কলকাতা: সম্প্রতি প্রাক্তন বিচারপতি এবং বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Abhijit Gangopadhyay ) মন্তব্য ঘিরে তৈরী হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক। বিজেপির অন্দরেই যেন ফের মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে আদি নব্য দ্বন্দ্ব। বিজেপি সাংসদ বলেছিলেন তিনি যে কারণে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন তার প্রধান কারণ ছিল তৃণমূলকে সরিয়ে বাংলায় বিজেপি সরকার তৈরী করা। কিন্তু দুর্ভাগ্য বসত তার সেই আশা পূরণ করতে পারেনি কেন্দ্রীয় সরকার।
তাদের মনোভাবে ক্ষুন্ন প্রাক্তন বিচারপতি তাও বলেছিলেন তিনি। তিনি আরও বলেন তিনি বাংলার উন্নয়ন চান কিন্তু কেন্দ্র সরকার কোনোভাবেই তৃণমূলকে সরাতে চায় না। বিজেপি সংসদের এই মন্তব্যের পরেই স্পিকার বিমান বন্দোপাধ্যায় প্রাক্তন বিচারপতিকে তৃণমূলে যোগ দিতে বলেছেন। এবং বলেন যে বাংলায় উন্নয়নের মুখ দেখতে গেলে তা বিজেপিতে বসে দেখা সম্ভব নয়। তা দেখতে হবে তৃণমূলে এসে।
সব স্কুলে বাধ্যতামূলক ‘বন্দে মাতরম’: ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর
এর পর থেকেই সরব রাজনৈতিক মহল। গুঞ্জন তবে কি এবার বিজেপি ছেড়ে বেসুরো বিচারপতিকে তৃণমূলেই যেতে হবে? এই বিতর্কের সূত্রপাত এক সাক্ষাৎকার থেকে। সেখানে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “আমি বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলাম এই আশায় যে তৃণমূলকে সরিয়ে বাংলায় পরিবর্তনের সরকার আনব। কিন্তু দুঃখের বিষয়, কেন্দ্রের মনোভাব থেকে বুঝেছি তারা তৃণমূলকে সরাতে আগ্রহী নয়।”
তাঁর কথায় ক্ষোভ ফুটে উঠেছে কেন্দ্রের প্রতি, বিশেষত হিন্দি বলয়ের নেতাদের প্রভাব নিয়ে। প্রাক্তন বিচারপতি বলেন, “বাংলার মন বোঝা যায় না দিল্লি থেকে। হিন্দি বলয়ের নেতাদের দিয়ে বাংলায় রাজনীতি করা যায় না।”
এদিকে, এই ঘটনায় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষেরাও সুযোগ নিতে ছাড়েনি। রবিবার বারুইপুরে দলীয় সভায় এসে বিধানসভা স্পিকার ও তৃণমূল নেতা বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের তৃণমূলে যোগ দেওয়া উচিত। উনি যদি সত্যিই পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়ন চান, তবে বিজেপিতে থেকে তা দেখা সম্ভব নয়।
উন্নয়নের মুখ দেখতে হলে তাঁকে তৃণমূলে আসতে হবে।” অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে বিজেপিতে যোগ দেন। বিচারপতি থাকাকালীন তিনি পশ্চিমবঙ্গের নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রায় দেন, যার ফলে তৃণমূল সরকারের চরম অস্বস্তি তৈরি হয়েছিল। তাঁর নির্দেশেই ইডি ও সিবিআই রাজ্যে তদন্তে নেমেছিল।
সেই অভিজিৎ যখন রাজনীতিতে যোগ দেন, তখনই অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন বিচারপতি হিসেবে যিনি তৃণমূলের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিলেন, তিনি কি রাজনীতিতে নিরপেক্ষ থাকতে পারবেন?এখন সেই অভিজিৎ যখন বিজেপির নীতি নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন, তখন সমালোচকদের কথাই যেন আবার ফিরে আসছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তাঁর বক্তব্য আসলে বাংলায় বিজেপির সাংগঠনিক দুর্বলতা ও ‘দিল্লি-নির্ভর রাজনীতি’র প্রতি এক সরাসরি বার্তা।


