বিধানসভার আগেই পটনায় শুরু অমিত বনাম লালু তরজা

amit-shah-vs-lalu-yadav-bihar-jungle-raj-controversy

পটনা: আসন্ন বিহার বিধানসভা নির্বাচন ঘিরে ফের তপ্ত রাজ্য রাজনীতি। রাজধানী পটনায় বিজেপির জনসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তীব্র আক্রমণ শানালেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং আরজেডি প্রধান লালু প্রসাদ যাদবের বিরুদ্ধে। অমিত শাহের বক্তব্যে একপ্রকার ফের শুরু হয়ে গেল অমিত বনাম লালু তরজা।

Advertisements

অমিত শাহ বলেন, “যে সময় বিহারের সম্মান নষ্ট হয়েছিল, সেই সময়টাকেই মানুষ ‘জঙ্গলরাজ’ নামে চেনে। মাত্র ১৫ বছরের শাসনে বিহার হারিয়েছে তার গৌরব, সম্পদ এবং শিক্ষার মান। স্বাধীনতার পর যে সব শিল্প প্রতিষ্ঠান এখানে গড়ে উঠেছিল, লালুর শাসনকালে একে একে সব বিহার ছেড়ে চলে যায়।”

তিনি আরও বলেন, “যখন লালু যাদব দুর্নীতির মামলায় জেলে গিয়েছিলেন এবং পরে জামিনে বেরোলেন, তখন তাঁর জন্য রাজপথে হাতি নিয়ে শোভাযাত্রা করা হয়। এমন নির্লজ্জতা ভারতের রাজনীতিতে খুব কমই দেখা গেছে।”

অমিত শাহের দাবি, “লালু যাদবের আমলে দুর্নীতি, অপরাধ এবং পারিবারিক শাসন বিহারকে পিছিয়ে দিয়েছিল প্রায় অর্ধ শতাব্দী। আজও সেই একই ‘জঙ্গলরাজ’ নতুন মুখের মাধ্যমে ফিরে এসেছে। জনগণ সব বুঝে গেছে, শুধু নাম পাল্টালে নীতি পাল্টায় না।”

অমিত শাহের এই বক্তব্যকে ঘিরে বিহারের রাজনীতি তোলপাড়। বিজেপি শিবিরের দাবি, অমিত শাহ জনগণকে সেই সময়ের বাস্তবতা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, যাতে মানুষ ভুলে না যায় কীভাবে বিহার একসময় অপরাধ ও দারিদ্র্যের প্রতীকে পরিণত হয়েছিল।

Advertisements

অন্যদিকে, আরজেডি শিবিরের তোপ, “অমিত শাহ ইতিহাস বিকৃতি করছেন। লালু যাদবের সময়েই বিহারে সামাজিক ন্যায়, সংরক্ষণ এবং নিম্নবর্গের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ঘটেছিল। বিজেপি কেবল ভয়ের রাজনীতি করে ভোট পেতে চায়।” রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বক্তব্য শুধু নির্বাচন প্রচারের অংশ নয়, এটি এক গভীর মনস্তাত্ত্বিক কৌশল। বিজেপি চায় জনগণের মধ্যে লালুর শাসনকাল নিয়ে পুরনো আশঙ্কা পুনরুজ্জীবিত করতে, যাতে নতুন প্রজন্মের ভোটাররাও ‘জঙ্গলরাজ’-এর ধারণাকে ভয় পায়।

অমিত শাহ বলেন, “যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশের উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছেন, তখন বিহারে আবার সেই পুরনো পারিবারিক শাসন ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। কিন্তু এবার বিহারের জনগণ সেই ভুল করবে না।” তিনি দাবি করেন, “বিজেপি বিহারকে ‘ভয় এবং ভোটব্যাংক’-এর রাজনীতি থেকে মুক্ত করেছে। আমরা উন্নয়ন, অবকাঠামো এবং শিক্ষায় বিনিয়োগে জোর দিয়েছি।”

বিহার রাজনীতিতে এই মন্তব্যের তাৎপর্য অনেক। কারণ, ২০২5 সালের বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিজেপি ও আরজেডি এখন কার্যত মুখোমুখি সংঘর্ষে। মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের জেডিইউ এখন কোন দিকে যাবে তা নিয়েও জল্পনা তুঙ্গে। অন্যদিকে, লালু যাদবের ছেলে তেজস্বী যাদবও পাল্টা বলেছেন, “বিহারে আজও বেকারত্ব, দারিদ্র্য ও কৃষক সমস্যা বাড়ছে। বিজেপি উন্নয়নের কথা বলে শুধু মঞ্চে বক্তৃতা দেয়, বাস্তবে কিছুই করে না।”

রাজনৈতিক মহল মনে করছে, অমিত বনাম লালু তরজা শুধু ব্যক্তিগত আক্রমণ নয়, এটি দুই ভিন্ন রাজনৈতিক দর্শনের সংঘর্ষ—একদিকে বিজেপির উন্নয়নমুখী জাতীয়তাবাদ, অন্যদিকে আরজেডির সামাজিক ন্যায়ের রাজনীতি। বিহারের মানুষ এখন অপেক্ষায়—কোন দিকের ভাবনা তাদের ভবিষ্যৎ বদলাবে? অমিত শাহের ‘নতুন বিহার’-এর প্রতিশ্রুতি, না লালু-তেজস্বীর ‘সামাজিক ন্যায়’-এর উত্তরাধিকার?