২০ বছরের ইতিহাসে রেকর্ড গড়ল NDA

bihar-election-2025-nda-record-vote-share-214-seats

পটনা, ১৪ নভেম্বর: বিহারের ভোট গণনা শেষ। এনডিএ-র ঝুলিতে এসেছে ২১৪টি আসন ২০২০-র ১২৫ থেকে প্রায় ডবল। কিন্তু যে পরিসংখ্যানটি রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের চোখ কপালে তুলে দিয়েছে, সেটা হল ভোটশেয়ার। এনডিএ এবার পেয়েছে ৪৯.৬% ভোট—বিহারের বিধানসভা নির্বাচনের ইতিহাসে গত ২০ বছরে কোনো জোট এত ভোটশেয়ার পায়নি। ২০০৫-এর নভেম্বর নির্বাচনেও এনডিএ-র ভোট ছিল ৩৭.২%।

Advertisements

এমনকি ২০১০-এ নীতীশ-মোদি জুটির সুবর্ণ সময়েও ৪০%-এর গণ্ডি পেরোয়নি। এবার প্রথমবার ৫০%-এর গোড়ায় পৌঁছে গেল এনডিএ। বিহার যেন বলছে ‘আমরা সরকারকে ফিরিয়ে আনতে চাই’।নির্বাচন কমিশনের চূড়ান্ত তথ্য অনুসারে, বিজেপি একাই পেয়েছে ২২.৬% ভোট (৯৩ আসন), জেডিইউ ১৮.৪% (৭৪ আসন), লোক জনশক্তি পার্টি (রামবিলাস) ৫.৮% (২৮ আসন), হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চা ২.১% (১১ আসন) এবং অন্যান্যরা মিলিয়ে মোট ৪৯.৬%।

   

‘আমি মুখ্যমন্ত্রী হতে চাই না’, নিত্যনন্দ রায়ের বিস্ফোরক মন্তব্য

অন্যদিকে মহাজোটের ভোটশেয়ার মাত্র ২৮.৯% আরজেডি ১৮.১%, কংগ্রেস ৫.৪%, বামপন্থীরা ৪.২%। ২০২০-এ মহাজোটের ভোট ছিল ৩৭.২%। মাত্র পাঁচ বছরে ৮ শতাংশেরও বেশি ভোট হারাল তেজস্বী যাদবের জোট।এই জয়কে বিজেপি ‘প্রো-ইনকামবেন্সির ঝড়’ বলে অভিহিত করেছে। দলের জাতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা বলেছেন, “বিহারে এটা শুধু জয় নয়, ভরাট সমর্থন।

জনগণ ভালো শাসন, উন্নয়ন এবং বিকশিত বিহার-বিকশিত ভারত ২০৪৭-এর স্বপ্নে সিল মেরেছে।” প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টুইট করেছেন, “বিহার দাঁড়িয়েছে মোদির সঙ্গে। মহিলা ও যুবশক্তির জয় এটা।”সত্যিই তাই। এবারের নির্বাচনে মহিলা ভোটারদের ভূমিকা অভূতপূর্ব। মোট ভোটারের ৫২% মহিলা, আর তাঁদের ভোট পড়েছে ৬৮.৪%—পুরুষদের চেয়ে ৮ শতাংশ বেশি।

Advertisements

নীতীশ সরকারের ‘জীবিকা’ প্রকল্প, মহিলাদের জন্য ৩৫% পঞ্চায়েত সংরক্ষণ, সাইকেল যোজনা সব মিলিয়ে মহিলারা এনডিএ-কে আশীর্বাদ করেছেন। যুব ভোটাররাও (১৮-৩৫ বয়স) ৬২% এনডিএ-কে ভোট দিয়েছেন বলে এক্সিট পোলের তথ্য। ‘সাত নিশ্চয় যোজনা’, নতুন চাকরির প্রতিশ্রুতি কাজে লেগেছে।

আঞ্চলিকভাবেও ছবিটা চমকপ্রদ। মিথিলাঞ্চল, মগধ, ভোজপুর সর্বত্র এনডিএ-র ঝড়। সীমাঞ্চলের জেলাগুলোতে (যেখানে নেপাল সীমান্ত) বিজেপি-জেডিইউ মিলে ৮৫% আসন জিতেছে। শহুরে এলাকায় বিজেপির দাপট, গ্রামে নীতীশের জাদু—দুয়ের মিশ্রণে এই ঐতিহাসিক জয়।

মহাজোটের পরাজয়ের কারণও স্পষ্ট। তেজস্বী যাদবের ‘১০ লক্ষ চাকরি’ প্রতিশ্রুতি গতবার কাজ করলেও এবার মানুষ বলছেন, “পাঁচ বছরে কত দিলে?” কাস্ট সেনসাস ইস্যুতে আরজেডি আটকে থাকায় যাদব-মুসলিম ভোট ব্যাঙ্কের বাইরে ছড়াতে পারেনি। কংগ্রেসের ৯টি আসন—যা ২০১৯ লোকসভার ১টি থেকে বাড়লেও বিধানসভায় লজ্জাজনক।বিহারের এই ফলাফল জাতীয় রাজনীতিতেও বড় বার্তা।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি বিহারে ৩০টি আসন পেয়েছিল। এবারের বিধানসভা ফল তা আরও মজবুত করল। বিজেপি নেতারা বলছেন, “এটা ২০২৯-এর লোকসভার ট্রেলার।” অন্যদিকে বিরোধী শিবিরে হতাশা। রাহুল গান্ধী বলেছেন, “লড়াই চলবে।” কিন্তু বিহারে তাঁদের লড়াই এখন অনেক কঠিন।