নিয়োগ কেলেঙ্কারিতে সিবিআই তদন্তে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য

bengal-teacher-recruitment-scam-cbi-ink-marking-revelation-2025

কলকাতা: বাংলার শিক্ষক নিয়োগ কেলেঙ্কারিতে সিবিআই তদন্তে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (সিবিআই) তদন্তে প্রকাশ পেয়েছে যে, তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অফিসে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) প্রার্থীদের তালিকায় কালির রঙ দিয়ে লুকিয়ে সংকেত দেওয়া হত। এই সংকেতের মাধ্যমে বোঝানো হতো কে চাকরি পাবে, কে পাবে না।

Advertisements

তদন্তকারীদের সূত্র থেকে জানা গেছে, এই কৌশলটি মন্ত্রীর প্রভাবশালী চক্রের মাধ্যমে চলত, যাতে রাজনৈতিক সুপারিশের ভিত্তিতে অযোগ্য প্রার্থীরা চাকরি পেয়ে যেত। এই রহস্যের উদ্ঘাটন শুধু একটি প্রশাসনিক অনিয়ম নয়, বরং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ওপর একটি কালো ছায়া বলে মনে করছেন সিবিআই আধিকারিকরা।

ভারতীয় ফুটবলের গর্ব: কেরলের কালীদা সই করলেন বসনিয়ার ক্লাবে

কেলেঙ্কারির মূলে রয়েছে ২০১৪ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে এসএসসির মাধ্যমে সরকারি স্কুলে শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া। এই সময়কালে পার্থ চট্টোপাধ্যায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন এবং তাঁর নির্দেশে একটি বিশেষ উপদেষ্টা কমিটি গঠিত হয়। সিবিআই তদন্তে প্রকাশিত হয়েছে যে, সুপারিশপত্রগুলোতে দুই ধরনের কালির রঙ ব্যবহার করা হত, কালো এবং সবুজ।

কালো কালিতে নাম লেখা মানে প্রার্থী অযোগ্য, যারা কোনোমতেই চাকরি পাবে না। অন্যদিকে, সবুজ কালিতে নাম থাকলে সেটি মন্ত্রীর পছন্দের সংকেত, যা চাকরির পথ সহজ করে দিত। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, এই তালিকাগুলো মন্ত্রীর অফিসে জমা হতো এবং সেখান থেকে এসএসসির কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হতো। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এই সংকেত বুঝতে পারতেন এবং সেই অনুসারে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতেন।

Advertisements

এই তদন্তের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাকতলা অফিস, যেখানে আবেদনপত্র এবং সুপারিশের তালিকা জমা হতো। সিবিআই জানিয়েছে, এসএসসির চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য, উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিংহ এবং সেক্রেটারি অশোক সাহার মতো কর্মকর্তারা এই সংকেত বুঝতেন এবং মন্ত্রীর নির্দেশ মেনে চলতেন। তদন্তে প্রকাশ পেয়েছে যে, যুব নেতারা এবং বিধায়কেরা সশরীরে হাজির হয়ে সুপারিশ করতেন, এবং তাদের পছন্দের প্রার্থীরা অগ্রাধিকার পেত।

মন্ত্রীর অপছন্দের ক্ষেত্রে, এমনকি টাকা দিয়েও চাকরি পাওয়া যেত না। একটি উদাহরণ হিসেবে তদন্তকারীরা উল্লেখ করেছেন, কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির ঘনিষ্ঠরা তাদের নাম বাদ দেওয়ার জন্যও চাপ দিতেন, কিন্তু সবুজ কালির সংকেত না পেলে কিছু যেত না। এই প্রক্রিয়ায় টাকার লেনদেনও জড়িত ছিল চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে মোটা অঙ্কের লেনদেন, যা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) তদন্ত করছে।

এই ভয়ঙ্কর তত্থ প্রকাশ পেতেই রাজনৈতিক মহল এবং সাধারণ মানুষ স্বভাবতই ক্ষুব্ধ। তারা তাদের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে আক্ষেপ এবং রাগের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে বলেছেন এটা চুরি ছাড়া আর কিছুই নয়। পুরো সিস্টেম টাই দুর্নীতি গ্রস্থ।

যারা পরীক্ষা দিচ্ছেন তারা কি ভরসায় পরীক্ষা দেবেন। এখানে তো সরাসরি এসএসসি জড়িয়ে আছে এবং তারা পার্থর সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে চুরি করেছে। তারা আরও বলেছেন তদন্ত যত এগোবে আরও অনেক তথ্য ফাঁস হবে কিন্তু যারা শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে এসেছেন তাদের স্বপ্ন এভাবেই চুরমার হবে।