বিজেপির মিশন বেঙ্গল ২০২৬ এ ছয় জেলার দায়িত্বে কারা?

amit-shah-mission-bengal-bjp-election-war-mode

কলকাতা, ২৪ নভেম্বর: আগামী বছরেই বিধানসভা নির্বাচন। তার আগেই পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক লড়াই যেন নতুন মাত্রা পেল। বৃহৎ দলীয় বৈঠকের পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপির কৌশলগত মুখ আমিত শাহ আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করলেন “মিশন বেঙ্গল ২০২৬”, যা আগামী ছয় মাস পুরোপুরি বাংলাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক যুদ্ধের রূপ নিতে চলেছে।

Advertisements

বিজেপির সর্বোচ্চ নেতৃত্ব এবার আর ঝুঁকি নিচ্ছে না এবার বাংলায় থাকছে ৬ জন সংগঠন সচিব ও ৬ জন কেন্দ্রীয় স্তরের সিনিয়র নেতা, যারা টানা ছয় মাস রাজ্যের ভূখণ্ডে অবস্থান করে সংগঠনের কাজ, নির্বাচনী প্রস্তুতি ও বুথ পর্যায়ের দৃষ্টিকোণ থেকে রিপোর্টিং করবেন।

   

বঙ্গ ভোটের আগে শাহী-‘মিশন বেঙ্গল’ শুরু, রাজ্যে ছয় মাসের জন্য ১২ সংগঠক

দলের ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে, এবারের কৌশল একটাই মাঠ ছাড়লে চলবে না, মাঠে নামতে হবে। যে ১২ জন শীর্ষস্তরের নেতা বাংলায় অবস্থান করবেন, তাঁদের এলাকাভিত্তিক দায়িত্বও ভাগ করে দেওয়া হয়েছে উত্তরবঙ্গের দায়িত্বে অনন্ত নারায়ণ মিশ্রা, রাঢ় অঞ্চলের দায়িত্বে পবন সাই ও ধন সিং রাওয়াত। হাওড়ার দায়িত্বে পবন রানা ও সঞ্জয় ভাটিয়া, মেদিনীপুর থাকবে জেপিএস রাঠোরের দায়িত্বে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা এম সিদ্ধার্থন ও সিটি রবির দায়িত্বে এবং শিলিগুড়ির দায়িত্বে থাকবেন অরুণ বিন্নাদি।

এই দায়িত্ব বণ্টনের পাশাপাশি সবচেয়ে বড় বার্তা দিয়েছেন স্বয়ং আমিত শাহ। তিনি জানিয়েছেন— আগামী ছ’মাসে তিনি বাংলায় মাসে অন্তত দু’বার সফর করবেন, অর্থাৎ নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত বাংলাকে কেন্দ্র করে বিজেপির কৌশলগত ঘন ঘন পর্যালোচনা চলতেই থাকবে।

রাজনৈতিক মহলের মতে, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের বিপুল জয়ের পর বিজেপি যে ব্যর্থতা ও সাংগঠনিক ভাঙন দেখেছিল, এবার সেই ভুল পুনরাবৃত্তি না করার লক্ষ্যেই আগাম “ওয়ার রুম পলিসি” নেওয়া হয়েছে। ২০২৬ বিধানসভা ভোটে বিজেপি ১৮টি আসন ধরে রাখতে চায়ই, পাশাপাশি দক্ষিণবঙ্গের অন্তত আরও ৮–১০টি আসনে ‘জোর লড়াই’ করার লক্ষ্য স্থির করেছে।

Advertisements

বৈঠকের পর এক কেন্দ্রীয় নেতা স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “বাংলা শুধুই ভোটের রাজ্য নয়, দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের কেন্দ্র। এখানে জিততে হলে বাংলার মাটিতে, বাংলার মানুষের সঙ্গে থাকতেই হবে।” দলের কৌশলগত নথিতে তিনটি মূল কার্যক্রম তুলে ধরা হয়েছে। বুথ কমিটি পুনর্গঠন ও মাইক্রো-ম্যানেজমেন্ট, উত্তর–দক্ষিণ ভোট বিভাজন ভেঙে ‘এক বাংলা’ প্রচার এবং মহিলা, দলিত এবং আদিবাসী ভোটব্যাঙ্কে বিশেষ ফোকাস।

দক্ষিণ ২৪ পরগনা যা তৃণমূলের সবচেয়ে শক্তক্ষম এলাকা সেখানেই সিটি রবি ও এম সিদ্ধার্থনের ল্যান্ডিংকে “মাস্টারস্ট্রোক” হিসেবে দেখা হচ্ছে। অন্যদিকে উত্তরের দার্জিলিং–জলপাইগুড়ি–কোচবিহার জোনে কঠোর সাংগঠনিক কাজে নামছেন অনন্ত নারায়ণ মিশ্রা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলায় বিজেপির এই সামরিকফোঁটা স্টাইলে প্রচার–পরিকল্পনা সরাসরি তৃণমূলের ওপর চাপ তৈরি করবে। কারণ তৃণমূল এখন প্রশাসন–SIR–সারদা–নারী নিরাপত্তা–অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ সবটাই সামলাতে ব্যস্ত। তার মধ্যে মাঠ স্তরে বিজেপির আগ্রাসী সংগঠন প্রচার শাসক দলের জন্য বিপদ বাড়াতে পারে।

অন্যদিকে শাসক শিবির মনে করছে, উত্তর ভারতীয় নেতাদের দিয়ে বাংলা বোঝা যাবে না। তৃণমূলের মত বাংলার ভোট তৈরি হয় ভাষা, সংস্কৃতি ও বাঙালি জাতীয়তাবোধের ওপর ভিত্তি করে। যদিও বিজেপির বক্তব্য “বাঙালিকে বুঝতে হলে বাংলাতেই থাকতে হবে, তাই ৬ মাস মাঠে।”

সব মিলিয়ে নির্বাচন যত এগোচ্ছে, ততই তাপমাত্রা চড়ছে বাংলার রাজনীতিতে। একদিকে তৃণমূলের “মাটি–মানুষ” শ্লোগান, অন্যদিকে বিজেপির “মিশন জয়ের যুদ্ধ” ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচন এবার বাংলা থেকেই জাতীয় রাজনীতির দিকনির্দেশ নির্ধারণ করবে, তা এখনই স্পষ্ট।