বিহারের বিধানসভা নির্বাচনের (Bihar Assembly Election) প্রথম দফা ভোটের ঠিক আগে প্রকাশিত তিনটি বড় ওপিনিয়ন পোল রাজ্যের রাজনৈতিক মঞ্চে নতুন উত্তেজনা তৈরি করেছে। আইএএনএস-ম্যাটারাইজ, পলস্ট্র্যাট এবং চাণক্য এই তিনটি সংস্থা একমত যে এনডিএ (NDA) আবারও সংখ্যাগরিষ্ঠতার সঙ্গে ক্ষমতায় ফিরতে পারে। তবে ভোটারদের বয়স, জাতি ও সামাজিক পটভূমি অনুযায়ী যে ভোটের ধারা তৈরি হয়েছে। সেক্ষেত্রে স্পষ্টভাবে দেখাচ্ছে নির্বাচন একদম একপক্ষীয় হবে না।
ওপিনিয়ন পোলগুলোর ফলাফলের দিকে তাকালে দেখা যায়, আইএএনএস-ম্যাটারাইজ এনডিএকে ১৫৩-১৬৪টি আসনে জয়ী হতে পারে বলে উল্লেখ করেছে। অন্যদিকে, মহাগঠবন্ধন আসন সংখ্যা ৭৬-৮৭ আসনের মধ্যে সীমাবদ্ধ। পলস্ট্র্যাট একটু ভারসাম্যপূর্ণ চিত্র দেখিয়েছে—এনডিএ ১৩৩-১৪৩ এবং মহাগঠবন্ধন ৯৩-১০২ আসনে এগিয়ে থাকতে পারে। চাণক্য সমীক্ষা অনুযায়ী এনডিএ ১২৮-১৩৪ আসনে এবং মহাগঠবন্ধন ১০২-১০৮ আসনে এগিয়ে থাকতে পারে। সব জনমত সমীক্ষার একমত যে, বিহারে ক্ষমতার পালটায় সম্ভাবনা এখনও খুব কম।
তিনটি সমীক্ষার গড় করলে দেখা যায়, এনডিএ প্রায় ১৪০ আসনের কাছাকাছি অবস্থান করছে। ২৪৩ আসনের বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের জন্য যথেষ্ট। মহাগঠবন্ধনের আসনের সম্ভাবনা ৭৬ থেকে ১০৮ এবং অন্যান্য দলের সম্ভাবনা ২ থেকে ৯ আসনের মধ্যে। এই চিত্র দেখাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের জুটি বিহারের রাজনীতিতে এখনও শক্ত অবস্থানে রয়েছে। ফলে প্রথম দফার ভোটের আগে যে ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তা প্রমাণ করছে বিহারের নির্বাচন ‘ক্ষমতার পুনঃপ্রাপ্তি’ হিসেবে বেশি দেখা যেতে পারে। ‘ক্ষমতা পরিবর্তন’ হিসেবে নয়।
আইএএনএস সমীক্ষা প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রিয়তাকেই নির্বাচনের মূল নির্ধারক হিসেবে উল্লেখ করেছে। সমীক্ষা অনুযায়ী, ৬৩ শতাংশ মানুষ মনে করছে যে মোদির জনপ্রিয়তা নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে। মুখ্যমন্ত্রী পদে নীতিশ কুমারের জন্য প্রাথমিক পছন্দের সংখ্যা ৪৬ শতাংশ। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে ৭৩ শতাংশ ভোটার মনে করছে যে নীতিশ সরকারের অবস্থা লালু সরকারের সময়ের চেয়ে ভালো। এর অর্থ, দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার পরও নীতিশের ব্যক্তিগত গ্রহণযোগ্যতা বজায় রয়েছে।
তবে মহাগঠবন্ধনের কৌশলও কম প্রভাবশালী নয়। পলস্ট্র্যাটের সমীক্ষা অনুযায়ী ১৮-২৫ বছর বয়সী যুবকদের একটি বড় অংশ এখনও মহাগঠবন্ধনের প্রতি ঝোঁক রাখছে। যুবাদের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা হল বেকারত্ব, মোট ভোটারের ৩৮ শতাংশের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এটি দেখাচ্ছে, মহাগঠবন্ধনের “প্রতিটি ঘরে চাকরি” পরিকল্পনা কিছুটা প্রভাব ফেলেছে। শহুরে ও আধা-শহুরে এলাকায় তাদের ভিত্তি এখনো কিছুটা দৃঢ়।
পলস্ট্র্যাট সমীক্ষা প্রথমবারের মতো ইঙ্গিত দিচ্ছে প্রশান্ত কিশোরের জনসুরাজ পার্টি ১-৩ আসন জিততে পারে। এছাড়াও, সীমান্তাঞ্চলে AIMIM ২-৩ আসনে প্রভাব ফেলতে পারে।
ভোটের সামাজিক বিভাজনও স্পষ্ট। পলস্ট্র্যাট সমীক্ষা অনুযায়ী, এনডিএর ভোট শতাংশ ৪৪.৮%, মহাগঠবন্ধনের ৩৮.৬%। ৪১-৫৯ বয়সী ভোটাররা প্রধান ভোট ব্যাঙ্ক হিসেবে এনডিএর সাথে আছে, যেখানে যুবা ও সংখ্যালঘুদের মধ্যে মহাগঠবন্ধনের প্রভাব কিছুটা বেশি।


