পটনা: বিহার রাজ্যে বৃহস্পতিবার শুরু হচ্ছে বহুল প্রতীক্ষিত বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম দফা। এনডিএ ও মহাগঠবন্ধনের এই লড়াই শুধু ক্ষমতার জন্য নয় এটি দুই ভিন্ন রাজনীতির দৃষ্টিভঙ্গির সংঘর্ষ। একদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের অভিজ্ঞ নেতৃত্ব, অন্যদিকে আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদবের তরুণ উদ্যম ও পরিবর্তনের ডাক।
নির্বাচনের আগে দুই পক্ষই আত্মবিশ্বাসে টইটুম্বুর। এনডিএ দাবি করছে উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার, আর মহাগঠবন্ধন বলছে পরিবর্তনের সময় এসেছে। এরই মধ্যে প্রশান্ত কিশোরের “জন সুরাজ” এবং আসাদউদ্দিন ওয়েইসির “এআইএমআইএম” আলাদাভাবে প্রার্থী দিয়ে সমীকরণে নতুন জটিলতা তৈরি করেছে।
সাফ হয়ে যাবে BJP? আসন সংখ্যা নিয়ে ‘বিস্ফোরক’ দাবী!
এনডিএ র শক্তি কি ?
বিহারের গ্রামগঞ্জে এখনো শোনা যায় “মোদী হ্যা, তো মুমকিন হ্যায়”— এই বিশ্বাসই এনডিএ-র প্রধান ভরসা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের যুগল নেতৃত্ব ভোটারদের মধ্যে স্থিতিশীল শাসনের প্রতীক হয়ে উঠেছে। মহিলাভিত্তিক স্কিম যেমন ‘লক্ষ্মী যোজনা’ ও সরাসরি নগদ সহায়তা ১ কোটি ২৫ লক্ষ মহিলার কাছে পৌঁছেছে যা এনডিএ-কে মহিলা ভোটব্যাংকে শক্ত অবস্থান দিয়েছে। নির্বাচনী ইস্তাহারে ১ কোটি নতুন চাকরি, কৃষক সহায়তা, নারীস্বনির্ভরতা ও অবকাঠামো উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
তবে সবটাই নিখুঁত নয়। নীতীশ কুমারের শারীরিক অসুস্থতা প্রচারে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। জিতন রাম মাঁঝি ও উপেন্দ্র কুশওয়াহার মতো সহযোগীরা আসন বণ্টন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বেকারত্ব ও শ্রম অভিবাসনের সমস্যা বিরোধীদের প্রধান অস্ত্র হয়ে উঠেছে।
মহাগঠবন্ধন: তরুণ তেজস্বীর পরিবর্তনের ডাক
অন্যদিকে আরজেডি, কংগ্রেস ও ভিআইপির নেতৃত্বে গঠিত মহাগঠবন্ধন এবার সম্পূর্ণ তেজস্বী যাদবকেন্দ্রিক প্রচার চালাচ্ছে। তেজস্বীর তারুণ্য, সরল ভাষা ও “১০ লক্ষ চাকরির প্রতিশ্রুতি” গ্রামীণ যুবসমাজকে নতুন আশার আলো দেখাচ্ছে। তেজস্বী স্পষ্ট জানিয়েছেন, “বিহার চায় পরিবর্তন। বিগত ২০ বছরের শাসন এখন ক্লান্ত, নতুন প্রজন্ম চায় কাজ ও মর্যাদা।”
মুসলিম ও যাদব ভোটে ঐতিহ্যগতভাবে শক্তিশালী এই জোট এবার সীমানচল অঞ্চলকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। তবে অভ্যন্তরীণ সমস্যাও রয়েছে। কংগ্রেসের দুর্বল সাংগঠনিক উপস্থিতি এবং আসন বণ্টনে অসন্তোষ জোটের কার্যকারিতা কমাতে পারে। রাহুল গান্ধীর অনুপস্থিতিও একাংশের ভোটারদের হতাশ করেছে।
তৃতীয় শক্তি: প্রশান্ত কিশোর ও ওয়েইসির চমক
‘জন সুরাজ’ আন্দোলনের মাধ্যমে প্রশান্ত কিশোর নিজেকে রাজনৈতিক বিকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন। তিনি প্রচারে গ্রামীণ সমস্যাগুলির সরাসরি সমাধানকে মুখ্য করেছেন। অন্যদিকে, আসাদউদ্দিন ওয়েইসির এআইএমআইএম মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় নিজেদের জমি তৈরি করতে চাইছে। ফলে বিহারের ভোটযুদ্ধ এবার একাধিক ত্রিভুজ লড়াইয়ের সাক্ষী হতে চলেছে।
সমীকরণ স্পষ্ট নয়, ভোটারের সিদ্ধান্তই শেষ কথা
২০২০ সালের মতো এবারও ভোটাররা দ্বিধায় স্থিতিশীল অভিজ্ঞতা নাকি পরিবর্তনের স্বপ্ন? মহিলাদের ভোট এবার গেমচেঞ্জার হতে পারে, কারণ দুই শিবিরই নারীভিত্তিক পরিকল্পনাকে কেন্দ্র করেছে। বিহারের রাজনীতি সবসময়ই জাতপাত, উন্নয়ন ও আবেগের মিশ্রণ। আগামী কয়েক দফায় এই তিনের ভারসাম্যই নির্ধারণ করবে কে হবেন পাটনার পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী নীতীশের অভিজ্ঞ হাত নাকি তেজস্বীর নবজাগরণের ডাক।


