RSS নিষিদ্ধকরণ নিয়ে বিতর্কিত বিবৃতি যোগ গুরুর

baba-ramdev-rss-ban-controversy

নয়াদিল্লি: দেশজুড়ে যখন কংগ্রেস ও রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)-এর মধ্যে চলছে প্রবল বাকযুদ্ধ, সেই সময় সরব হলেন যোগগুরু বাবা রামদেব। রবিবার তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “যারা আরএসএস নিষিদ্ধ করার দাবি তুলছে, তারা আসলে দেশবিরোধী ও বিরোধী-সনাতন শক্তি। তাদের গোপন উদ্দেশ্য, নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করা।”

Advertisements

একটি সাক্ষাৎকারে বাবা রামদেব আরএসএস-এর ঐতিহাসিক ভূমিকা ও ত্যাগের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “আরএসএস আর আর্য সমাজ, দুটোই জাতীয়তাবাদী সংগঠন। ড. হেডগেওয়ার থেকে শুরু করে সদাশিবরাও গোলওয়ালকর পর্যন্ত বহু মহান ব্যক্তিত্ব তাঁদের জীবন উৎসর্গ করেছেন দেশের জন্য। আজও লক্ষ লক্ষ সংঘকর্মী নিঃস্বার্থভাবে জাতির সেবায় নিয়োজিত।”

   

কামব্যাকের লড়াইয়ে ভারতীয় দলে সুযোগ এই তারকার! ছিটকে গেলেন অজি পেসার

সম্প্রতি কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে এক ভাষণে স্বাধীন ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের ১৯৪৮ সালের সিদ্ধান্তের উল্লেখ করে বলেন, “আরএসএস তখনও নিষিদ্ধ হয়েছিল কারণ তারা আইন-শৃঙ্খলা সমস্যা সৃষ্টি করেছিল।”

তাঁর মন্তব্যের পর থেকেই নতুন করে তীব্র বিতর্কের সূচনা হয়। খড়গের পুত্র ও কর্ণাটকের মন্ত্রী প্রিয়াঙ্ক খড়গে রাজ্যের সরকারি স্কুল, কলেজ এবং মন্দির প্রাঙ্গণে আরএসএস কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করার দাবি জানান। তাঁর এই মন্তব্য ঘিরে কর্ণাটক রাজনীতিতে তৈরি হয় উত্তেজনা।

এই প্রেক্ষিতে, গত ২৮ অক্টোবর কর্ণাটক হাইকোর্টের ধারওয়াড় বেঞ্চ রাজ্য সরকারের সেই নির্দেশিকায় অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করে। আদালত জানায়, সরকারি জায়গায় ১০ জনের বেশি সংঘকর্মীর জমায়েত নিষিদ্ধ করার নির্দেশ সংবিধানসিদ্ধ অধিকারের পরিপন্থী। জবলপুরে সংগঠনের সর্বভারতীয় কার্যকারিণী বৈঠকের দ্বিতীয় দিনে আরএসএস-এর সাধারণ সম্পাদক দত্তাত্রেয় হোসাবলে বলেন, “যারা নিষিদ্ধ করার দাবি তুলছে, তারা ইতিহাস থেকে কিছুই শেখেনি।

Advertisements

কোনও সংগঠনকে নিষিদ্ধ করতে গেলে যুক্তি ও কারণ থাকতে হয়। আরএসএস তো জাতি গঠনের কাজ করছে, তাকে নিষিদ্ধ করে কী লাভ?” তিনি আরও বলেন, “জনগণ ইতিমধ্যেই আরএসএস-কে গ্রহণ করেছে। আরএসএস দেশের একশো বছর ধরে সমাজসেবামূলক কাজ করছে।”

বাবা রামদেবের মন্তব্যে যে রাজনৈতিক তাৎপর্য আছে, তা কেউ অস্বীকার করছেন না। তিনি আরএসএস-এর পক্ষে দাঁড়িয়ে বলেন, “যারা হিন্দুত্ব বা সনাতন ধর্মকে আক্রমণ করে, তারা আসলে ভারতের ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক মূলে আঘাত করছে।

আরএসএস বা আর্য সমাজের মতো সংগঠনগুলো জাতির মেরুদণ্ড।” প্রথমবার ১৯৪৮ সালে, মহাত্মা গান্ধীর হত্যাকাণ্ডের পর। যদিও তদন্তে সংগঠনের কোনও প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি, এক বছর পর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়।

দ্বিতীয়বার ১৯৭৫ সালে, জরুরি অবস্থার সময় ইন্দিরা গান্ধীর সরকার আরএসএস-কে নিষিদ্ধ করে। তৃতীয়বার ১৯৯২ সালে, বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর পুনরায় নিষিদ্ধ করা হয়। তিনবারই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হয়, এবং প্রতিবার সংগঠন আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসে।

কংগ্রেস ও আরএসএস-এর এই বাকযুদ্ধের মাঝখানে বাবা রামদেবের বক্তব্য আসলে এক নতুন রাজনৈতিক বার্তা। একদিকে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক বাড়ছে, অন্যদিকে রাজনৈতিক দলগুলো তার মধ্যে নিজেদের অবস্থান আরও সুস্পষ্ট করছে। দেশের মাটিতে ‘সনাতন বনাম সেক্যুলার’ তর্ক যত গভীর হচ্ছে, এই বিতর্কও ততই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে।