সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত হতে চলা জাতিসংঘের সাধারণ সভা (UNGA) নিয়ে ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে জল্পনা তুঙ্গে। এই বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর (PM Narendra Modi) যোগদান এখনও নিশ্চিত হয়নি। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত একাধিক সূত্র জানিয়েছে, নিউ ইয়র্কে অধিবেশন শুরুর কাছাকাছি সময়েই মোদীর সফর সংক্রান্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ভাষণ দেওয়ার জন্য প্রত্যাশিত রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের অস্থায়ী তালিকায় নরেন্দ্র মোদীর নাম অন্তর্ভুক্ত থাকায় সম্ভাবনার দরজা খোলা রেখেছে। তালিকা অনুসারে, মোদীর বক্তব্য ২৬ সেপ্টেম্বর সকালে হওয়ার কথা। সাধারণ সভার উচ্চ-স্তরের বিতর্ক (High-Level Debate) ২৩ সেপ্টেম্বর শুরু হবে এবং ২৯ সেপ্টেম্বর শেষ হবে। জানা গেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ২৩ সেপ্টেম্বর বক্তব্য রাখবেন, এবং তারপরই কয়েক দিনের ব্যবধানে প্রধানমন্ত্রী মোদীর বক্তব্য হতে পারে।
তবে, বিদেশ মন্ত্রকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের সাধারণ সভায় যাবেন কি না, তা এখনও নির্ধারিত হয়নি। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই ধরণের সফরের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।” সাধারণত আগস্ট মাসে জাতিসংঘ বক্তাদের একটি অস্থায়ী তালিকা প্রস্তুত করে, যেখানে রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধানদের নাম অগ্রাধিকার ভিত্তিতে থাকে। কিন্তু এই তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও সফর বাতিল বা প্রতিনিধি পরিবর্তনের নজিরও রয়েছে।
এই জল্পনার আরও একটি বড় উৎস ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সাম্প্রতিক মন্তব্য। সোমবার নরেন্দ্র মোদীর সাথে ফোনালাপের পর জেলেনস্কি সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি করেন, সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ সভার সময় দুই নেতার মুখোমুখি বৈঠকের পরিকল্পনা রয়েছে। এতে মোদীর সম্ভাব্য মার্কিন সফর নিয়ে কূটনৈতিক মহলে আলোচনার তাপমাত্রা বেড়ে যায়।
কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি মোদী সত্যিই নিউ ইয়র্ক সফরে যান, তাহলে তাঁর সঙ্গে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠকও হতে পারে, যা বর্তমানে মার্কিন রাজনীতির প্রেক্ষাপটে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। তবে এই সম্ভাবনার মাঝেই ভারত-মার্কিন বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়ে টানাপোড়েন প্রকট। বিশেষ করে, ট্রাম্প প্রশাসন ভারতীয় পণ্যের উপর ২৫% পারস্পরিক শুল্ক আরোপ করার পাশাপাশি রাশিয়া থেকে তেল আমদানির জন্য ভারতের উপর আরও ২৫% জরিমানা চাপায়। এই সিদ্ধান্ত দুই দেশের সম্পর্কে শীতলতা নিয়ে আসে।
ভারত সরকার আপাতত কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করছে। একদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার প্রয়োজন রয়েছে, অন্যদিকে রাশিয়ার সঙ্গে ঐতিহাসিক ও কৌশলগত বন্ধুত্বও ধরে রাখতে হবে। এই পরিস্থিতিতে, প্রধানমন্ত্রী মোদীর জাতিসংঘ সফর নিয়ে সিদ্ধান্ত অনেকটাই নির্ভর করবে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক আলোচনার অগ্রগতির উপর।
জাতিসংঘের সাধারণ সভার অধিবেশন প্রতি বছর বিশ্ব নেতাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক মঞ্চ হিসেবে বিবেচিত হয়। এখানে বিশ্বশান্তি, বাণিজ্য, নিরাপত্তা এবং জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনায় আসে। মোদীর উপস্থিতি হলে ভারত বৈশ্বিক মঞ্চে তার অবস্থান আরও জোরালোভাবে তুলে ধরতে পারবে। তবে, বর্তমান অনিশ্চয়তার কারণে এখনও নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না, সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে নিউ ইয়র্কের এই বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে দেখা যাবে কি না।