ্ধার হয়েছে ২,০০০-র বেশি বোমা! রাজ্যের শাসক দলের নেতা-কর্মীদের বাড়ি-ঘরে এত বিস্ফোরকের স্তূপ দেখে সাধারণ মানুষের মুখে একটাই প্রশ্ন এই বোমা কি শুধু দলীয় কোন্দলের জন্য, নাকি আগামী বিধানসভা নির্বাচনের জন্য ‘স্টক’?গতকাল রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ লাভপুর থানার পুলিশ গোপন সূত্রে খবর পায় শেখ সাহেবুদ্দিনের বাড়িতে প্রচুর চোলাই মদ মজুত আছে।
সপ্তাহান্তে অনুশীলনে যোগ দিতে পারেন বাগানের এই তারকা
ইন্সপেক্টর-ইন-চার্জ সৌমেন ভট্টাচার্জি নিজে টিম নিয়ে পৌঁছে যান। দরজা খুলতেই পুলিশের চোখ কপালে ঘরের কোণে প্লাস্টিকের ড্রামে সারি সারি সকেট বোমা। এক পুলিশ অফিসার বললেন, “আমরা ভেবেছিলাম দু’-চার কেস চোলাই পাব। কিন্তু এ যেন একটা ছোটখাটো অস্ত্রাগার!” বোমাগুলোর মধ্যে কয়েকটা এতটাই শক্তিশালী যে, একটাও ফাটলে পুরো পাড়া উড়ে যেত।
শেখ সাহেবুদ্দিনের পরিবারের লোকেরা প্রথমে বলতে চাননি। গ্রেফতারের পর সাহেবুদ্দিন পুলিশকে বলেছেন, “আমি জানতাম না। কেউ এনে রেখে গেছে।” কিন্তু পুলিশের হাতে তার ফোনে পাওয়া গেছে কয়েকজন দলীয় নেতার সঙ্গে বার্তা যেখানে লেখা, “মাল এসে গেছে, নিরাপদে রাখো।” এই ঘটনা বীরভূমে বোমা-রাজনীতির একটা কালো অধ্যায়ের আরেকটা পাতা যোগ করল। গত এক মাসে জেলার বিভিন্ন থানা এলাকা থেকে উদ্ধার হয়েছে ২,১৫০টিরও বেশি বোমা।
রামপুরহাট, ময়ূরেশ্বর, নলহাটি, সিউড়ি কোথাও তৃণমূল নেতার বাড়ি, কোথাও দলীয় অফিসের পিছনে। স্থানীয় সিপিএম নেতা আক্কাস আলি বললেন, “আমরা বছরের পর বছর বলে আসছি বীরভূমে বোমা তৈরি হয় তৃণমূলের ছত্রছায়ায়। এখন পুলিশ নিজেই প্রমাণ পাচ্ছে।” বিজেপির জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা বললেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘শান্তির বাংলা’র আসল ছবি এটাই।”
তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব অবশ্য দাবি করছে, “একজনের ভুলের জন্য পুরো দলকে দায়ী করা যায় না।” কিন্তু দলের অন্দরে লজ্জা আর আতি মিশ্রিত আলোচনা চলছে। এক তৃণমূল বিধায়ক নাম প্রকাশ না করে বললেন, “আমরা বারবার বলেছি বোমা রাখতে নয়। কিন্তু কিছু লোক শোনে না। এখন পুলিশ যদি সত্যি চাপ দেয়, অনেকের নাম বেরিয়ে আসবে।” গত সপ্তাহে রামপুরহাটে আরেক তৃণমূল নেতার বাড়ি থেকে ৪৮টা বোমা উদ্ধারের পর দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের অনুগামীদের নামে ফিসফিস চলছিল।
