কলকাতা: “বিহারে বিজেপিকে জেতাল যারা, ভোট দিয়ে বাংলায় ফিরেছে তারা। স্বাগত জানাতে হাতে নিয়ে ফুল, রেডি আছে তৃণমূল।দুই রাজ্যে ভোট যাদের, বাংলা থেকে তাড়াও তাদের।” এমনটাই মন্তব্য করেছেন বাংলাপক্ষ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা গর্গ চট্টোপাধ্যায়। তিনি স্পষ্ট বলতে চেয়েছেন এই বিহারীরাই ভোট দিয়ে ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলকে জেতাবে। তাই এদের রাজ্যে স্থান হবে না। এদের তাড়াতে হবে।
বিহারের ভোট গণনায় এনডিএ-র প্রচণ্ড অগ্রগতির মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে নতুন ঝড় উঠেছে। বাঙালি জাতীয়তাবাদী সংগঠন ‘বাংলাপক্ষ’-এর প্রতিষ্ঠাতা তথা মুখপাত্র গর্গ চট্টোপাধ্যায় বিস্ফোরক মন্তব্য করে বলেছেন, “যে বিহারিরা বিহারে গিয়ে বিজেপিকে জিতিয়েছে, তারাই ভোট দিয়ে এখন বাংলায় ফিরছে। তৃণমূল কংগ্রেস হাতে ফুল নিয়ে তাদের স্বাগত জানাতে তৈরি। কিন্তু ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনে এরাই তৃণমূলকে জিতিয়ে দেবে। তাই বাংলা থেকে এদের তাড়াতে হবে!”
বিহারে বড় জয়ের পথে NDA, নীতিশ কুমারের প্রভাব দৃঢ়
এই মন্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গিয়েছে এবং রাজ্য রাজনীতিতে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।বিহারে এনডিএ-র জয় প্রায় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পরপরই গর্গ চট্টোপাধ্যায়ের এই পোস্ট সামনে এসেছে। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন যে, পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী লক্ষ লক্ষ বিহারি মূলক শ্রমিক ও বাসিন্দারা ছটপুজোর ছুটিতে বিহারে গিয়ে ভোট দিয়ে ফিরেছেন। তাদের অধিকাংশই বিহারে বিজেপি-নেতৃত্বাধীন এনডিএ-কে সমর্থন করেছেন।
কিন্তু বাংলায় ফিরে এসে তারা ভোট দেবেন তৃণমূল কংগ্রেসকে—কারণ তৃণমূল সরকার তাদের রুজি-রোজগার, বাসস্থান এবং নিরাপত্তা দিয়েছে। গর্গের কথায়, “দুই রাজ্যে ভোটাধিকার যাদের, তারা বিহারে বিজেপিকে জিতিয়ে বাংলায় তৃণমূলকে জিতিয়ে দেবে। এটা বাঙালির স্বার্থের বিরুদ্ধে। বাংলায় বাইরের লোকের ভোটে সরকার গড়া চলবে না।”বাংলাপক্ষ দীর্ঘদিন ধরে ‘বাংলা বাঙালির’ স্লোগান তুলে অ-বাঙালি, বিশেষ করে হিন্দিভাষী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে সরব।
গর্গ চট্টোপাধ্যায়ের এই মন্তব্যকে অনেকে ‘জাতীয়তাবাদী আহ্বান’ বলে সমর্থন করছেন, আবার অনেকে একে ‘বিভাজনকারী এবং অসাংবিধানিক’ বলে নিন্দা করছেন। বাংলাপক্ষের সমর্থকরা বলছেন, “বিহারে গিয়ে বিজেপিকে জিতিয়ে বাংলায় এসে তৃণমূলকে জেতানো মানে বাঙালির সঙ্গে প্রতারণা। এদের ভোটার লিস্ট থেকে বাদ দিতে হবে।”অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা এই মন্তব্যকে ‘ফ্যাসিবাদী’ আখ্যা দিয়েছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ৮০-৯০ লক্ষ হিন্দিভাষী (বিহারি, উত্তরপ্রদেশি, ঝাড়খণ্ডি) শ্রমিক বাস করেন। তাদের অনেকেরই দুই রাজ্যে ভোটার কার্ড আছে। ছটপুজোর সময় লক্ষ লক্ষ মানুষ বিহারে গিয়ে ভোট দিয়ে ফিরেছেন—এটা সরকারি হিসেবেও স্বীকৃত। বিহারের ভোটার টার্নআউট রেকর্ড ছোঁয়ায় এই ‘মাইগ্রেন্ট ভোটার’দের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।
গর্গের দাবি, এরাই ২০২৬-এ বাংলায় তৃণমূলের ‘সিক্রেট ওয়েপন’। কিন্তু এই মন্তব্যের ফলে অ-বাঙালি শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। কলকাতা, হাওড়া, শিলিগুড়ির শ্রমিক কলোনিগুলোতে উত্তেজনা। অনেকে বলছেন, “আমরা এখানে রুজি করি, ট্যাক্স দিই। তাড়ালে কোথায় যাব?”


