ভাষার রাজনীতি: কি বলছে বাম-শিবির?

ক্ষমতাবান, অধিক শক্তিশালী, উচ্চপদে আসীন কোনও ব্যক্তি, সমষ্টি বা প্রতিষ্ঠান তার থেকে নীচুস্তরে থাকা কম ক্ষমতাসম্পন্নের উপর কোনওকিছু জোরপূর্বক চাপিয়ে দিলে তা হয় অত্যাচার। এই…

CPIM

ক্ষমতাবান, অধিক শক্তিশালী, উচ্চপদে আসীন কোনও ব্যক্তি, সমষ্টি বা প্রতিষ্ঠান তার থেকে নীচুস্তরে থাকা কম ক্ষমতাসম্পন্নের উপর কোনওকিছু জোরপূর্বক চাপিয়ে দিলে তা হয় অত্যাচার। এই অত্যাচার, বঞ্চনা, নিপীড়নে দেওয়ালে পিঠ থেকে গেলে সেই ‘অত্যাচারিত’ সমষ্টি হয় তা মুখ বুজে সহ্য করে, মানিয়ে নেয়। অথবা ক্ষোভের স্ফুলিঙ্গ পরিণত হয় ‘আন্দোলন’-এর দাবানলে।

ভারতভূমির সঙ্গে ‘আন্দোলন’ শব্দটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বিশেষ করে বাঙালির কাছে ‘আন্দোলন’ শব্দের তাৎপর্য অত্যন্ত গভীর। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ভিনরাজ্যে হেনস্থা হওয়া বাংলাভাষী দরিদ্র দিনমজুরের উপর ‘অত্যাচার’ তাই বাঙালি তথা বাংলাভাষীদের গায়ে নিঃসন্দেহে ছেঁকা দেওয়ার মত। তবে সেই আগুনের তাপে রাজনীতির রুটি সেঁকতে মরিয়া রাজ্যের শাসকদল ‘ভাষা আন্দোলন’-এর মত দগদগে ইতিহাসের আবেগকে নিয়ে লোক দেখানি ভণ্ডামিতে পরিণত করেছে?

   

গত কয়েক মাস ধরে বিজেপি শাসিত রাজ্যে ‘বাঙালি’ পরিযায়ীদের উপর অত্যাচার চালাচ্ছে। শাসক দলের প্রমুখ নেতা জোড় গলায় বাংলা ভাষার অস্তিত্বকেই নাকচ করছে। রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী খুঁজতে গিয়ে ভাষার নিরিখে সমগ্র একটি জাতি বা রাজ্যের বাসিন্দাকেই যে সন্দেহের মুখে ঠেলে দিচ্ছে সেই বিষয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। তবে দরিদ্র বাঙালির উপর এই ‘অত্যাচার’-এর বিরুদ্ধে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিবাদ বারকয়েক আস্ফালন, কিছু গরম বক্তৃতা আর সমাধানের নামে ‘তোমরা ফিরে এসো’-তেই সমাপ্তির মুখে।

Advertisements

ভোটমুখী পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল-বিজেপির এই রাজনৈতিক ভণ্ডামির বিষয়ে গোড়া থেকেই সরব বামেরা। সিপিএমের দৈনিক মুখপত্রের সম্পাদকীয় বলছে, বিজেপি শাসিত রাজ্যে শুধুমাত্র বাংলায় কথা বলার অপরাধে ঝুপড়িতে হানা দিয়ে তুলে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। খেতে না দিয়ে হাত-পা বেঁধে ফেলে রাখা হয়েছে। দুই-তিনমাস ভিনরাজ্যে আটক থাকার পর ঠেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে, ‘ভিন-দেশ’ বাংলাদেশে।

বাংলাভাষীদের উপর এই অকথ্য অত্যাচারে প্রবল ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে। তাই “ঠেকায় পড়ে শাসক তৃণমূলও বাধ্য হয়েছে প্রতিবাদে গর্জে উঠতে ও কিছু প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন করতে। তারপরই যথারীতি সব ভোঁ-ভাঁ”। বিরোধীদের আক্রমণের মুখে পড়ার হাত থেকে রেহাই পেতে “দু-চারদিন কড়া ভাষায় বিবৃতি, কয়েকটি সভায় গরম গরম বক্তৃতা, মিছিলে দু’পা হেঁটে হুঙ্কার। ব্যস, এ পর্যন্তই। তারপর মমতা ব্যানার্জি ও তাঁর ভাইপোর নেতৃত্বে বহুল প্রচারিত ভাষা আন্দোলনের যবনিকা পতন। পরিস্থিতির চাপে ঠেকায় পড়ে এমন লোক দেখানো আন্দোলন মাঝে মধ্যে করতেই হয়। তা নাহলে বিরোধীদের আক্রমণের মুখে জবাব দেবার মতো কিছু থাকে না।”

আমাদের Google News এ ফলো করুন

২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।

Google News Follow on Google News