লখনউ: উত্তরপ্রদেশে ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ বিতর্ক ঘিরে উত্তপ্ত পরিস্থিতির মাঝে মুখ খুললেন সমাজবাদী পার্টির বর্ষীয়ান নেতা আজম খান। মঙ্গলবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, “এই সামান্য বিষয়কে যোগীর প্রশাসনই অগ্নিস্ফুলিঙ্গে পরিণত করেছে। তিনি আরও বলেছেন যে যোগী পুলিশ যদি চাইত, কথাবার্তার মাধ্যমেই সমাধান সম্ভব ছিল। কিন্তু তা না করে পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে গিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ভাঙা হয়েছে।
আজম খানের বক্তব্যে স্পষ্ট, তিনি প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে গভীর অসন্তুষ্ট। তাঁর দাবি, আই লাভ মুহাম্মদের ঘটনা একটি ছোট ঘটনা। তিনি প্রশ্ন করেছেন এই ছোট্ট স্ফুলিঙ্গ থেকে এমন অগ্নিকাণ্ড ঘটল কীভাবে? প্রশাসন চাইলে কথাবার্তার মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যেত।”
বিহারের ১১ আসনে মহাজোট বনাম মহাজোট, চরম কটাক্ষ চিরাগের
এই মন্তব্যের মাধ্যমে আজম খান ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, বিষয়টি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, “যতই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হোক না কেন, সমাধান সবসময় টেবিলে বসেই হয়। যুদ্ধের ফলাফল দেখুন, শেষ পর্যন্ত সবাইকে আলোচনার টেবিলেই ফিরতে হয়। এই ঘটনার পেছনে একটা বড় চক্রান্ত কাজ করছে সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্য।”
‘আই লাভ মুহাম্মদ’ বিতর্কটি শুরু হয় একদল যুবকের সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট ঘিরে, যেখানে ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত লেগেছে বলে অভিযোগ ওঠে। কিছু জায়গায় প্রতিবাদ, মিছিল ও ধর্না কর্মসূচি হয়। এরপরই পুলিশ ও প্রশাসন পরিস্থিতি সামাল দিতে নামে।
কিন্তু আজম খানের বক্তব্যে, “প্রশাসনের পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকা” নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। তিনি আরও বলেন, “যদি কেউ কাউকে ভালোবাসে, সেটা তার জন্মগত অধিকার। এটা নিয়ে বিতর্ক তোলা, উত্তেজনা ছড়ানো সবই পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র।”
এই বক্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই রাজনৈতিক মহলে নতুন চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বিজেপি নেতারা আজম খানের মন্তব্যকে ‘উসকানিমূলক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, “আজম খান ধর্মের নামে আগুন জ্বালাতে চাইছেন।” অন্যদিকে সমাজবাদী পার্টির একাধিক নেতা বলেছেন, “আজম সাহেব সম্প্রীতির পক্ষে কথা বলেছেন, প্রশাসনের ব্যর্থতাই এই সংঘাতের মূল।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আজম খানের এই মন্তব্য একদিকে সংখ্যালঘু ভোটব্যাংকের মনোভাবকে প্রশমিত করার চেষ্টা, অন্যদিকে সমাজে নিজের হারানো প্রভাব পুনরুদ্ধারের কৌশলও হতে পারে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকলেও, তিনি এখনও উত্তরপ্রদেশ রাজনীতির অন্যতম প্রভাবশালী মুখ।
ঘটনার রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ছাড়াও, সামাজিক মাধ্যমে এই মন্তব্য নিয়ে প্রবল আলোচনা চলছে। কেউ বলছেন, “আজম খানের বক্তব্য সংবেদনশীল ও যুক্তিসঙ্গত”, আবার কেউ মনে করছেন, “এটি পুরনো সাম্প্রদায়িক বিভাজনকে নতুনভাবে উসকে দেওয়ার প্রচেষ্টা।”