বন্দেমাতরম নিয়ে মুসলিম বিধায়কের বিস্ফোরক মন্তব্যে বিতর্ক

abu-asim-azmi-vande-mataram-controversy

মুম্বই: ‘বন্দে মাতরম’ নিয়ে ফের তীব্র বিতর্কে জড়ালেন সমাজবাদী পার্টির বিধায়ক আবু আসিম আজমি। মহারাষ্ট্র সরকারের নির্দেশে রাজ্যের সব স্কুলে ৩১ অক্টোবর থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত সম্পূর্ণ বন্দে মাতরম গাওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, গানটির ১৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে। কিন্তু এই নির্দেশের বিরোধিতা করে আজমি সরাসরি ঘোষণা করেছেন “আমাকে কেউ বাধ্য করতে পারবে না বন্দে মাতরম গাইতে।”

Advertisements

আজমির দাবি, এই গানটির সঙ্গে ধর্মীয় ভাবাবেগ জড়িত, তাই কাউকে জোর করে তা গাওয়ানো উচিত নয়। তিনি বলেন, “বিজেপি আসলে ‘ভারত জলাও পার্টি’ যারা ধর্মের নামে মানুষকে বিভক্ত করে, ঘৃণা ছড়ায়, এবং মুসলমানদের দমিয়ে রাখার পরিকল্পনা করে। যদি তাদের কাছ থেকে মুসলিম, হিন্দু, পাকিস্তান, ভারত এই শব্দগুলো কেড়ে নেওয়া হয়, তাহলে বিজেপি শূন্য হয়ে যাবে।”

   

জুম্মাবারের নামাজের সময় মসজিদে ভয়ংকর বিস্ফোরণ! আহত ৫৪!

মুম্বইয়ের মানখুর্দ-শিবাজীনগর বিধানসভা কেন্দ্রের এই সমাজবাদী নেতা সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “একজন মুসলিম কেবল আল্লাহকেই প্রার্থনা করে। কেউ কেউ ভূমিপূজা করেন, কেউ মদ খান, কেউ নামাজ পড়েন না আমি কি তাদের মারব? ইসলাম আমাদের শেখায় সহনশীলতা, কিন্তু প্রকৃত ধার্মিক মুসলমান কখনও আল্লাহর সমান অন্য কাউকে স্থান দেবে না।”

আজমি অভিযোগ করেন যে, বিজেপি সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে এই ইস্যুকে সামনে এনে ধর্মীয় মেরুকরণ ঘটানোর চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, “আমরা দেশপ্রেমে বিশ্বাস করি, কিন্তু ধর্মীয় বিশ্বাসকে আঘাত করে দেশপ্রেম দেখানো যায় না।” এদিকে, মহারাষ্ট্র সরকারের শিক্ষা দপ্তর গত ২৭ অক্টোবর একটি সার্কুলার জারি করে জানিয়েছিল, ৭ নভেম্বর পর্যন্ত স্কুলগুলোতে সম্পূর্ণ ‘বন্দে মাতরম’ গানটি গাওয়া হবে, কারণ সাধারণত এখন পর্যন্ত স্কুলে শুধু প্রথম দুটি স্তবকই গাওয়া হয়।

Advertisements

বন্দে মাতরম গানটি ১৮৭৫ সালের ৭ নভেম্বর অক্ষয় নবমীতে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচনা করেন, যা পরবর্তীকালে ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে ওঠে। আজমির মন্তব্য স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। বিজেপি নেতারা তার মন্তব্যকে ‘দেশবিরোধী’ ও ‘বিতর্ক সৃষ্টিকারী’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। এক বিজেপি মুখপাত্র বলেন, “যারা বন্দে মাতরম গাইতে লজ্জা পান, তারা দেশের সংস্কৃতি ও স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসকেই অসম্মান করছেন।”

অন্যদিকে, কংগ্রেস ও এনসিপি নেতারা আজমির মন্তব্যে সরাসরি সমর্থন না জানালেও বলেছেন, “দেশপ্রেমের মাপকাঠি গান গাওয়ায় নয়, কাজকর্মে। প্রত্যেকেরই ধর্মীয় বিশ্বাসকে সম্মান করা উচিত।” প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী ইনডোর স্টেডিয়ামে বন্দে মাতরমের ১৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বছরব্যাপী উদ্‌যাপনের সূচনা করবেন এবং স্মারক ডাকটিকিট ও কয়েন প্রকাশ করবেন।

বর্তমানে এই ঘটনাকে ঘিরে মহারাষ্ট্রে রাজনৈতিক তরজার আগুন জ্বলে উঠেছে। শিক্ষা দফতর জানিয়েছে, স্কুলে অংশগ্রহণ স্বেচ্ছাসেবী নয় এটি নির্দেশনা অনুসারে “সম্মান প্রদর্শনের প্রতীক।” তবে আজমি তাঁর অবস্থানে অনড় “ধর্মীয় কারণে আমি বন্দে মাতরম গাইব না, এটা আমার সাংবিধানিক অধিকার।”