বাবরি বিতর্কে হুমায়ুনের সমালোচনায় মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের ইমাম

লখনউ: বাবরি মসজিদ ইস্যুর নামে পশ্চিমবঙ্গের বেলডাঙায় নতুন করে উত্তাপ ছড়ানোয় (AIMPLB Imam criticizes Humayun Kabir)সরাসরি ক্ষোভ প্রকাশ করলেন অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড…

aimplb-imam-slams-humayun-kabir-babri-masjid-controversy

লখনউ: বাবরি মসজিদ ইস্যুর নামে পশ্চিমবঙ্গের বেলডাঙায় নতুন করে উত্তাপ ছড়ানোয় (AIMPLB Imam criticizes Humayun Kabir)সরাসরি ক্ষোভ প্রকাশ করলেন অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড (AIMPLB)-এর সদস্য ও লখনউ ঈদগাহর ইমাম মাওলানা খালিদ রাশিদ ফরঙ্গি মাহলি।

Advertisements

স্থগিতপ্রাপ্ত তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর যে ভাবে ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বরের বিতর্কিত দিনটিতে বেলডাঙায় ‘বাবরি মসজিদ’–এর নামে শিলান্যাসের উদ্যোগ নিয়েছেন, সেই পদক্ষেপকে ‘অপ্রয়োজনীয়’, ‘অবিবেচিত’ এবং ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে তোপ দাগেন তিনি।

   

মসজিদের জন্য ১৫৭ কিমি দূর থেকে ইট নিয়ে বেলডাঙায় হাজির সফিকুল

শনিবার ANI-কে দেওয়া তাঁর সাক্ষাৎকারে মাওলানা খালিদ রাশিদ স্পষ্ট বলেন, “ধর্মীয় কোনও বিষয়কে কখনও রাজনৈতিক লড়াইয়ে পরিণত করা উচিত নয়। বাবরি মসজিদ অত্যন্ত সংবেদনশীল ইস্যু। যে ভাবে এক বিধায়ক এই বিষয়টি তুলেছেন, তা সম্পূর্ণ অনাকাঙ্ক্ষিত। দেশের আইনের অনুযায়ী কোনও উপাসনালয় তৈরি করতে হলে রাজ্য প্রশাসনের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক।” তাঁর বক্তব্যে শোনা গেছে একাধিক সতর্কবার্তা সংঘর্ষ বাড়ানো নয়, বরং শান্তি রক্ষাই একমাত্র দায়িত্ব।

স্থগিতপ্রাপ্ত তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের ঘিরে বিতর্ক নতুন নয়। দলবিরোধী মন্তব্য, প্রশাসনের সঙ্গে সংঘাত একাধিক কারণে আগেই তাঁকে দল থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল। তবে এবার তিনি দেশের সবচেয়ে সংবেদনশীল ধর্মীয়-রাজনৈতিক ইস্যুকে কেন্দ্র করে বেলডাঙায় “বাবরি মসজিদ নির্মাণের শিলান্যাস” ঘোষণা করে নতুন করে ঝড় তুলেছেন।

শিলান্যাসের দিন হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে ৬ ডিসেম্বর, অর্থাৎ অযোধ্যায় বাবরি মসজিদের ধ্বংসের দিন। এই সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরই এলাকায় উদ্বেগ বাড়ে। আয়োজনস্থলে বড় জমায়েতের সম্ভাবনা, সৌদি আরবসহ কয়েকটি দেশের ইসলামি বক্তাদের উপস্থিতির গুজব, এবং রাজনৈতিক উত্তেজনার আশঙ্কায় মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসন বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে।

কিছু সংগঠন অনুষ্ঠান স্থগিতের দাবি জানালেও, শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্ট অনুষ্ঠানের উপর নিষেধাজ্ঞা জারির কোনও নির্দেশ দেয়নি, ফলে আয়োজন পথেই রয়েছে। তবে আদালত প্রশাসনকে আইনশৃঙ্খলা সুরক্ষার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। “বাবরি মসজিদ ইস্যু আদালত-মীমাংসিত, নতুন করে উত্তেজনা ছড়ানো বিপজ্জনক” ইমামের সতর্কতা

মাওলানা খালিদ রাশিদ উল্লেখ করেন যে বাবরি ইস্যু ইতিমধ্যেই দেশের সর্বোচ্চ আদালত দ্বারা নিষ্পত্তি হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণ চলছে এবং সরকার মুসলিম পক্ষের জন্য আলাদা জমি বরাদ্দ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে আবার ‘বাবরি মসজিদ’ নাম ব্যবহার করে নতুন রাজনৈতিক প্রচার চালানোকে তিনি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বিপজ্জনক বলে মনে করেন।

তিনি বলেন, “এই দেশ আইন অনুযায়ী চলে। যে কেউ উপাসনালয় বানাতে চাইলে সরকার ও প্রশাসনের অনুমতি নিতে হয়। আইনকে এড়িয়ে বা রাজনৈতিক গোলমাল তৈরির উদ্দেশ্যে কোনও উদ্যোগ নিলে সাধারণ মানুষের মধ্যেই বিভ্রান্তি এবং উত্তেজনা তৈরি হবে।”

হুমায়ুন কবীরের কর্মসূচিকে তৃণমূল নেতৃত্ব প্রকাশ্যে সমর্থন না করলেও, দলটি বলছে এই কর্মসূচির সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই। অন্যদিকে বিজেপি দাবি করেছে, হুমায়ুনের আয়োজনে সংখ্যালঘু ভোটে মেরুকরণের চেষ্টা চলছে। কংগ্রেস ও বামফ্রন্টও একই অভিযোগ তুলেছে। স্থানীয় সংখ্যালঘু নেতাদের একটি অংশ বলছেন, বাবরি ইস্যু সংবেদনশীল হওয়ায় এ ধরনের আয়োজন থেকে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করলে ভবিষ্যতে তার খেসারত দিতে হতে পারে।

মাওলানা খালিদ রাশিদের মন্তব্যে একটাই বার্তা স্পষ্ট ভারতের সমাজ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যেকোনও আগুনে ইস্যু নিয়ে অবিবেচিত পদক্ষেপ বিপজ্জনক হতে পারে। প্রশাসন, রাজনৈতিক দল এবং সমাজের পক্ষ থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “দেশে শান্তি-সম্প্রীতি বজায় রাখা সবার দায়িত্ব।

ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতি করলে সমাজই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।” বেলডাঙার প্রসঙ্গ ঘিরে উত্তেজনা এখনো থামেনি, তবে এই ইস্যু রাজ্য-রাজনীতিকে আগামী কয়েকদিন আরও সরগরম করে রাখবে, তা বলাই যায়।

Advertisements