কলকাতা: বাংলায় SIR আবহে পরিস্থিতি হয়ে উঠছে ক্রমশ উত্তপ্ত। রাজনীতিতে ফের বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন ভোটার তালিকা সংশোধনের দায়িত্ব প্রাপ্ত এক বুথ লেভেল অফিসার । ভোটার তালিকা শুদ্ধিকরণের প্রক্রিয়া চলাকালীনই তৃণমূল কংগ্রেসের এক নেতা বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও)-কে খোলাখুলি প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বজবজ বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সরিসা-পূর্ব (SIR) এলাকায়।
অভিযোগকারী বিএলও দীপক মাহাতো নিজেই এই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করেছেন। তাঁর দাবি, কেবলমাত্র একজন ‘নিখোঁজ’ ব্যক্তির নাম ভোটার তালিকায় রাখতে অস্বীকার করায় তৃণমূল নেতা জামিরুল ইসলাম মোল্লা তাঁকে ফোন করে হত্যা করার করার হুমকি দেন।দীপক মাহাতো জানিয়েছেন, গত কয়েকদিন ধরে সরিসা-পূর্ব এলাকায় ভোটার তালিকা থেকে ডুপ্লিকেট, ভুয়ো এবং মৃত ব্যক্তিদের নাম বাদ দেওয়ার কাজ চলছে।
এটা চিনের অংশ! অরুণাচলের তরুণীর পাসপোর্টে আপত্তি, সাংহাই-এ চরম হেনস্থা
এই প্রক্রিয়ায় তিনি দায়িত্বে রয়েছেন। কিন্তু একটি নির্দিষ্ট নাম নিয়ে তৃণমূলের স্থানীয় নেতা জামিরুল ইসলাম মোল্লা চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন। ওই ব্যক্তি বহু বছর ধরে এলাকায় নেই, এমনকি তাঁর কোনো অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। দীপকবাবু নিয়ম মেনে নামটি বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে জামিরুল ফোন করে প্রথমে অনুরোধ করেন, পরে হুমকির সুরে বলেন, “তুমি জানো না আমি কে! নাম না রাখলে তোমার আর তোমার পরিবারের খুব খারাপ হবে। পরিণতি ভুগতে হবে।”
এই ঘটনার পর থেকেই দীপক মাহাতো ও তাঁর পরিবার চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। তিনি স্থানীয় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন এবং নির্বাচন কমিশনের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদেরও বিষয়টি জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, “আমি শুধু আমার সরকারি দায়িত্ব পালন করছি। ভুয়ো ভোটার রেখে নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে কলুষিত করতে পারি না। কিন্তু এর বদলে প্রাণের ভয় দেখানো হচ্ছে।
এটা কোন গণতন্ত্র?”স্থানীয় সূত্রে খবর, সরিসা-পূর্ব এলাকায় গত কয়েক মাসে প্রায় সাড়ে ছয়শোর বেশি ডুপ্লিকেট ও সন্দেহজনক ভোটারের নাম বাদ পড়েছে। এর মধ্যে অনেকেরই বাড়ি এলাকায় নেই, কেউ বা বহু বছর ধরে নিখোঁজ।
অভিযোগ উঠছে, এই ভুয়ো ভোটারদের দিয়েই তৃণমূল কংগ্রেস পঞ্চায়েত থেকে লোকসভা সব নির্বাচনেই অন্যায় সুবিধা নিয়ে আসছে। এবার নির্বাচন কমিশনের বিশেষ ভোটার তালিকা শুদ্ধিকরণ অভিযানে তৃণমূলের ঘুম উড়ে গিয়েছে। তাই দলের স্থানীয় নেতারা নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করছেন, হুমকি দিচ্ছেন।
বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সরব হয়েছে। তারা বলেছে এই ধরণের ঘটনা অনভিপ্রেত। বিজেপি নেতৃত্বের প্রশ্ন সবসময় এই ধরণের গুন্ডাগিরিতে এই বিশেষ ধর্মের মানুষদের নামই কেন উঠে আসে। তার কারণ তৃণমূলের তোষণে থাকা মুসলিমরা ভয় পেয়েছে।
এবং তাদের মুখোশ খুলে গেছে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “মমতা ব্যানার্জি যতই গণতন্ত্রের কথা বলুন, তাঁর দলের গুন্ডারা এখন প্রকাশ্যেই সরকারি আধিকারিকদের হুমকি দিচ্ছে। এটা রীতিমতো গণতন্ত্রের গলা টিপে ধরার চেষ্টা।” সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমও এই ঘটনার নিন্দা করে বলেছেন, “ভোটার তালিকা শুদ্ধিকরণে বাধা দেওয়া মানে ভোট লুটের প্রস্তুতি। তৃণমূল এখন আতঙ্কে।”
