পটনা: বিহারের নতুন সরকার গঠনের পর প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকেই বড়সড় ঘোষণা। মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের নেতৃত্বে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত সেই বৈঠকের মূল ফোকাস ছিল কর্মসংস্থান, শিল্পায়ন এবং প্রযুক্তি–নির্ভর অর্থনীতি গঠন।
বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিহারের মুখ্যসচিব প্রত্যয় আমৃত জানান, আগামী পাঁচ বছরে রাজ্যের যুব সমাজের জন্য এক কোটি চাকরি সৃষ্টির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে মন্ত্রিসভা। বহুজাতিক বিনিয়োগ, শিল্প, প্রযুক্তিমূলক পরিকাঠামো এবং সরকারি প্রকল্প সব মিলিয়ে একটি সুসংহত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
৪০টি ট্রেন বাতিল, বিপাকে যাত্রীরা
মুখ্যসচিব আরও জানান, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে ডিফেন্স করিডর, সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং পার্ক, গ্লোবাল ক্যাপাসিটি সেন্টার, মেগা টেক সিটি এবং ফিটনেস সিটি প্রতিষ্ঠা করা হবে। লক্ষ্য, পূর্ব ভারতের মধ্যে বিহারকে প্রযুক্তির ‘নতুন কেন্দ্র’ হিসেবে তৈরি করা।
শুধু প্রযুক্তি নয়, অর্থনীতির আধুনিক ধারার ওপর জোর দিতে রাজ্যকে আগামী পাঁচ বছরে “গ্লোবাল ওয়ার্কপ্লেস” এবং “ব্যাক–এন্ড হাব” হিসেবে গড়ে তোলা হবে। প্রত্যয় আমৃতের কথায়, “প্রতিটি খাতে কৌশলগত ও দ্রুত অগ্রগতির জন্য আলাদা ডেডিকেটেড কমিটি তৈরি করা হয়েছে। লক্ষ্যপূরণে কোনও প্রশাসনিক ঘাটতি রাখা হবে না।”
মন্ত্রিসভা বৈঠকে আলোচনার অন্যতম প্রধান অংশ ছিল স্টার্ট-আপ ও তরুণ উদ্যোক্তা উন্নয়ন। রাজ্যের মেধাবী ও কর্মদক্ষ যুবকদের জন্য নতুন অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরিতে একটি বিশেষ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মুখ্যসচিব জানান, “স্টার্ট-আপ ইকোসিস্টেমে কর্মসংস্থান আমাদের প্রধান লক্ষ্য। তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য প্রকল্পভিত্তিক সহায়তা, ইনকিউবেশন সেন্টার, অর্থনৈতিক সহায়তা এবং প্রযুক্তিগত নির্দেশনা দেওয়া হবে।”
এছাড়াও মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পেয়েছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স মিশন যার লক্ষ্য বিহারকে ভারতের অগ্রণী এআই–রাজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিল্পখাত এবং সরকারি পরিষেবায় এআই ব্যবহারের জন্য ধাপে ধাপে দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা হাতে নেওয়া হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের টেক–ট্যালেন্টদের জন্য দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচির কথাও উল্লেখ করেন মুখ্যসচিব।
রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের পাশাপাশি নগরায়ণেও বড়সড় রদবদল আসছে। সরকার ঘোষণা করেছে মোট ১১টি শহরে গ্রিনফিল্ড টাউনশিপ প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরু হবে। এর মধ্যে নয়টি বিভাগীয় শহরের পাশাপাশি সোনেপুর ও সিতামড়ি অন্তর্ভুক্ত।
নতুন টাউনশিপগুলিতে আধুনিক পরিকাঠামো, ছাত্রাবাস, আবাসন, স্বাস্থ্য কেন্দ্র, আইটি করিডর, শিল্প ইউনিট, বাণিজ্য কেন্দ্রসহ একাধিক নাগরিক সুবিধা গড়ে তোলা হবে। লক্ষ্য, জনসংখ্যার চাপ সামলে সমান্তরাল নগরায়ণ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
বৈঠকে কৃষি–শিল্প পুনর্গঠন নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মুখ্যসচিব জানান, বিহারের নয়টি বন্ধ চিনি কল পুনরায় চালু করা হবে এবং নতুন করে ২৫টি চিনি কল নির্মাণের পরিকল্পনা অনুমোদন পেয়েছে। এতে কৃষি নির্ভর শিল্পক্ষেত্রে বড়সড় কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়ার পাশাপাশি গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালী হবে বলেও দাবি প্রশাসনের।
সার্বিকভাবে প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকেই নীতীশ কুমার সরকারের বার্তা স্পষ্ট বিহারকে দ্রুত কর্মসংস্থানমুখী, প্রযুক্তিনির্ভর এবং আধুনিক শিল্প অর্থনীতির পথে নিয়ে যাওয়া। নতুন পরিকল্পনাগুলি বাস্তবায়ন হলে রাজ্যের অর্থনৈতিক মানচিত্রে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে বলেই মনে করছে প্রশাসন।
