প্রধানমন্ত্রী (PM) নরেন্দ্র মোদী আগামী ২ থেকে ৯ জুলাই, ২০২৫ পর্যন্ত পাঁচ দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সফরে যাচ্ছেন। এই সফরে তিনি ঘানা, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল এবং নামিবিয়া সফর করবেন। এই সফরের মাধ্যমে ভারতের বৈশ্বিক সম্পর্ক জোরদার করা এবং গ্লোবাল সাউথের দেশগুলির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নত করার লক্ষ্য নিয়েছে ভারত।
বিশেষ করে ত্রিনিদাদ ও টোবাগো সফর নিয়ে ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব (দক্ষিণ) নীনা মালহোত্রা বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রী মোদী (PM) ৩-৪ জুলাই, ২০২৫ তারিখে ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর প্রধানমন্ত্রী কমলা পার্সাদ-বিসেসারের আমন্ত্রণে একটি আনুষ্ঠানিক সফরে যাবেন। এটি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর প্রথম ত্রিনিদাদ ও টোবাগো সফর এবং ১৯৯৯ সালের পর ভারতের কোনো প্রধানমন্ত্রীর প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর।
এই বছর, ২০২৫ সালে, ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে ভারতীয় অভিবাসীদের আগমনের ১৮০ বছর পূর্তি উদযাপনের সময়ে এই সফর বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। বর্তমানে ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী উভয়ই ভারতীয় বংশোদ্ভূত, উভয়ই মহিলা, উভয়ই আইনজীবী এবং উভয়ই তাদের ভারতীয় শিকড় ও ঐতিহ্যের প্রতি গভীর গর্ববোধ করেন এবং নিজেদের ভারতের কন্যা হিসেবে বর্ণনা করেন।”
সফরের প্রথম পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী (PM) ২-৩ জুলাই ঘানায় সফর করবেন। এটি তাঁর প্রথম ঘানা সফর এবং তিন দশকের মধ্যে ভারতের কোনো প্রধানমন্ত্রীর প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর। ঘানার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করা এবং অর্থনৈতিক, জ্বালানি, প্রতিরক্ষা এবং উন্নয়ন সহযোগিতার ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা হবে। এই সফর ভারতের পশ্চিম আফ্রিকার অর্থনৈতিক সম্প্রদায় (ইকোবাস) এবং আফ্রিকান ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করবে।
ত্রিনিদাদ ও টোবাগো সফরে প্রধানমন্ত্রী মোদী (PM) দেশটির রাষ্ট্রপতি ক্রিস্টিন কার্লা কাঙ্গালু এবং প্রধানমন্ত্রী কমলা পার্সাদ-বিসেসারের সঙ্গে আলোচনা করবেন। তিনি ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর পার্লামেন্টে যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। এই সফর ভারত এবং ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর মধ্যে গভীর ঐতিহাসিক সম্পর্ককে নতুন গতি দেবে।
২০২৫ সালে ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে ভারতীয় অভিবাসীদের আগমনের ১৮০ বছর পূর্তি উদযাপনের এই সময়ে এই সফর বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে ৪০-৪৫% জনসংখ্যা ভারতীয় বংশোদ্ভূত, যা ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে ভারতীয় বংশোদ্ভূত জনগোষ্ঠীর মধ্যে সর্ববৃহৎ। ভারত এই দেশে ইউপিআই প্ল্যাটফর্ম বাস্তবায়ন এবং কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহের মাধ্যমে উন্নয়ন সহযোগিতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
তৃতীয় পর্যায়ে, প্রধানমন্ত্রী মোদী ৪-৫ জুলাই আর্জেন্টিনায় সফর করবেন। আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রপতি হাভিয়ের মিলেই-এর সঙ্গে তিনি দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করবেন, যেখানে প্রতিরক্ষা, কৃষি, খনি, তেল ও গ্যাস, পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি এবং বাণিজ্য সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হবে। এই সফর ভারত-আর্জেন্টিনার বহুমুখী কৌশলগত অংশীদারিত্বকে আরও গভীর করবে।
চতুর্থ পর্যায়ে, প্রধানমন্ত্রী ৫-৮ জুলাই ব্রাজিলে যাবেন। তিনি রিও ডি জেনেইরোতে ১৭তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেবেন এবং ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার আমন্ত্রণে একটি রাষ্ট্রীয় সফর করবেন।
ব্রিকস (PM) সম্মেলনে তিনি বৈশ্বিক শাসন সংস্কার, শান্তি, নিরাপত্তা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দায়িত্বশীল ব্যবহার, জলবায়ু পদক্ষেপ এবং অর্থনৈতিক বিষয়ে মতবিনিময় করবেন। ব্রাসিলিয়ায় তিনি রাষ্ট্রপতি লুলার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করবেন, যেখানে বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, জ্বালানি, মহাকাশ, প্রযুক্তি এবং জনগণের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা হবে।
সফরের শেষ পর্যায়ে, প্রধানমন্ত্রী মোদী (PM) ৯ জুলাই নামিবিয়ায় যাবেন। এটি তাঁর প্রথম নামিবিয়া সফর এবং ভারতের তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এই দেশে সফর। তিনি নামিবিয়ার রাষ্ট্রপতি ড. নেতুম্বো নান্দি-এনদাইতওয়াহর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করবেন এবং নামিবিয়ার প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি ড. স্যাম নুজোমার প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।
তিনি নামিবিয়ার পার্লামেন্টে ভাষণ দেবেন। ভারত এবং নামিবিয়ার মধ্যে বাণিজ্য ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে এবং ভারতীয় সংস্থাগুলি খনি, উৎপাদন এবং হীরা প্রক্রিয়াকরণে ৮০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে।
নীনা মালহোত্রা জানিয়েছেন, ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর এই সফর ভারতীয় ডায়াস্পোরার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করবে। তিনি বলেন, “দুই দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক এবং পারিবারিক বন্ধন রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কমলা পার্সাদ-বিসেসারের নির্বাচনী জয়ের জন্য ইতিমধ্যে অভিনন্দন জানিয়েছেন।” এই সফর ভারতের গ্লোবাল সাউথের দেশগুলির সঙ্গে অংশীদারিত্বের (PM) প্রতিশ্রুতি পুনরায় নিশ্চিত করবে।
এই সফর ভারতের কূটনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং গ্লোবাল সাউথের প্রতি প্রতিশ্রুতিকে প্রতিফলিত করে। আগামী দিনে এই সফর কীভাবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যায়, তা বিশ্ব রাজনীতির ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠবে।