কলকাতা, ৮ ডিসেম্বর: বাংলা রাজনৈতিক মহলে নতুন করে তোলপাড় (Bankim Chandra’s great-grandson criticises)। স্বাধীনতা আন্দোলনের পথিকৃৎ, বন্দে মাতরম-এর স্রষ্টা বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রপৌত্র সজল চট্টোপাধ্যায়ের একটি মন্তব্য ঘিরে শুরু হয়েছে তীব্র রাজনৈতিক তরজা। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি তাঁর কৃতজ্ঞতা ও রাজ্যের বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
সম্প্রতি এক বক্তব্যে সজল চট্টোপাধ্যায় দাবি করেন, “বঙ্কিমচন্দ্র কে সম্মান দেওয়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার যে উদ্যোগ দেখিয়েছে, তা প্রশংসনীয়। কিন্তু রাজ্য সরকার তাঁর প্রতি যথেষ্ট গুরুত্ব দেখাচ্ছে না।” তাঁর মন্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই তা রাজনৈতিক মহলে ঝড় তোলে। তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে তাঁর এই অভিযোগ বিরোধীদের হাতে বাড়তি অস্ত্র জুগিয়েছে।
নিলামে এই তারকার জন্য টাকার ঝুলি খুলবে CSK vs KKR!
সজল চট্টোপাধ্যায় বলেন, বঙ্কিমচন্দ্রের কর্ম, সাহিত্য ও ঐতিহ্য নিয়ে যারা আজ রাজনৈতিক মঞ্চে উচ্চকিত, তারা বাস্তবে কতটা সম্মান দেখাচ্ছেন সে বিষয়ে প্রশ্ন তোলা প্রয়োজন। তাঁর কথায়, “বাংলার ঐতিহ্যকে রক্ষা করার দাবি যারা তুলে, বাস্তবে তারা অনেক সময়ই সেই ঐতিহ্যকেই অবহেলা করে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সজলের এই মন্তব্য এমন এক সময়ে সামনে এল যখন বাংলা রাজনৈতিক পরিসরে “বাংলার অপমান” বনাম “বাংলার গৌরব” এই শব্দবন্ধকে কেন্দ্র করে পালটা অভিযোগ চলছেই। ফলে তাঁর বক্তব্য রাজ্যের দুই প্রধান দলের মধ্যে সংঘর্ষকে আরও উসকে দিয়েছে। বিরোধী শিবির দাবি করছে, সজলের মন্তব্য আবারও প্রমাণ করে বাঙালির প্রকৃত আইকনদের যথাযথ সম্মান দিতে ব্যর্থ হচ্ছে রাজ্য সরকার। তাঁদের মতে, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ইতিহাসে যেভাবে বঙ্কিমচন্দ্রের নাম অমর, সেই তুলনায় সরকারি উদ্যোগ অনেকটাই অপর্যাপ্ত।
এই অভিযোগকে সামনে রেখে বিরোধীরা আরও প্রশ্ন তুলেছে যে, রাজ্যের সরকারি অনুষ্ঠান, পাঠ্যপুস্তক বা সাংস্কৃতিক উদ্যোগে বঙ্কিমচন্দ্রের ও অন্যান্য স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্থান নিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রসূত সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে কিনা।
অন্যদিকে, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, সজল চট্টোপাধ্যায়ের এই মন্তব্যের পেছনে ব্যক্তিগত অনুভূতি যেমন আছে, তেমনই বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশের প্রভাবও অস্বীকার করা যায় না। বঙ্কিমচন্দ্রের মতো এক ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের পরিবারের সদস্য হিসেবে তাঁর বক্তব্য নিঃসন্দেহে গুরুত্ব বহন করে, তবে তা রাজনৈতিক শোরগোলের মধ্য থেকে আলাদা করে বিশ্লেষণ করা জরুরি।
তৃণমূল কংগ্রেস এখনও পর্যন্ত সজলের মন্তব্যের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না দিলেও দলের একাংশের নেতারা অনানুষ্ঠানিকভাবে বলছেন, “এই ধরনের মন্তব্য রাজনৈতিকভাবে পরিচালিত।” তাঁদের বক্তব্য, রাজ্য সরকার বহুবার বঙ্কিমচন্দ্রের জন্মজয়ন্তী ও সংশ্লিষ্ট স্মারক প্রকল্পে উদ্যোগ নিয়েছে। তাই ‘অবহেলার’ অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত বলে তাদের দাবি।
যাই হোক, সজলের মন্তব্য যে বাংলা রাজনীতিতে বড় চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে, তা বলাই বাহুল্য। বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস এবং আইকনদের প্রতি সম্মান সব মিলিয়ে বিষয়টি অত্যন্ত সংবেদনশীল। তাই এই বিতর্ক কতদূর এগোয়, তা এখন পর্যবেক্ষণের বিষয়। বাংলার রাজনীতিতে ‘উত্তরাধিকার’, ‘ঐতিহ্য’ ও ‘অপমান’-এর তর্ক যে আরও ঘনীভূত হলো সজল চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্যে, তা নিয়ে সংশয় নেই কোনো পক্ষেই।

