ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনা (Indo-Pak Tensions) কমানোর আলোচনার সময় মার্কিন উপ-রাষ্ট্রপতি জেডি ভ্যান্সকে স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আলোচনার একমাত্র বিষয় হল পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীর (পিওকে) ফিরিয়ে আনা। সূত্রের খবর অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী মোদী কঠোরভাবে বলেছেন যে, পাকিস্তান যদি জঙ্গিদের হস্তান্তর নিয়ে কথা বলতে চায়, তবেই আলোচনা সম্ভব। “কাশ্মীর নিয়ে আমাদের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট। একটিমাত্র বিষয় বাকি আছে—পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীর ফিরিয়ে আনা। এর বাইরে আর কোনো বিষয়ে কথা বলার নেই। যদি তারা জঙ্গিদের হস্তান্তর নিয়ে কথা বলে, তাহলে আমরা আলোচনা করতে পারি। আমার অন্য কোনো বিষয়ে আলোচনার কোনো উদ্দেশ্য নেই,” মোদী ভ্যান্সকে বলেছেন বলে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রী এও স্পষ্ট করেছেন যে, ভারত এই বিষয়ে কোনো ধরনের মধ্যস্থতা চায় না। “আমরা কারো মধ্যস্থতা চাই না। আমাদের কোনো মধ্যস্থতার প্রয়োজন নেই,” তিনি বলেছেন।
এই বক্তব্য ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করেছে। সূত্রের খবর অনুযায়ী, পাকিস্তানের হামলার রাতেই ভারত পাকিস্তান জুড়ে ২৬টি স্থানে পাল্টা হামলা চালিয়েছে। এই ঘটনা চলমান সংঘাতে একটি উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয় এবং ভারত তার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞা প্রদর্শন করেছে। প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং পাকিস্তানের কাছে একটি স্পষ্ট বার্তা যে, ভারত সীমান্ত পেরিয়ে আসা হামলা সহ্য করবে না এবং এই ধরনের যেকোনো পদক্ষেপের জবাবে কঠোর শক্তি প্রয়োগ করবে।
অপারেশন সিঁদুর: নতুন স্বাভাবিকতার সূচনা
প্রধানমন্ত্রী মোদী জোর দিয়ে বলেছেন যে, ‘অপারেশন সিঁদুর’ এখনো শেষ হয়নি। তিনি বলেছেন, “আমরা একটি নতুন স্বাভাবিকতার মধ্যে রয়েছি। বিশ্বকে এটি মেনে নিতে হবে। পাকিস্তানকেও এটি মেনে নিতে হবে। এটি আর যথারীতি চলতে পারে না।” শনিবার, পাকিস্তানের ডিজিএমও (ডিরেক্টর জেনারেল অফ মিলিটারি অপারেশনস) দুপুর ১টায় আলোচনার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিল। কিন্তু ভারতের ডিজিএমও তখন একটি বৈঠকে ব্যস্ত থাকায় তিনি তখন কথা বলতে পারেননি। আলোচনা শুরু হয় বিকেল ৩:৩৫টায়। সূত্র জানায়, গোলাগুলি বন্ধের শর্ত নিয়ে যা কিছু ঘটেছে, তা দুই দেশের ডিজিএমওদের মধ্যে হয়েছে।
এই ঘটনা ভারতের সীমান্তে সন্ত্রাসবাদ এবং উস্কানি মোকাবিলার ক্ষেত্রে আরও সক্রিয় এবং দৃঢ় কৌশলের দিকে অগ্রসর হওয়ার ইঙ্গিত দেয়। প্রধানমন্ত্রী মোদীর বক্তব্যে জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়ে কোনো ধরনের আপস করার জায়গা নেই বলে স্পষ্ট হয়েছে।
ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার প্রেক্ষাপট
ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরে কাশ্মীর ইস্যুকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত। গত এপ্রিল মাসে জম্মু ও কাশ্মীরের পাহালগামে একটি জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিরীহ মানুষ নিহত হয়। এই হামলার জন্য লস্কর-ই-তৈয়বার সঙ্গে যুক্ত দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) দায় স্বীকার করেছিল। এই ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবে ভারত ৭ মে ‘অপারেশন সিঁদুর’ শুরু করে এবং পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে জঙ্গি অবকাঠামোর উপর বিমান হামলা চালায়। এই হামলায় জৈশ-ই-মোহাম্মদ এবং লস্কর-ই-তৈয়বার মতো জঙ্গি সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি ধ্বংস করা হয়।
পাকিস্তান এই হামলার জবাবে ৮ ও ৯ মে রাতে ভারতের পশ্চিম সীমান্তে ড্রোন এবং অন্যান্য অস্ত্র ব্যবহার করে একাধিক হামলা চালায়। ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং বিমানবাহিনী আকাশ মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে এই হামলা প্রতিহত করে। এই ঘটনার পর উভয় দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে।
আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতার প্রস্তাব ও ভারতের অবস্থান
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই উত্তেজনা কমানোর জন্য মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে। মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং উপ-রাষ্ট্রপতি জেডি ভ্যান্স ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। ট্রাম্প দাবি করেছেন যে, মার্কিন মধ্যস্থতায় শনিবার একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। তবে, ভারত স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে, এই চুক্তি দুই দেশের মধ্যে সরাসরি আলোচনার ফলাফল, এবং এতে মার্কিন মধ্যস্থতার কোনো ভূমিকা ছিল না।
সৌদি আরব এবং ইরানও এই সংকটে মধ্যস্থতার চেষ্টা করেছে। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্প্রতি ভারতে এসেছেন, এবং ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাকিস্তানে গিয়েছেন। তবে, প্রধানমন্ত্রী মোদীর স্পষ্ট বক্তব্যের পর এটি স্পষ্ট যে, ভারত কাশ্মীর ইস্যুতে কোনো তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ চায় না।
ভারতের কৌশলগত পরিবর্তন
প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে ভারত সীমান্তে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় একটি আরও আক্রমণাত্মক এবং দৃঢ় নীতি গ্রহণ করেছে। ‘অপারেশন সিঁদুর’ এর মাধ্যমে ভারত জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করেছে এবং পাকিস্তানকে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের অবস্থান অত্যন্ত কঠোর। প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছেন, “আমরা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেব, তা সীমান্তের এপারে হোক বা ওপারে।”
এই ঘটনা ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা নীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। ভারত এখন আর পাকিস্তানের উস্কানির প্যাসিভ প্রতিক্রিয়া দেবে না, বরং সক্রিয়ভাবে পাল্টা হামলা চালিয়ে নিজের শক্তি প্রদর্শন করবে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এই স্পষ্ট এবং দৃঢ় বক্তব্য ভারতের কাশ্মীর নীতি এবং পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীর ফিরিয়ে আনা এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের উপর জোর দিয়ে ভারত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। এই পরিস্থিতিতে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের ভবিষ্যৎ এবং কাশ্মীর ইস্যুর সমাধান কীভাবে এগিয়ে যাবে, তা নিয়ে সারা বিশ্বের দৃষ্টি এখন দুই দেশের দিকে।