নয়াদিল্লি: কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সম্প্রতি এক সভায় আগুন ঝরানো ভাষণে বললেন, “সোনিয়া, মনমোহন আর লালুর সময় তারা ঢুকত, আক্রমণ করত, পালিয়ে যেত। কেউ জিজ্ঞাসাই করত না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী মনমোহন সোনিয়া জমানায় জঙ্গিদের সঙ্গে গোপন আঁতাতের অভিযোগ তুলে বলেন মনমোহন সরকার এই কারণেই কোনও অ্যাকশন নিতে পারেনি।”
তিনি আরও বলেন মোদী সরকার আসার পর আমরা উরি আক্রমণের জবাবে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ করেছি, পুলওয়ামার পরে ‘এয়ারস্ট্রাইক’ করেছি। পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের ধর্ম জিজ্ঞেস করে হত্যার ঘটনা ঘটেছিল। কুড়ি দিনের মধ্যেই আমরা ‘অপারেশন সিঁদুর’ চালিয়ে পাকিস্তানে ঢুকেছিলাম এবং সন্ত্রাস মুছে দিয়েছি।” মন্ত্রীর এই তীব্র মন্তব্য রাজনৈতিক মহলে আবারও আলোচনা-সমালোচনার ঝড় তুলেছে।
রঙিন পথচিত্রে সাজছে মুকুটমণিপুর, কংসাবতীর পাড়ে নতুন আকর্ষণ
শাহ আরও বলেন, “এই শাক্তিপীঠভূমিতে আমি বলি “যদি জঙ্গিরা গুলি চালায় তার জবাবে আমরা গোলা চালাব”। জানেন কি কোথায় এই ‘গোলা’ তৈরি হবে? প্রধানমন্ত্রী মোদী বিহারে একটি ডিফেন্স করিডর গড়ে তুলবেন এবং সেখানে একটি অর্ডনেন্স ফ্যাক্টরি স্থাপন করা হবে।” মন্ত্রী এসব কথা বলার সময় স্পষ্ট করেছেন যে, দেশীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়ানোই বর্তমান সরকারের প্রধান লক্ষ্য।
অমিত শাহের মন্তব্য সমর্থন করেছে প্রধানমন্ত্রীমুখী শিবির; তাদের বক্তব্য গত এক দশকে নিরাপত্তা রক্ষায় কঠোর ও সক্রিয় পদক্ষেপ নেওয়ায় দেশ সন্ত্রাস-প্রবণ এলাকায় চার হাত এগিয়েছে। অনেকে মনে করেন, উরি ও পুলওয়ামার পরে নেওয়া প্রতিরোধী পদক্ষেপগুলোই সীমান্তে শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে সম্ভাব্য হামলা ঠেকাতে সহায়ক হয়েছে।
তবে বিরোধীরা মন্ত্রীর কথাগুলোকে রাজনৈতিক বাক্যবিন্যাস ও অতিরঞ্জিত বলেই সমালোচনা করেছেন। ঐতিহাসিক প্রসঙ্গ তুলে বিরোধী নেতৃত্বের একাংশ বলেছেন, নিরাপত্তা বিষয়ক প্রতিটি ঘটনার পেছনে গভীর বিশ্লেষণ এবং আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সংবেদনশীলতা থাকা দরকার; একতরফাভিত্তিক বক্তব্যে কেবল উত্তেজনা ছড়াতে পারে। তারা প্রশ্ন তুলেছে ‘অপারেশন সিঁদুর’ বা পাকিস্তানে অভিযান সম্পর্কিত যে দাবি করা হচ্ছে, তার প্রমাণ ও বিবরণ কেন জনসাধারণের কাছে সরাসরি উপস্থাপন করা হচ্ছে না।
নাগরিক সমাজ ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কড়া প্রতিক্রিয়া নেওয়া অবশ্যই জরুরি, কিন্তু এর সঙ্গে থাকার যেন থাকে স্বচ্ছতা, মানবাধিকার-মনোভাব ও আন্তর্জাতিক আইন সম্মান। তারা সতর্ক করেছেন শক্তি প্রদর্শন যতই জরুরি হোক না কেন, তা কূটনৈতিক ও কৌশলগত ব্যাকআপ ছাড়া বিপজ্জনক হতে পারে।
অন্যদিকে, মন্ত্রীর ডিফেন্স করিডর ও অর্ডনেন্স ফ্যাক্টরি স্থাপনের ঘোষণা অর্থনীতিকভাবে কর্মসংস্থান ও সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি হিসেবেও দেখা হচ্ছে। বিহার অঞ্চলের জন্য এটি বড় উন্নয়নের ক্ষেত্র খুলে দিতে পারে মেকানিক্যাল শিল্প, স্থানীয় যোগান শৃঙ্খলা ও দক্ষ শ্রমশক্তি বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হবে। স্থানীয় রাজনীতিতেও এই ধরনের ঘোষণা নির্বাচনী গল্পে রূপান্তরিত হতে পারে।
উল্লেখ্য, অমিত শাহের ভাষণ এমন এক সময়ে এসেছে যখন দেশীয় নিরাপত্তা, সীমান্ত বিবাদ এবং অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবিরোধী নীতিগুলোর উপর জনসাধারণের নজর টিকে আছে। ফলে এই মন্তব্যের প্রত্যক্ষ আর ছায়া— দুটোই রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও সামাজিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে।
শেষ পর্যন্ত, মন্ত্রীর কণ্ঠে প্রকাশিত হয়েছে আশ্বাস সীমান্তে চাপ থাকুক বা দেশের ভিতরে সরকার যে সতর্ক ও সজাগ, তা ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই প্রশংসা করছেন; আবার কেউ কেউ বলছেন সমগ্র পরিস্থিতি উন্নত কৌশল, স্বচ্ছতা ও বহুপাক্ষিক কূটনীতির মাধ্যমে পরিচালিত হওয়া উচিত। দেশের নিরাপত্তা প্রশ্নে জনগণের আস্থা বজায় রাখাই রাজনীতির মূল চাহিদা।
