গোপালগঞ্জ: বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আবহাওয়ায় রাজনৈতিক মহলে যেন একটা নতুন ঝড় উঠেছে। অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তিহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম)-এর প্রেসিডেন্ট আসাদুদ্দিন ওয়াইসী মঙ্গলবার গোপালগঞ্জের এক গ্রামে জনসভায় দাঁড়িয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, “বিহারের ১৭% জনসংখ্যা যারা মুসলিমরা তারা কেন মুখ্যমন্ত্রী হতে পারে না?
কিন্তু ৩% জনসংখ্যার প্রতিনিধিকে ডেপুটি সিএম-এর প্রতিশ্রুতি দিতে কোনো সমস্যা হয় না!” এই বক্তব্যে ওয়াইসী শুধু এনডিএ সরকারকেই নয়, বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের কংগ্রেস ও আরজেডি-কেও তুলোধুনো করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, “কংগ্রেস, আরজেডি এবং সামাজওয়াদী পার্টি মুসলিম ভোট চায়, বিজেপির ভয় দেখিয়ে ভোট কিনে নেয়, কিন্তু কখনও মুসলিম নেতৃত্বকে সমর্থন করে না।”
মেট্রো যাত্রীদের জন্য সুখবর! বদলে যাচ্ছে ব্লু লাইনের পুরনো স্বয়ংক্রিয় গেট
এই কথায় বিহারের রাজনীতিতে মুসলিম প্রতিনিধিত্বের প্রশ্ন নতুন করে জোরালো হয়ে উঠেছে।ওয়াইসীর এই সভা ছিল তার দলের বিহার নির্বাচনী প্রচারের সূচনা। এআইএমআইএম ৩২টি আসন থেকে লড়ছে, এবং গোপালগঞ্জ থেকে শুরু হয়েছে এই যাত্রা। তিনি বলেন, “বিহারে ইয়াদবের নেতা আছে, পাসওয়ানের নেতা আছে, ঠাকুরের নেতা আছে কিন্তু ১৭% মুসলিমের কোনো নেতা নেই।
২০২২-এর জাতি গণনায় দেখা গেছে, বিহারের মোট জনসংখ্যার ১৭.৭% মুসলিম, যা প্রায় ২ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ। এত বড় সম্প্রদায়কে রাজনীতি থেকে দূরে রাখা কেন? মহাগঠবন্ধন যদি ১৩% ইয়াদব সম্প্রদায়ের তেজস্বী যাদবকে সিএম প্রার্থী করতে পারে, আর ৩% নির্দল (মুকেশ সাহনির নির্দল সম্প্রদায়) কে ডেপুটি সিএম-এর প্রতিশ্রুতি দিতে পারে, তাহলে মুসলিমকে কেন উপেক্ষা?”
ওয়াইসীর এই প্রশ্ন শুধু সংখ্যার খেলা নয়, বরং দীর্ঘদিনের বঞ্চনার প্রতিফলন। তিনি আরও বলেন, “আমিত শাহ এই প্রশ্নের উত্তর দেবেন না, কিন্তু বিহারের মুসলিমরা যদি তাদের ইস্যু মানুষের সামনে তুলতে চায়, তাহলে এআইএমআইএমের পতঙ্গ চিহ্নে ভোট দিন।”
এই বক্তব্যের পটভূমি বিহারের জটিল জাতিগত সমীকরণ। ২০২৫-এর বিধানসভা নির্বাচনে এনডিএ-র নেতৃত্বে নিতীশ কুমারের জেডিইউ এবং বিজেপি, অন্যদিকে ইন্ডিয়া জোটের আরজেডি-কংগ্রেস জোট।
মহাগঠবন্ধন তেজস্বী যাদবকে সিএম প্রার্থী ঘোষণা করেছে, এবং মুকেশ সাহনির ভিআইপি পার্টিকে ডেপুটি সিএম-এর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। নির্দল সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা মাত্র ৩% হলেও, তাদের ভোটের প্রভাব সীমান্তবর্তী এলাকায় বড়। কিন্তু মুসলিমরা, যারা সিভেট (আরব-মুসলিম) এবং অন্যান্য উপজাতির সাথে মিলে ১৭% তাদের প্রতিনিধিত্ব নগণ্য।
ঐতিহাসিকভাবে, বিহারে মুসলিম নেতারা আছেন, যেমন মহাবোধি লাবু সাঈদ বা আলতাফ হোসেন, কিন্তু কোনো বড় দল তাদের সিএম বা ডেপুটি সিএম-এর পদে এগিয়ে আনেনি। ওয়াইসী বলেন, “মোদীর হৃদয় আহমেদাবাদে, নিতীশের রাজগীরে, লালুর ছেলের দিকে কারো হৃদয় সাধারণ মানুষের জন্য নেই।”
বিজেপি-জেডিইউ জোট থেকে পাল্টা এসেছে। বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী বিজয় কুমার সিনহা বলেছেন, “ওয়াইসী রাজনীতির বাজারে বিষাক্ততা ছড়ান। বিহারে সবাইকে সমান সুযোগ, ধর্মের ভিত্তিতে পদ বিতরণ হয় না।” অন্যদিকে, আরজেডি নেতা মনোজ ভারতী বলেছেন, “আমরা সব সম্প্রদায়ের জন্য কাজ করি, কোনো বিচার নয়।”
কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওয়াইসীর প্রশ্নে সত্যতা আছে। বিহার কাস্ট সার্ভে অনুসারে, ওবিসি-ই ইয়াদব ১৪.২৬%, এসিসি ২৭.১৩%, এসসিসি ১৯.৬৫%, এসটি ১.৬৮% কিন্তু মুসলিমরা এই সমীকরণে প্রায়শই উপেক্ষিত। এআইএমআইএমের মতো দল এই ফাঁককে কাজে লাগিয়ে মুসলিম ভোট ভাগ করতে চায়, যা ইন্ডিয়া জোটের জন্য চ্যালেঞ্জ।


