পটনা: আসন্ন বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি তাদের প্রথম দফার প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে। তবে কেবল নামের তালিকাই নয়, এ তালিকা বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে বিজেপির কাস্ট ও জেন্ডার কৌশল (caste and gender calculus)। প্রথম তালিকায় মোট ৭১ প্রার্থীর মধ্যে ৫০ শতাংশের বেশি আসন দেওয়া হয়েছে দালিত সম্প্রদায় ও মহিলাদের।
রাজ্য রাজনৈতিক মহলের মতে, বিজেপি মূলত ভোটবাক্স কৌশল অনুযায়ী এই বণ্টন করেছে। তালিকার বিস্তারিত অনুযায়ী, মোট প্রার্থীর মধ্যে ২০ জন হলেন OBC সম্প্রদায়ের, ১১ জন EBC (Extremely Backward Class), ৮ জন মহিলা প্রার্থী, ৬ জন SC/ST সম্প্রদায়ের। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই কৌশল দুটি দিকে কাজ করছে। প্রথমত, দালিত ও পশ্চাদপদ সম্প্রদায়ের মধ্যে বিজেপির গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানো। দ্বিতীয়ত, মহিলাদের অংশগ্রহণ বাড়িয়ে ভোটারদের মনে সাম্য ও অন্তর্ভুক্তি বার্তা পৌঁছে দেওয়া।
বিজেপির মুখপাত্র জানিয়েছেন, “আমরা চাই যে প্রতিটি সম্প্রদায় ও লিঙ্গের মানুষেরা উন্নয়নের অংশ হোক। এই নির্বাচন আমাদের জন্য শুধুই রাজনৈতিক লড়াই নয়, বরং সমাজের এক অন্তর্ভুক্তিমূলক চিত্র গড়ার সুযোগ।” বিগত নির্বাচনে দালিত সম্প্রদায়ের ভোট বিজেপির কাছে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে বিহারের গ্রামীণ ও অর্ধ-শহুরে এলাকায় দালিত সম্প্রদায়ের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। তাই বিজেপি নিশ্চিত করতে চাইছে যে, প্রার্থীদের মধ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও মহিলা কণ্ঠের প্রতিনিধিত্ব স্পষ্টভাবে থাকে।
তালিকায় নাম প্রকাশিত হওয়ার পর রাজনৈতিক মহলে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া এসেছে। বিরোধী দলগুলি অভিযোগ করছে যে, এই কৌশল ভোট ব্যাংক রাজনীতিকে আরও শক্তিশালী করবে। তারা মনে করছেন, “বিজেপি শুধুমাত্র সংখ্যার খেলা করছে, প্রকৃত উন্নয়ন ও সমস্যা সমাধান নয়।” তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি একটি সামগ্রিক কৌশল, যা ভোটারদের কাছে প্রতিনিধিত্ব ও অন্তর্ভুক্তি বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে।
একই সময়, মহিলাদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর পদক্ষেপও লক্ষ্যণীয়। ৮ জন মহিলা প্রার্থীকে কেন্দ্রীয় আসনে প্রার্থী করা হয়েছে, যা রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে লিঙ্গ সমতার বার্তা বহন করছে। বিশেষ করে বিহারের গ্রামীণ এলাকায় মহিলা ভোটারদের প্রভাব উল্লেখযোগ্য।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “এটি শুধুমাত্র একটি প্রার্থী তালিকা নয়। এটি বিজেপির দীর্ঘমেয়াদি কাস্ট ও জেন্ডার কৌশল প্রকাশ করছে। রাজ্যবাসী যেভাবে ভোট দেবেন, তা বড় অংশে এই অন্তর্ভুক্তি নীতির ওপর নির্ভর করবে।”
উল্লেখযোগ্যভাবে, বিহারের আসন্ন নির্বাচন দুই দফায় অনুষ্ঠিত হবে—৬ নভেম্বর ও ১১ নভেম্বর, এবং ফলাফল আসবে ১৪ নভেম্বর। নির্বাচনের ফলাফল কেবলমাত্র রাজ্যের রাজনৈতিক মানচিত্র পরিবর্তন করবে না, বরং দলগুলোর অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি ও কৌশল পরীক্ষার মুখে দাঁড়াবে।
বিজেপি প্রথম তালিকায় এই দালিত ও মহিলাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রার্থী নির্বাচন করে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে “আমরা সব সম্প্রদায়কে অন্তর্ভুক্ত করি এবং বিকল্প রাজনৈতিক কৌশলের সঙ্গে ভোটারদের কাছে যাচ্ছি।” এবারের তালিকা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে শুধুমাত্র একটি কৌশল নয়, বরং বিহারের নির্বাচনে ভোটব্যাংক কৌশলের প্রতিফলন। ভোটাররা এখন তাকিয়ে রয়েছেন কীভাবে এই অন্তর্ভুক্তিমূলক কৌশল নির্বাচনে ফলাফল প্রভাবিত করবে।