উত্তরপ্রদেশের গোঁদা জেলায় এক মর্মান্তিক ঘটনার পর ফের সামনে এসেছে ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়া (SIR) ঘিরে নানা প্রশ্ন। বুথ লেভেল অফিসার (BLO) বিপিন যাদবের মৃত্যুর পর পরিবার অভিযোগ করেছে, তাকে ‘OBC ভোটারদের নাম কাটার’ জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছিল আর সেই চাপ, অপমান ও ভয়েই শেষ পর্যন্ত তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
ঘটনাটি ঘটেছে কয়েকদিন আগে, যখন বিপিন যাদবের পরিবার তাকে ঘরের মধ্যে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। পরিবারের কথায়, “বিপিন মানসিকভাবে চরম চাপে ছিল। তাকে বলা হচ্ছিল—OBC, দলিত, ও সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির ভোটারদের নাম SIR-এর মাধ্যমে বাদ দিতে। সে রাজি না হওয়ায় চাকরি থেকে বরখাস্ত এবং পুলিশ দিয়ে তুলে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।”
ফ্রান্সের সঙ্গে বড় চুক্তি, ভারত তৈরি করবে সবচেয়ে বিপজ্জনক অস্ত্র ‘হ্যামার’
পরিবারের অভিযোগের তীর সরাসরি স্থানীয় SDM এবং লেখপালের দিকে। তাঁদের বিরুদ্ধে দাবি, ওই দু’জন নিয়মিত বিপিনকে ফোন করে ভোটার তালিকা থেকে নির্দিষ্ট শ্রেণির ভোটারদের নাম বাদ দিতে বলতেন। বিপিন সেই নির্দেশ পালন করতে না চাইলে শুরু হয় চাপ, ভয় দেখানো এবং চাকরি হারানোর আতঙ্ক।
প্রতিবেশী ও সহকর্মীদের কথায়, বিপিন কর্মঠ ও সততার সঙ্গে কাজ করতেন। তিনি বহুবার বলেছেন, “ভোটার লিস্ট কাটাছেঁড়া আমি নিয়মমাফিক করি—কেউ আমাকে বেআইনি কিছু করতে বললে করব না।” পরিবার জানায়, শেষ কয়েকদিন ধরে তাঁর আচরণে দুশ্চিন্তার ছাপ ছিল স্পষ্ট। তিনি নিকটজনদের বলেছিলেন, “আমার ওপর অকারণে চাপ বাড়ানো হচ্ছে। আমি যদি ভুল কাজ না করি, তাহলে কেন আমাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে?”
এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে গোঁদা প্রশাসন বলেছে, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসনের দাবি, পরিবারের অভিযোগ অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হবে, তবে এখনই কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাবে না। পুলিশ সূত্রেও জানানো হয়েছে, মৃত্যুর কারণ, মানসিক অবস্থার পরিবর্তন এবং কর্মসংস্থানের চাপ—সবই তদন্তের আওতায়।
তবে ঘটনাটি সামনে আসতেই রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া। বিরোধী দলগুলি অভিযোগ করেছে—“SIR প্রক্রিয়ার আড়ালে নির্দিষ্ট সম্প্রদায় ও সামাজিক গোষ্ঠীর ভোট কেটে দেওয়ার অপচেষ্টা চলছে।” তাঁদের দাবি, BLO–দের ওপর কতটা চাপ তৈরি হলে একজন সরকারি কর্মীর জীবন দিতে হয়, সেটাই এই ঘটনার প্রকৃত প্রতিচ্ছবি।
বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছে, “পিছিয়ে পড়া শ্রেণি, দলিত ও বিরোধী সমর্থক ভোটারদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার নির্দেশ উপরের স্তর থেকে দেওয়া হচ্ছে। এর উদ্দেশ্য স্রেফ রাজনৈতিক সুবিধা।” যদিও ruling party এবং প্রশাসন এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে। প্রশাসনের বক্তব্য, “SIR একটি নিয়মিত সংশোধন প্রক্রিয়া। কোনো ভোটারের নাম ইচ্ছাকৃতভাবে কাটা—আইনসম্মত নয় এবং কোনওভাবে নির্দেশিতও নয়।”
বিশেষজ্ঞদের একটি অংশ বলছে, ভোটার তালিকা সংশোধনের মতো গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় প্রক্রিয়ায় মাঠপর্যায়ের কর্মীদের উপর অস্বাভাবিক চাপ নতুন নয়। তবে কারও মৃত্যুর মতো ঘটনা সামনে আসায় এই প্রক্রিয়া নিয়ে আরও স্বচ্ছতা ও নজরদারির দাবি উঠছে। তাঁদের মতে, “যদি সত্যিই BLO–দের উপর এমন চাপ দেওয়া হয়ে থাকে, তবে এটি শুধু প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়—গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ওপর সরাসরি হামলা।”
এদিকে বিপিন যাদবের পরিবার দাবি করছে, তাঁকে হুমকি দেওয়া কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে তাঁরা ন্যায়বিচার পাবেন না। পরিবারের এক সদস্যের কথায়, “বিপিন নিয়মমাফিক কাজ করতে চেয়েছিল। সেই জন্যই আজ সে নেই। আমরা চাই, দোষীরা শাস্তি পাক।”
এই ঘটনা কেন্দ্র করে এখন SIR প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা, প্রশাসনিক চাপ এবং মাঠপর্যায়ের কর্মীদের নিরাপত্তা—সবই নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে। গোঁদার এই মৃত্যু কি বৃহত্তর কোনো সমস্যার লক্ষণ?—এই প্রশ্নই এখন আলোচনার মূল।
