দিল্লি পুলিশ তিন বছর পর তাদের একজন অফিসারের বিরুদ্ধে একটি রাস্তার কুকুরকে (Stray Dog)লাঠি দিয়ে মারধরের অভিযোগে প্রথম তথ্য প্রতিবেদন (এফআইআর) দায়ের করেছে। এই ঘটনাটি ২০২২ সালের জানুয়ারিতে উত্তর-পূর্ব দিল্লির জাফরাবাদ এলাকায় ঘটেছিল। একটি স্থানীয় আদালতের নির্দেশের পর পুলিশ এই পদক্ষেপ নিয়েছে, যা পশু নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছে।
জাফরাবাদ থানার অধীনে দায়ের করা এই এফআইআর-এ ভারতীয় দণ্ডবিধির (আইপিসি) ৪২৮ ধারা (পশুর প্রতি দুষ্টতা) এবং প্রিভেনশন অফ ক্রুয়েলটি টু অ্যানিম্যালস অ্যাক্ট, ১৯৬০-এর ১১ ধারার অধীনে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
অভিযুক্ত পুলিশ অফিসার, যিনি জাফরাবাদ থানায় কর্মরত ছিলেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি একটি রাস্তার কুকুরকে নির্মমভাবে লাঠি দিয়ে মারধর করেছেন, যার ফলে কুকুরটি গুরুতরভাবে আহত হয়।
এই ঘটনার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল, যা পশুপ্রেমী এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করে।ঘটনাটি ঘটেছিল ২০২২ সালের ১৫ জানুয়ারি, যখন স্থানীয় বাসিন্দা এবং পশু কল্যাণ সংগঠনের সদস্য রাহুল শর্মা এই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেন এবং জাফরাবাদ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
তবে, পুলিশ তখন এই অভিযোগের উপর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় শর্মা আদালতের দ্বারস্থ হন। দিল্লির একটি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট গত সপ্তাহে পুলিশকে এই ঘটনায় এফআইআর দায়ের করার নির্দেশ দেয়, যার পর পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।এক্স প্ল্যাটফর্মে এই ঘটনা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে।
একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “তিন বছর পর এফআইআর দায়ের করা হলেও এটি পশু কল্যাণের জন্য একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। পুলিশ অফিসারদের দায়বদ্ধ করা উচিত।” পশু কল্যাণ সংগঠন পিপল ফর অ্যানিম্যালস (পিএফএ)-এর প্রতিনিধি সৌরভ গুপ্তা বলেন, “এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, পশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সময় এসেছে।
আমরা আশা করি, এই মামলা অন্যদের জন্য উদাহরণ হবে।”পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত অফিসারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, এবং ভিডিও ফুটেজ সহ অন্যান্য প্রমাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে। ঘটনার সময় উপস্থিত সাক্ষীদের বক্তব্যও রেকর্ড করা হবে। তবে, পশু কল্যাণ কর্মীরা অভিযোগ করেছেন যে, এই ঘটনার তদন্তে বিলম্বের কারণে প্রমাণ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তারা আরও বলেন, পুলিশের উচিত ছিল তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেওয়া, যাতে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা যায়।প্রিভেনশন অফ ক্রুয়েলটি টু অ্যানিম্যালস অ্যাক্ট, ১৯৬০-এর অধীনে পশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতার জন্য সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড এবং জরিমানার বিধান রয়েছে। তবে, এই আইনের প্রয়োগে প্রায়শই শৈথিল্য দেখা যায়, যা পশু কল্যাণ সংগঠনগুলির সমালোচনার কারণ।
স্থানীয় পশুপ্রেমী রিনা সিং বলেন, “এই ঘটনা আমাদের সমাজে পশুদের প্রতি সংবেদনশীলতার অভাব প্রকাশ করে। পুলিশের মতো দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের এই ধরনের কাজে জড়িত হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক।”
এই ঘটনা দিল্লিতে পশু কল্যাণ নিয়ে বিতর্ককে নতুন করে উসকে দিয়েছে। গত কয়েক বছরে রাস্তার কুকুরের উপর নিষ্ঠুরতার ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দা এবং পশু কল্যাণ সংগঠনগুলি কঠোর আইন প্রয়োগের দাবি জানিয়ে আসছে।
জাফরাবাদের বাসিন্দা রাকেশ কুমার বলেন, “রাস্তার কুকুরগুলি আমাদের সম্প্রদায়ের অংশ। তাদের প্রতি নিষ্ঠুরতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”দিল্লি পুলিশের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, তদন্ত চলছে এবং অভিযুক্ত অফিসারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে, তিনি এই ঘটনায় পুলিশের প্রাথমিক বিলম্ব নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
মোদির সফরের আগে বিজেপির রাজ্যে ঘরবদল, জোর কদমে সাজো সাজো রব
পশু কল্যাণ সংগঠনগুলি এই মামলার উপর নজর রাখছে এবং আশা করছে, এটি পশু নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী বার্তা দেবে।এই ঘটনা সমাজে পশু কল্যাণের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধির গুরুত্ব তুলে ধরেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা এবং পশুপ্রেমীরা আশা করছেন, এই মামলা আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে পশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে একটি উদাহরণ স্থাপন করবে।