নয়াদিল্লি: “যারা ভোট দেয় না, তাদের আমরা টিকিট কেন দেব?” কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা অমিত শাহের এই মন্তব্য ঘিরে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক। বিহার বিধানসভা নির্বাচনে একটিও মুসলিম প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই শাহের এই স্পষ্ট এবং তীক্ষ্ণ জবাব নতুন করে তাকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে।
এক সংবাদমাধ্যমের সাক্ষাৎকারে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, “বিহার নির্বাচনে বিজেপি কেন কোনও মুসলিম প্রার্থী দেয়নি?” উত্তরে শাহ বলেন, “এটাই প্রথম নয়। যখন তারা আমাদের ভোট দেয় না, তখন আমরা কেন তাদের টিকিট দেব?” তাঁর এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলে নানান প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে।
আয়কর দফতরের নতুন নিয়ম, আধার না-লিঙ্ক করলে প্যান হবে বাতিল
বিরোধী শিবিরের অভিযোগ, অমিত শাহের এই মন্তব্যে বিজেপির “বিচ্ছিন্নতাবাদী রাজনীতি” ফের স্পষ্ট হল। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, “একজন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই ধরনের মন্তব্য করতে পারেন না। তিনি গোটা দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন, শুধু একটা ধর্মের নয়।” অন্যদিকে আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব মন্তব্য করেছেন, “বিহারে বিজেপির এই মনোভাবই প্রমাণ করে তারা সংবিধান নয়, ভোটব্যাঙ্ক দেখে চলে।”
তবে বিজেপির পক্ষ থেকে কেউ কেউ শাহের পক্ষে সওয়াল করেছেন। বিজেপির মুখপাত্র সম্বিত পাত্র বলেন, “অমিত শাহ বাস্তবের কথা বলেছেন। রাজনীতিতে গণতন্ত্র মানে জনগণের ইচ্ছাকে সম্মান করা। যখন একটি ভোটব্যাঙ্ক বছর পর বছর অন্য দলে ভোট দেয়, তখন সেই সম্প্রদায়ের প্রতি বিজেপির কোনও রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা থাকে না।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, অমিত শাহের এই মন্তব্য বিজেপির ভবিষ্যৎ কৌশলের ইঙ্গিতবাহী। বিহারে মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ১৭ শতাংশ হলেও, গত কয়েকটি নির্বাচনে বিজেপি তাদের ভোট পায়নি বললেই চলে। ফলে বিজেপি এবার সরাসরি সেই ভোটব্যাঙ্ককে উপেক্ষা করে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু ভোটের সংহতকরণের দিকে ঝুঁকছে।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে , “শাহের এই মন্তব্য শুধু বিহার নয়, সমগ্র উত্তর ভারতের হিন্দু ভোটকে আরও শক্ত করতে পারে। বিজেপি বুঝে গেছে, মুসলিম ভোটারদের সমর্থন তাদের কাছে আসবে না। তাই তারা এখন স্পষ্টভাবে ‘আমরা বনাম তারা’ রাজনীতি করছে।” এই মন্তব্যের জেরে সামাজিক মাধ্যমেও শুরু হয়েছে প্রবল আলোচনা। কেউ শাহকে “স্পষ্টভাষী নেতা” বলে প্রশংসা করেছেন, আবার কেউ বলছেন “এই বক্তব্য ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ ভাবনাকে অপমান করছে।”
অমিত শাহ নিজে এই বিতর্ক নিয়ে পরবর্তী কোনও ব্যাখ্যা দেননি। তবে বিজেপি শিবিরে মনে করা হচ্ছে, শাহ ইচ্ছাকৃতভাবেই এমন বার্তা দিয়েছেন যাতে হিন্দুত্ববাদী ভোটারদের মধ্যে আরও ঐক্য তৈরি হয়। বিহার নির্বাচনে এই বক্তব্যের প্রভাব কতটা পড়বে, তা সময়ই বলবে। কিন্তু রাজনৈতিক মহলের মতে, একথা স্পষ্ট অমিত শাহের এক বাক্যেই আবারও ভারতীয় রাজনীতির ধর্মভিত্তিক বিভাজন ইস্যুটি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।


