বিহারের রাজনীতিতে শনিবারের দিনটি এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত হয়ে থাকছে। নিতীশ কুমার আবারও মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়ে ভেঙে দিলেন দুইটি রেকর্ড-তিনি এখন রাজ্যের দীর্ঘতম মেয়াদে দায়িত্বে থাকা মুখ্যমন্ত্রী, পাশাপাশি দশমবারের মতো মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়া ভারতের রাজনীতিতে এক বিরল ঘটনা।
জাতীয় রাজনৈতিক শক্তির সমাবেশ
পাটনার গান্ধী ময়দানে আয়োজিত শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানটি কার্যত পরিণত হয়েছিল জাতীয় রাজনৈতিক শক্তির সমাবেশে। উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা, কেন্দ্রীয় মন্ত্রক থেকে অগ্রণী নেতারা এবং সাতটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী—উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথ, মহারাষ্ট্রের দেবেন্দ্র ফড়নবীশ, গুজরাটের ভূপেন্দ্র পটেলসহ আরও অনেকে। মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে নিতীশ কুমারের উষ্ণ করমর্দন রাজনৈতিক মহলে বিশেষ তাৎপর্য তৈরি করেছে—প্রায় দুই দশকের পুরনো অংশীদারিত্বের এক নতুন অধ্যায় যেন সামনে খুলে গেল।
রাজনৈতিক যাত্রা Bihar Longest Serving CM Nitish
১৯৫১ সালে বখতিয়ারপুরে জন্ম নেওয়া নিতীশ কুমারের রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয়েছিল জেপি আন্দোলনের উচ্ছ্বাসময় দিনগুলোতে। জনতা পার্টিতে যোগ দিয়ে ১৯৭৭ সালে প্রথম বিধানসভায় লড়লেও জয় পাননি তিনি; সেই সাফল্য আসে ১৯৮৫-এ। তার পর ধীরে ধীরে তিনি বিহারের রাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ কণ্ঠ হয়ে ওঠেন—যেখানে প্রশাসনিক দৃঢ়তা, জোট-রাজনীতির জটিলতা এবং ব্যক্তিগত ভাবমূর্তির সংমিশ্রণ তাঁকে তৈরি করেছে রাজ্যের সবচেয়ে প্রভাবশালী মুখ।
২০০০ সালে মুখ্যমন্ত্রীত্বের সফর শুরু
তাঁর মুখ্যমন্ত্রী পদের প্রথম অধ্যায়টি লিখিত হয়েছিল ২০০০ সালে, কিন্তু তা ছিল মাত্র এক সপ্তাহের রাজনৈতিক নাটকীয়তা। ঝুলন্ত বিধানসভা, লালু প্রসাদ যাদবের আরজেডি এবং এনডিএ-র মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের লড়াই, আরজেডির তীব্র চাপ, এবং দুই পক্ষের প্রচণ্ড টানাপোড়েনের মধ্যে শেষপর্যন্ত নিতীশ কুমারের সরকার ১১ মার্চে পতন হয়। সেই সংক্ষিপ্ত মেয়াদই পরবর্তী সময়ের স্থির ও বৃহৎ রাজনৈতিক কাঠামোর ভিত্তি তৈরি করে দেয়।
‘পাল্টু রাম’
পাঁচ দশকের রাজনৈতিক পথচলায় নিতীশ কুমারকে নানা নামে ডাকা হয়েছে—বিরোধীরা কখনও তাঁকে সমালোচনা করে ‘পাল্টু রাম’ বলেছে, আবার রাজ্যের প্রশাসনিক সংস্কার, আইনশৃঙ্খলা ও উন্নয়নমূলক কাজের জোরে তিনি পেয়েছেন ‘সুশাসন বাবু’ নামের অদম্য জনপ্রিয়তা। এই দুই বিস্তৃত পরিচয়ের সংঘাতই তাঁকে সমসাময়িক ভারতীয় রাজনীতিতে এক অনন্য চরিত্রে পরিণত করেছে।
এবারের শপথ, তাই শুধুই একটি রাজনৈতিক আনুষ্ঠানিকতা নয়—এটি বিহারের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে নতুনভাবে বিন্যস্ত করার প্রতিশ্রুতি। নিতীশ কুমার আজ যে জায়গায় দাঁড়িয়ে, তা তাঁর অদম্য সংগঠন-ক্ষমতা, গভীর রাজনৈতিক সম্পর্ক এবং বিহারের নানা মোড়ে জটিল পরিস্থিতি সামলানোর ক্ষমতারই প্রমাণ। তিনি নিজের রেকর্ড ভেঙে যে নতুন ইতিহাস লিখলেন, তা নিঃসন্দেহে আগামী দিনে জাতীয় রাজনীতিতেও আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে।


