পটনা: রাজনীতির মঞ্চে প্রায়ই শোনা যায় ধর্ম-জাতপাতের বিভাজনের অভিযোগ। কিন্তু এবার সেই প্রচলিত সমীকরণ ভেঙে এক চমকপ্রদ পদক্ষেপ নিল আসাদুদ্দিন ওয়াইসির দল অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (AIMIM)। মুসলিম প্রধান ঢাকা বিধানসভা কেন্দ্রে দলের পক্ষ থেকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে একজন হিন্দু রাজপুত নেতা রানা রণজিৎ সিংহকে।
প্রতিপক্ষের চাপ বাড়ছে! অভিষেক কবে? ইবুসুকিকে নিয়ে এল বিরাট আপডেট
শনিবার মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে নজির গড়লেন রানা রণজিৎ। খালি পায়ে হাঁটতে হাঁটতে তিনি পৌঁছান নির্বাচনী দফতরে। মাথায় নামাজের টুপি, কপালে হিন্দু ধর্মীয় তিলক—দুটি ধর্মের প্রতীক একসঙ্গে বহন করলেন এই প্রার্থী। সাংবাদিকদের প্রশ্নে তাঁর জবাব ছিল আরও চমকপ্রদ। “আমি ‘মোহাম্মদকে ভালোবাসি’, আবার ‘জয় শ্রী রাম’-ও বলি। আমার কাছে ধর্ম মানে মানবতা,” বলেন রানা রণজিৎ সিংহ, যিনি পেশায় সমাজসেবী এবং শিক্ষা আন্দোলনের সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত।
AIMIM-এর এই সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক মহলে ইতিমধ্যেই আলোড়ন পড়েছে। কারণ, ঢাকাকে দীর্ঘদিন ধরেই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কেন্দ্র হিসেবে দেখা হয়, যেখানে AIMIM-এর প্রভাব যথেষ্ট বলেই মনে করা হয়। এই কেন্দ্রে হিন্দু প্রার্থী দেওয়া নিঃসন্দেহে এক রাজনৈতিক কৌশল, যা দলটির ‘ইনক্লুসিভ পলিটিক্স’-এর বার্তা বহন করছে বলে মনে করছে পর্যবেক্ষকরা।
দলের তরফে জানানো হয়েছে, “AIMIM কেবল মুসলিমদের দল নয়, এটি ভারতের সংবিধান এবং সমতার আদর্শে বিশ্বাসী একটি রাজনৈতিক আন্দোলন। আমরা জাতি বা ধর্ম নয়, যোগ্যতাকে প্রাধান্য দিই।” রানা রণজিৎ সিংহের মনোনয়নকে তাই দলীয় নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বলেই ব্যাখ্যা করেছেন বিহার রাজ্য সভাপতি আকতারুল ইমাম।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, AIMIM-এর এই পদক্ষেপ বিহারের নির্বাচনী সমীকরণে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। বিশেষত সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ককে একচেটিয়া ভাবা যে ভুল, সেই বার্তাই দিতে চাইছে ওয়াইসি-র দল। অন্যদিকে, বিজেপি ও আরজেডি শিবির এই সিদ্ধান্তকে ‘চোখে ধুলো দেওয়া রাজনীতি’ বলে কটাক্ষ করেছে।
তবে রানা রণজিৎ সিংহ নিজের বক্তব্যে জানিয়েছেন, “আমি মানুষকে ধর্ম দিয়ে নয়, ভালোবাসা দিয়ে ভাগ করি। ঢাকার মাটিতে হিন্দু-মুসলিম মিলেই শান্তি ও উন্নয়নের লড়াই লড়ব।” তাঁর এই বার্তায় সাধারণ মানুষও আগ্রহ প্রকাশ করেছে। স্থানীয় বাজারে, চায়ের দোকানে এখন আলোচনার মূল বিষয় এই হিন্দু প্রার্থীর AIMIM থেকে লড়াই।
যে সময়ে দেশে ধর্মীয় মেরুকরণ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক তুঙ্গে, ঠিক সেই সময় AIMIM-এর এই পদক্ষেপ এক নতুন ভাবনার দিগন্ত খুলে দিয়েছে। এখন দেখার বিষয়—রানা রণজিৎ সিংহের এই ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ প্রচেষ্টা ভোটবাক্সে কতটা ফল দেয়।