পটনা: বিহার বিধানসভা নির্বাচনের ময়দানে এনডিএ-র প্রচার অভিযানে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ একটা কঠোর আঘাত হেনেছেন। বক্সরের একটা জনসভায় শাহ বলেছেন, “আরজেডি রাঘুনাথপুর আসন থেকে গ্যাংস্টার মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিনের ছেলে ওসামা শাহাবকে টিকিট দিয়েছে, যেখানে এনডিএ একজন প্রাক্তন আইপিএস অফিসারকে দাঁড় করিয়েছে।”
এই মন্তব্যে শাহ লালু প্রসাদ যাদবের নেতৃত্বাধীন আরজেডিকে ‘জঙ্গল রাজ’ ফিরিয়ে আনার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন। শাহের এই কথা বিহারের রাজনীতিতে নতুন করে আলোড়ন তুলেছে, কারণ এটি সিওয়ানের কুখ্যাত শাহাবুদ্দিনের অতীতকে আবার তুলে ধরেছে এবং নির্বাচনের আগে অপরাধ-রাজনীতির সংযোগকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
যৌন নির্যাতনের অভিযোগে গ্রেফতার সুরকার সচিন সংঘবি
এই র্যালিতে হাজার হাজার সমর্থকের উপস্থিতিতে শাহ এনডিএ-র ‘সুরক্ষা’ এবং ‘উন্নয়ন’ এর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।ঘটনার পটভূমি ফিরে তাকালে সিওয়ানের অন্ধকার অধ্যায় মনে পড়ে। মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন, আরজেডির প্রাক্তন সাংসদ, ১৯৯০-২০০৫ সালের লালু-রাবড়ি শাসনকালে সিওয়ানকে আতঙ্কের কেন্দ্র করে তুলেছিলেন।
তাঁর বিরুদ্ধে ৭৫টা মামলা ছিল, যার মধ্যে তিনটি হত্যা, এসপি-র উপর হামলা এবং এক ব্যবসায়ীর ছেলেদের অ্যাসিডে ডুবিয়ে চামড়া ছাড়ানোর মতো ভয়াবহ অপরাধের অভিযোগ ছিল। শাহাবুদ্দিনকে ‘এ-ক্যাটাগরি’ হিস্টরি-শিটার বলা হতো, এবং তাঁর শাসনামলে সিওয়ানের লোকেরা ভয়ে থাকতো। ২০১৫ সালে তাঁর মৃত্যুর পরও তাঁর ছায়া রয়ে গেছে।
এবার আরজেডি তাঁর ছেলে ওসামা শাহাবকে রাঘুনাথপুর আসন থেকে টিকিট দিয়েছে, যা শাহাবুদ্দিনের প্রাক্তন কেল্লা। এই আসনে এনডিএ জেডিইউ-র পক্ষ থেকে প্রাক্তন আইপিএস অফিসার বিকাশ কুমার সিং আলিয়াস জিশু সিংকে লড়িয়েছে। শাহের মতে, এই টিকিট দেওয়া প্রমাণ করে যে লালু ‘জঙ্গল রাজ’ ফিরিয়ে আনতে চান, যা বিহারের যুবকদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করবে।
বক্সরের র্যালিতে শাহের বক্তব্য ছিল আক্রমণাত্মক। তিনি বলেছেন, “শাহাবুদ্দিনের ছেলেকে টিকিট দিয়ে লালু প্রমাণ করেছেন যে তিনি জঙ্গল রাজ ফিরিয়ে আনতে চান। কিন্তু নিতীশ কুমার এবং নরেন্দ্র মোদীর শাসনে যদি ১০০টা শাহাবুদ্দিন আসেন, তাহলে কেউ তোমাদের ক্ষতি করতে পারবে না।
” শাহ সিওয়ানের সাহসী মানুষদের প্রশংসা করে বলেছেন, “শাহাবুদ্দিনের আতঙ্কে সিওয়ান কষ্ট পেয়েছে, কিন্তু লোকেরা কখনো হার মানেনি। এখন এনডিএ-র নেতৃত্বে বিহার নিরাপদ এবং উন্নত হচ্ছে।” এই র্যালির আগে শাহ সিওয়ানেও একটা সভায় অনুরূপ মন্তব্য করেছেন, যেখানে তিনি আরজেডি-র ‘অপরাধীদের আশ্রয়দাতা’ হিসেবে চিত্রিত করেছেন। এনডিএ-র প্রচারে এই থিম কেন্দ্রীয় জঙ্গল রাজের বিরুদ্ধে ‘ভালো শাসন’ এবং ‘সমৃদ্ধি’। শাহ আরও বলেছেন, “বিহারের ভোটের শক্তি বুঝুন, এটাই বিহারের সমৃদ্ধি নির্ধারণ করবে।”
আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব এই মন্তব্যকে ‘বিজেপির নিম্নস্তরের রাজনীতি’ বলে অভিহিত করেছেন। তেজস্বী বলেছেন, “অমিত শাহ অতীতের ছায়ায় লড়ছেন, কিন্তু বিহারের যুবকরা চায় কর্মসংস্থান এবং উন্নয়ন। শাহাবুদ্দিনের ছেলেকে টিকিট দেওয়া হয়েছে জনসমর্থনের ভিত্তিতে, না অপরাধের জন্য।”
আরজেডি-র দাবি, ওসামা শাহাব একজন তরুণ নেতা এবং সিওয়ানের উন্নয়নে কাজ করছেন। অন্যদিকে, বিজেপি এবং জেডিইউ নেতারা শাহের কথাকে সমর্থন করেছেন। বিজেপি নেতা সুনীল কুমার বলেছেন, “লালুর এই সিদ্ধান্ত বিহারকে আবার অন্ধকারে ঠেলে দেবে।


