কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলে আটক থাকা বাংলাদেশি হিন্দু শরণার্থীদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি তুলল বিজেপি। বিজেপির অভিযোগ, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নোটিফিকেশন থাকা সত্ত্বেও রাজ্য সরকার তা মানছে না, এবং ধর্মীয় কারণে নিপীড়িত হিন্দু শরণার্থীদের বেআইনি ভাবে আটক রাখা হচ্ছে।
বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের দাবি, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছে যে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে ভারতে আশ্রয় নেওয়া হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি ও খ্রিস্টান শরণার্থীদের বিরুদ্ধে Foreigners Act অনুযায়ী মামলা বা আটক করা যাবে না।
১৯৮৩ স্মৃতি উসকে ঘরের মাঠে বিশ্বজয়ের স্বপ্নে হরমনপ্রীত-মান্ধানারা!
বিজেপি নেতারা অভিযোগ করেছেন, কেন্দ্রের এই আইন ও নোটিফিকেশন কার্যকর থাকলেও, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলে এখনও বহু বাংলাদেশি হিন্দু নাগরিক বন্দি অবস্থায় রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকে বছরের পর বছর ধরে কোনও বিচার ছাড়াই আটক।
দলের এক মুখপাত্র জানান, “এটা শুধু আইন অমান্য নয়, এটা মানবিকতার পরিপন্থীও। Foreigners Act কেন্দ্রীয় আইন, এবং কেন্দ্রীয় নোটিফিকেশন অনুযায়ী রাজ্যের প্রশাসন বাধ্য যে এই শরণার্থীদের মুক্তি দেবে। কিন্তু রাজ্য সরকার তাদের ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে চিহ্নিত করে জেলে পাঠাচ্ছে। এটা অন্যায়।” সূত্রের খবর, বিজেপির মানবাধিকার সেল ও আইনজীবী শাখা ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন, রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর, এমনকি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকেও লিখিতভাবে জানিয়েছে এই “বেআইনি আটক”-এর বিরুদ্ধে আপত্তি।
বিজেপির দাবি, যদি রাজ্য সরকার দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে তারা জনস্বার্থ মামলা (PIL) করবে কলকাতা হাইকোর্টে। দলীয় নেতাদের ভাষায়, “যদি প্রয়োজন হয়, রাজ্যজুড়ে আন্দোলন শুরু হবে। কোনও ধর্মীয় কারণে নির্যাতিত হিন্দুকে ভারতীয় মাটিতে বন্দি রাখা আমাদের নৈতিকতাবিরোধী।” বিজেপি নেতারা মানবিক দিকটিও তুলে ধরেছেন।
বিজেপির এক শীর্ষ নেতা বলেন, “বাংলাদেশে যারা ধর্মীয় কারণে অত্যাচারের শিকার হয়ে ভারতে এসেছেন, তারা আশ্রয়ের জন্য এসেছে, অপরাধী নয়। আমাদের ধর্ম, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তাদের আপনজন হিসেবে গ্রহণ করে। প্রতিটি হিন্দুই আমাদের ভাই। তাদের ওপর নতুন করে প্রশাসনিক অত্যাচার মেনে নেওয়া যাবে না।”
এই ইস্যু কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে নতুন করে সংঘাতের জন্ম দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA) ও Foreigners Act দুটোই কেন্দ্রীয় আইনের আওতায়। ফলে রাজ্য সরকার আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ না করলে, প্রশাসনিক জটিলতা তৈরি হতে পারে।
রাজ্যের তরফে যদিও এখনও পর্যন্ত কোনও সরকারি প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “যদি কেউ সত্যিই বৈধ নোটিফিকেশনের আওতায় পড়ে, তাহলে মুক্তির বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। তবে প্রতিটি কেস আলাদা, তাই যাচাই না করে বলা যাবে না।”
বিজেপির এই অভিযোগ নতুন করে রাজ্য রাজনীতিতে বাড়িয়েছে উত্তাপ । মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, “যদি মানুষ ধর্মীয় কারণে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়, তাকে বন্দি রাখা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নীতিরও পরিপন্থী।” অন্যদিকে, তৃণমূল নেতাদের একাংশের দাবি, বিজেপি এই ইস্যুকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে। কিন্তু বিজেপি বলছে, “এটা মানবিকতার প্রশ্ন, রাজনীতির নয়।” রাজ্য ও কেন্দ্রের এই টানাপোড়েনের মধ্যে মূল প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে বাংলাদেশি হিন্দু শরণার্থীদের ভবিষ্যৎ কী?


