পটনা : সীমানচলের ভোট–রাজনীতি ঠিক কোনদিকে এগোচ্ছে, তা নিয়ে জোর আলোচনা চলছে রাজনৈতিক মহলে। এর মধ্যেই বড় ঘোষণা করলেন অল ইন্ডিয়া মজলিস–ই–ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (AIMIM) সুপ্রিমো আসাদউদ্দিন ওআইসি।
রবিবার আমোরে এক বিশাল জনসভা থেকে তিনি জানিয়ে দিলেন বিহারবাসীর আস্থা ও মতামতকে সম্মান করেই এবার দল কাঠামোগত পরিবর্তন আনছে। নির্বাচিত AIMIM বিধায়কদের এবার থেকে নিজস্ব বিধানসভা কেন্দ্রে সপ্তাহে দুই দিন অফিসে উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক করা হবে।
‘রাজ্য-কেন্দ্র টানাপোড়েনে ভুক্তভুগি সাধারণ মানুষ!’ বিস্ফোরক শমীক
ওআইসি বলেন, “মানুষকে ভোটের সময় খুঁজে পাওয়া, আর ভোট জেতার পর অদৃশ্য হয়ে যাওয়া AIMIM এই সংস্কৃতি অনুসরণ করে না। আমাদের প্রতিটি বিধায়ক সপ্তাহে অন্তত দুই দিন তাঁদের অফিসে বসে জনগণের সমস্যা শুনবেন, রিপোর্ট নেবেন এবং সমাধানের জন্য তৎক্ষণাৎ পদক্ষেপ করবেন।” জনতার হাততালিতে মাঠ মুহূর্তেই উত্তেজনায় ফেটে পড়ে।
এর পাশাপাশি, বিহারের রাজনৈতিক সমীকরণে আরও এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়ে রাখলেন AIMIM সুপ্রিমো। তিনি মন্তব্য করেন, “আমরা নীতীশ কুমারের সরকারকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত কিন্তু তা শর্তসাপেক্ষ। সহযোগিতা হবে শুধুমাত্র তখনই যখন সীমানচলে দ্রুত গতিতে সড়ক উন্নয়ন হবে, এবং দুর্নীতিকে শতভাগ নির্মূল করা হবে।” তাঁর দাবি, দল কোনও অবস্থাতেই অন্ধ সমর্থন বা তুষ্টিকরণের রাজনীতি করবে না।
সীমানচলের দীর্ঘদিনের অবহেলা নিয়ে ওয়েসি আবারও সরব হন। তিনি বলেন, “বিহারের রাজধানী থেকে সীমানচল দেখতে যতটা দূরে মনে হয়, বাস্তবে তার থেকেও বেশি দূরে প্রশাসনিক নজর এ অঞ্চলের দিকে। সড়ক যেমন নেই, কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই, স্বাস্থ্য পরিষেবার সুযোগ নেই। শিক্ষার অবস্থা বহু জেলায় ভয়াবহ। উন্নয়নের অধিকার এখানে আজও অধরা।”
সভায় উপস্থিত মানুষদের অনেকেই মাথা নেড়ে সম্মতি জানাতে দেখা যায়। বহু মানুষের হাতে ছিল অভিযোগের কাগজ, জমির সমস্যা, হাসপাতালের সুযোগ, ভাঙা রাস্তা, স্কুলের শিক্ষক স্বল্পতা সব মিলিয়ে মানুষের দীর্ঘদিনের হতাশাই যেন ওয়েসির বক্তব্যে প্রতিফলিত হল।AIMIM জানিয়ে দিয়েছে, দলের টার্গেট এবার “ভোটের পরেও মানুষের পাশে” থাকার। জনসভায় একাধিকবার উঠে আসে “সপ্তাহে দুই দিন বিধায়কের বাধ্যতামূলক অফিস উপস্থিতি শুধু শুরু, ভবিষ্যতে জেলাওয়ারি জন-অভিযোগ শিবিরও চালু করা হবে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সীমানচলে AIMIM এর প্রভাব দ্রুত বাড়ছে। একইসঙ্গে ওয়েসির শর্তসাপেক্ষ সহযোগিতার বক্তব্য বিহারের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণের সম্ভাবনা তৈরি করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, AIMIM সরাসরি সরকার–বিরোধী অবস্থানে নেই, আবার বিনাশর্ত গা–ঘেঁষাও নয়। বরং উন্নয়ন ও দুর্নীতিবিরোধিতাকে শর্ত বানিয়ে নিজেদের “উন্নয়ন–ভিত্তিক শক্তি” হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে দল।
ওয়েসি আরও হুঁশিয়ারি দেন, “সড়ক উন্নয়ন যদি দ্রুত শুরু না হয়, আর সীমানচলে দুর্নীতির চক্র ভাঙা না হয়, AIMIM কোনওভাবেই সমর্থন দেবে না। মানুষের ক্ষোভ আমরা বুঝি এবং সেই ক্ষোভের সামনে কোনও রাজনৈতিক হিসেব দাঁড়াতে পারে না।”
সভা শেষে AIMIM সমর্থকদের মধ্যে উৎসাহ চোখে পড়ে। কেউ বললেন, “বছরের পর বছর শুধুই প্রতিশ্রুতি পেয়েছি, এবার বাস্তব কাজ দেখতে চাই।” আরেকজন বলেন, “যদি সত্যিই বিধায়কদের সামনে পাওয়া যায়, তা হলে সাধারণ মানুষের লাভ হবে।”
এখন দেখার বিষয় ওয়েসির এই “উন্নয়ন–শর্ত” কি বাস্তবে রাজনৈতিক চিত্র বদলাবে? সীমানচলে বহু দশক ধরে চলা অবহেলা ও দুর্নীতি— এবার কি সত্যিই শেষ হবে? সুযোগ এবং সহযোগিতা দুটোই এখন সরকারের কোর্টে। মানুষ অপেক্ষা করছে — প্রতিশ্রুতির বাস্তব রূপ কত তাড়াতাড়ি দেখা যায়।
