পটনা: বিহারে চলছে গণতন্ত্রের মহোৎসব। ভোটকেন্দ্রের বাইরে সকাল থেকেই লম্বা লাইন, হাতে ভোটার স্লিপ, মুখে প্রত্যাশার ছাপ। এই উচ্ছ্বাসের মধ্যেই কেন্দ্রীয় নেতা ও বিজেপির জ্যেষ্ঠ মুখ আশ্বিনী কুমার চৌবে জানালেন, “এটা শুধু নির্বাচন নয়, গণতন্ত্রের উৎসব। আমি বিহারের সমস্ত মানুষকে আহ্বান জানাচ্ছি, আনন্দের সঙ্গে এই উৎসবে যোগ দিন।”
চৌবে, যিনি বিহারের রাজনীতিতে এক প্রভাবশালী মুখ, আজ সকালে ভাগলপুরে নিজের ভোট দেওয়ার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, “ভোটদানের শুরু থেকেই মানুষ লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁদের মুখে একটাই কথা—উন্নয়ন। এটা স্পষ্ট যে ভোট হচ্ছে এনডিএর পক্ষে। মানুষ ভোট দিচ্ছেন উন্নয়নের নামে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের নেতৃত্বে এক ‘বিকাশশীল বিহার’ গড়ার লক্ষ্যে।”
নিঠারি সিরিয়াল কিলিংয়ে বড় রায় আদালতের
তিনি আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গিতে আরও যোগ করেন, “আমরা ১৮০-র বেশি আসনে জিতব, এবং তা বেড়ে ২০০ পর্যন্ত পৌঁছাবে। এটা শুধু আমার অনুমান নয়, ভোটের মাঠ থেকে প্রাপ্ত বাস্তব অভিজ্ঞতা।” বিহারের নির্বাচনে এবারের মূল লড়াই এনডিএ বনাম মহাগঠবন্ধনের মধ্যে। রাজ্যের নানা প্রান্তে ভোটারদের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। তাঁদের মতে, এনডিএর উন্নয়ন প্রচার এবং কেন্দ্রের জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলো কিছুটা হলেও ভোটে প্রভাব ফেলতে পারে।
চৌবে বলেন, “গত ১০ বছরে বিহারে সড়ক, বিদ্যুৎ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য—প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিবর্তন এসেছে। প্রধানমন্ত্রী মোদির ‘বিকাশিত ভারত’ অভিযানের সঙ্গে বিহার এখন যুক্ত হচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য ‘বিকাশিত বিহার ২০৪৭’।” বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্যে স্পষ্ট, তারা উন্নয়নের ধারাটাকেই ভোট প্রচারের কেন্দ্রে রেখেছে। অন্যদিকে বিরোধীরা শাসক জোটকে বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি এবং কৃষক সমস্যার জন্য কাঠগড়ায় তুলছে। কিন্তু চৌবে মনে করেন, “জনগণ জানেন কারা কাজ করেছে আর কারা শুধু অভিযোগ করেছে। বিহারের মানুষ খুব সচেতন।”
ভোটগ্রহণ চলছে উৎসবের আমেজে। বুথে বুথে মহিলা ভোটারদের উপস্থিতি নজর কাড়ছে। অনেকেই বলছেন, “আমরা চাই, আমাদের সন্তানরা উন্নত বিহারে বড় হোক। তাই এবার ভোট উন্নয়নের জন্য।” চৌবের দাবি, “এনডিএ সরকার বিহারের প্রতিটি নাগরিকের জীবনে স্পর্শ রেখেছে। রেশন থেকে রাস্তা, চিকিৎসা থেকে চাকরি—আমরা বাস্তবিক পরিবর্তন এনেছি। তাই মানুষ আমাদের ওপর আস্থা রাখছেন।”
বিহারের ভোটের প্রথম দফা ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে, বাকি দফাগুলিতেও একইভাবে ভোটের গতি বজায় থাকবে বলে আশা করছেন তিনি। “এটা গণতন্ত্রের শক্তির প্রতীক,” বলেন বিজেপি নেতা। “বিহারের মানুষ আজ যে উচ্ছ্বাসে ভোট দিচ্ছেন, তাতেই প্রমাণ মেলে যে বিহার এগোচ্ছে উন্নয়নের পথে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, চৌবের এই আত্মবিশ্বাস বিজেপি নেতৃত্বের অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নের প্রতিফলন। তবে ফলাফল ঘোষণার আগ পর্যন্ত রাজনীতির মাঠে অনিশ্চয়তার জায়গা থেকেই যাবে। কিন্তু একথা বলাই যায়—বিহারের নির্বাচন এখন সত্যিই এক উৎসব, যেখানে রাজনীতি ছাপিয়ে উঠে আসছে জনগণের আশা ও অংশগ্রহণের চেতনা।


