উত্তর-পূর্বের গেরুয়া রাজ্যে ছড়াচ্ছে জনজাতি বিদ্রোহের আগুন

arunachal-pradesh-tribal-protest-freedom-of-religion-act-1978

ইটানগর: অরুণাচল প্রদেশের জনজাতি সম্প্রদায়ের হাজার হাজার লোক সরকারকে একটি কঠোর সতর্কবার্তা দিয়েছে। তারা বলেছে ১৯৭৮ সালের অরুণাচল প্রদেশ ফ্রিডম অফ রিলিজিয়ন অ্যাক্ট (এপিএফআরএ) কার্যকর করুন, না হলে আমরা রাস্তায় নামব। এই আইনটি, যা ৪৬ বছর ধরে কাগজের উপর শুধু থেকে গেছে, জনজাতিদের সংস্কৃতি এবং পরিচয় রক্ষার জন্য তাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Advertisements

গতকাল ইটানগরের রাস্তায় হাজার হাজার জনজাতি ঐতিহ্যবাহী পোশাকে মিছিল করে বেরিয়ে এসেছেন, যাতে ২৭টি জেলা, ২৬টি প্রধান উপজাতি এবং ১০০টিরও বেশি উপজাতির প্রতিনিধিত্ব ছিল। ইন্ডিজেনাস ফেইথ অ্যান্ড কালচারাল সোসাইটি অফ অরুণাচল প্রদেশ (আইএফসি এসএপি)-এর নেতৃত্বে এই মিছিলটি সরকারের দরজায় পৌঁছে দাবি তুলে ধরেছে যে, এই আইন না কার্যকর করলে জনজাতিদের ঐতিহ্যবাহী ধর্ম ও সংস্কৃতি ধ্বংসের মুখে পড়বে।

সিরিজ বাঁচাতে মরিয়া ভারত, অনুশীলনে হাজির বিশেষ অতিথি!

এই আন্দোলন অরুণাচলের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে, যেখানে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বিরোধিতা এবং জনজাতিদের দাবি পরস্পরের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে।এই মিছিলের মূলে রয়েছে অরুণাচলের জনজাতিদের গভীর উদ্বেগ। রাজ্যের বেশিরভাগ জনগণ জনজাতি উপজাতি, যারা ডোনিয়ি-পোলো (সূর্য-চন্দ্র উপাসনা), বৌদ্ধধর্ম, বৈষ্ণবধর্ম এবং প্রকৃতি পূজার মতো ঐতিহ্যবাহী ধর্ম অনুসরণ করে।

কিন্তু গত কয়েক দশকে খ্রিস্টধর্মের প্রসারে অনেক জনজাতি এই ধর্মে যোগ দিয়েছে, যা তারা বলছেন জোরজবরদস্তি, প্রলোভন বা প্রতারণার মাধ্যমে ঘটছে। আইএফসি এসএপি-এর সভাপতি এমআই রুমি মিডিয়াকে বলেছেন, “১৯৭৮ সালে রাজ্যের প্রথম আইনসভায় এই আইনটি পাস হয়েছে, যাতে জনজাতি সমাজের কল্যাণ ঘটে। কিন্তু ৪৬ বছর ধরে এটি কার্যকর হয়নি, ফলে আমাদের সংস্কৃতি হুমকির মুখে।

Advertisements

এই আইন কার্যকর করলে আমরা আমাদের পরিচয় রক্ষা করতে পারব।” মিছিলকারীরা স্লোগান দিয়েছেন ‘এপিএফআরএ কার্যকর করুন, জনজাতি সংস্কৃতি বাঁচান’। এই দাবি গৌহাটি হাইকোর্টের সাম্প্রতিক নির্দেশনার সঙ্গে যুক্ত, যেখানে সেপ্টেম্বর ২০২৪-এ একটি পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশনের পর কোর্ট সরকারকে ছয় মাসের মধ্যে আইনের নিয়মাবলী চূড়ান্ত করার সতর্কবার্তা দিয়েছে।

এপিএফআরএ আইনটি ধর্মান্তরণকে ‘জোর, প্রলোভন বা প্রতারণার মাধ্যমে’ নিষিদ্ধ করে এবং এর জন্য সর্বোচ্চ ১০,০০০ টাকা জরিমানা বা দুই বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখে। ১৯৭৮ সালে রাজ্যের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী পি কে থুঙ্গনের আমলে এটি পাস হয়, যখন অরুণাচলের জনজাতি সমাজ বাইরের প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এমন আইনের প্রয়োজন অনুভব করেছিল।

কিন্তু পরবর্তী সরকারগুলো নিয়মাবলী তৈরি না করে এটিকে স্থগিত রেখেছে। আইএফসি এসএপি-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট পাই ডাওয়ে বলেছেন, “এই আইনটি আমাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষার জন্য, না যে অন্যের ধর্মের বিরুদ্ধে।

কিন্তু বাইরের মিশনারিরা আমাদের যুবকদের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্মান্তরিত করছে, যা আমাদের সমাজকে বিভক্ত করছে।” জনজাতিরা বলছেন, খ্রিস্টধর্মের প্রসারে তারা সংখ্যালঘু হয়ে পড়ছে, এবং এই আইন কার্যকর না হলে তাদের ঐতিহ্যবাহী উৎসব, নৃত্য এবং বিশ্বাস সব হারিয়ে যাবে।