কলকাতা: ২০২৬ এর ভোটের আগে বঙ্গ রাজনীতিতে শুরু হয়েছে নতুন উত্তাপ। রাজ্যের প্রধান দুই বিরোধী শক্তি CPM এবং BJP দুই দলই বড় কর্মসূচি নিয়ে পথে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। একদিকে সিপিএম তাদের কর্মসূচির নাম দিয়েছে “বাংলা বাঁচাও যাত্রা”, অন্যদিকে বিজেপি ফের “রথযাত্রা” আয়োজনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। ভোট বৈতরণী পার করতে মরিয়া দুই দলের এই দুই জনসংযোগ অভিযানে রাজনৈতিক মহল নিশ্চিত ফেব্রুয়ারি থেকেই উত্তাপ ছড়াবে রাস্তায়, জমে উঠবে বাংলা নির্বাচন।
সিপিএম সূত্রে জানানো হয়েছে, এক মাসব্যাপী চলবে “বাংলা বাঁচাও যাত্রা”। কর্মসূচির লক্ষ্য দুর্নীতি, বেকারত্ব, দোকান–সংস্কৃতির রাজনীতি, দুর্বল শিল্পনীতি, সরকারি প্রকল্পে বঞ্চনা ও কেন্দ্রীয়–রাজ্য দ্বন্দ্বের ফলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ তুলে ধরা। জেলা থেকে ব্লক, গ্রাম থেকে শহর জনমুখী সমাবেশ, পথসভা, প্রচার ও সাংস্কৃতিক কর্মসূচির মাধ্যমে জনসংযোগ জোরদারের পথে হাঁটতে চায় বামফ্রন্ট। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘস্থায়ী জনভিত্তি পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে নামছে সিপিএম।
চণ্ডিগড় বিতর্কে উত্তপ্ত পাঞ্জাব, কেন্দ্রকে আক্রমণ
কিন্তু রাজনৈতিক আকর্ষণের কেন্দ্রে আসছে বিজেপির রথযাত্রা। গেরুয়া শিবির ইতিমধ্যেই ফেব্রুয়ারিতে কর্মসূচি শুরুর নীল নকশা তৈরি করে ফেলেছে। পরিকল্পনা হল পশ্চিমবঙ্গকে পাঁচটি সাংগঠনিক জোনে ভাগ করে পাঁচটি রথ অর্থাৎ পঞ্চরথ যাত্রা করবে গোটা রাজ্য জুড়ে। লক্ষ্য ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্র ছুঁয়ে কলকাতায় পৌঁছনো, আর সেই সমাপ্তি অনুষ্ঠানে ব্রিগেডে সভা করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এমনটাই চাইছে বিজেপি। শুধু তাই নয় উদ্বোধনী পর্বেই অমিত শাহ, জেপি নাড্ডা সহ প্রথম সারির কেন্দ্রীয় নেতাদের মঞ্চে আনার প্রচেষ্টা চলছে।
রাজনৈতিক ইতিহাসেও রথযাত্রা বিজেপির সফল টার্নিং–পয়েন্ট। লালকৃষ্ণ আদবানি যখন রথযাত্রায় দেশ জুড়ে সাড়া ফেলেছিলেন, তখন বিজেপির সংগঠন শক্তিশালী ছিল না। পরে সেই কর্মসূচিই বদলে দিয়েছিল ভারতের রাজনৈতিক ছবি। সেই কারণেই বিজেপি মনে করছে বাংলায় পরীক্ষিত ‘ওষুধ’ ফের প্রয়োগ করা প্রয়োজন।
তবে বাধাও স্মরণে আছে আগের বার প্রশাসনের অনুমতি না পেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়েছিল কেন্দ্রীয় শাসকদলকে। আদালত শর্তারোপ করায় প্রচারের জৌলুস যেন অনেকটাই কমেছিল। এবার তাই বিজেপি আগেভাগেই প্রস্তুতি সেরে নিতে চাইছে।
বিজেপির ভেতরেও চর্চা কম নেই। রাজ্যের পাঁচ সাংগঠনিক জোনে পাঁচ জন ভিনরাজ্যের সাধারণ সম্পাদক সংগঠনের নেতা পাঠানো হয়েছে কেন্দ্র থেকে, ফলে নেতৃত্ব কাঠামোতে পাল্টা চাপান–উতোর চলছে। অনেকেরই কটাক্ষ “এতে রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সংগঠন অমিতাভ চক্রবর্তী কার্যত পদে বসে থাকবেন ক্ষমতাটা আর তাঁর হাতে নেই।” ভিতরে ভিতরে গেরুয়া শিবিরে ক্ষোভ থাকলেও নেতৃত্ব বলছে “নির্বাচনে জিততেই হবে, তাই কেন্দ্রের নির্দেশেই সংগঠনের চাকা ঘোরানো হচ্ছে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, পরিস্থিতি স্পষ্ট সিপিএম পুনরুজ্জীবনের লড়াইয়ে নামছে বিজেপি ক্ষমতার দৌড় বাড়াতে সর্বোচ্চ ঝাঁপাচ্ছে তৃণমূল পর্যবেক্ষণ করে পরিস্থিতি নিজের মতো ব্যবহার করবে বছরের শুরুতেই রাস্তায় রাস্তায় দুই বিরোধী দলের মুখোমুখি অবস্থান, আর সামনে ভোট তাই এই প্রচারযুদ্ধ যে শুধু জনসংযোগ নয়, বাংলার ভবিষ্যতের ক্ষমতার লড়াই তা বলাই বাহুল্য। এখন দেখার “মানুষের মন” কোন যাত্রার সঙ্গে হাঁটবে ‘বাংলা বাঁচাও’ নাকি ‘রথযাত্রা’ সেই সিদ্ধান্তই ইতিহাস লিখবে।
