প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত মোদী, শাহ, সনিয়া-রাহুল

ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিংয়ের(Manmohan Singh) প্রয়াণ দেশের জন্য একটি অপূরণীয় ক্ষতি। তাঁর মৃত্যুতে রাজনৈতিক, সামাজিক, এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে গভীর শোকের ছায়া পড়েছে। তাঁর…

pm-narendra-modi-pays-last-respect-at-manmohan-singhs-residence

ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিংয়ের(Manmohan Singh) প্রয়াণ দেশের জন্য একটি অপূরণীয় ক্ষতি। তাঁর মৃত্যুতে রাজনৈতিক, সামাজিক, এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে গভীর শোকের ছায়া পড়েছে। তাঁর (Manmohan Singh)  মৃত্যু শুধু ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের অবসান নয়, বরং দেশের জনগণের জন্য এক গভীর শোকের মুহূর্ত।

মনমোহন সিংয়ের (Manmohan Singh) প্রয়াণে একে একে রাজনৈতিক নেতারা তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসেন। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ মনমোহন সিংয়ের(Manmohan Singh)  মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, “ডঃ মনমোহন সিংয়ের (Manmohan Singh) প্রয়াণ শুধু দেশের জন্য ধাক্কা নয়, আমার ব্যক্তিগত ক্ষতিও। আমি তাঁকে দীর্ঘদিন ধরে চিনতাম এবং তিনি ছিলেন নম্রতার এক অনন্য উদাহরণ।”

   

এই শোকের মধ্যে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে (Manmohan Singh) শেষ শ্রদ্ধা জানাতে শুক্রবার সকালে নয়াদিল্লির মোতীলাল নেহেরু মার্গে পৌঁছান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। পরে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জেপি নড্ডাও মনমোহনের (Manmohan Singh) বাড়িতে এসে প্রণাম করে শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত হন। এর পাশাপাশি, কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গান্ধী এবং কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও মনমোহন সিংয়ের বাড়িতে গিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এমনকি, রাজনীতির পার্থক্য ভুলে শাসক এবং বিরোধী দলের নেতারা একত্রিত হয়ে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর (Manmohan Singh) প্রতি শ্রদ্ধা জানান। কংগ্রেস সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের শেষকৃত্য পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত হবে।

ডঃ মনমোহন সিংয়ের(Manmohan Singh)  রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি ভারতীয় রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। ২০০৪ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং তাঁর নেতৃত্বে ভারত বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়া অর্থনীতিতে পরিণত হয়। তিনি অর্থনৈতিক সংস্কারের অন্যতম পথপ্রদর্শক ছিলেন, যার ফলে ভারতের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি উন্নত হতে শুরু করে।

তিনি ছিলেন একজন দক্ষ অর্থনীতিবিদ এবং বহু আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণকারী ব্যক্তিত্ব। তাঁর নীতি, সিদ্ধান্ত এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষ করে ভারত-আমেরিকা সম্পর্কের ক্ষেত্রে তাঁকে এক অনন্য জায়গায় দাঁড় করিয়েছে।

মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বে ভারত বিশ্ব অর্থনীতির মঞ্চে একটি শক্তিশালী উপস্থিতি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল। তাঁর সময়কালে ভারতের অর্থনীতি ব্যাপকভাবে সংস্কারিত হয় এবং দেশটি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও একে শক্তিশালী অবস্থানে দাঁড় করায়। তাঁর নেতৃত্বে ভারতের অর্থনীতি এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছিল এবং সামাজিক দিক থেকেও অনেক উন্নতি সাধিত হয়েছিল।

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর কনিষ্ঠা কন্যা, যিনি ক্যালিফোর্নিয়ায় স্ট্যানফোর্ড ল’ স্কুলের অধ্যাপক, তিনি শুক্রবার বিকেলে দেশে ফিরবেন। তাঁর ফিরে আসার পর, শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) মনমোহন সিংয়ের শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে। কংগ্রেসের সদর দফতরে তাঁর অস্থি নিয়ে যাওয়া হবে, এবং সেখানে সাধারণ জনগণও তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন।

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার মনমোহন সিংয়ের প্রয়াণে সাত দিন জাতীয় শোক ঘোষণা করেছে। এই শোকের সময়, দেশের সর্বত্র জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে এবং সরকারি স্তরে কোনও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে না। ২৬ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত এই শোকের সময়কাল নির্ধারিত হয়েছে।

মনমোহন সিংয়ের মৃত্যুতে শুধু রাজনৈতিক নেতারা নয়, দেশের সাধারণ জনগণও গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তাঁর মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকেই সামাজিক মিডিয়া এবং সংবাদ মাধ্যমে একাধিক শোকবার্তা ও স্মরণমূলক পোষ্ট দেখানো হচ্ছে। ভারতের নানা প্রান্তে মানুষ তাঁকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন, এবং তাঁকে এক বিশিষ্ট নেতারূপে স্মরণ করছে।

ডঃ মনমোহন সিং ছিলেন একজন নিরহংকারী, নম্র এবং কঠোর পরিশ্রমী নেতা, যিনি দেশের উন্নতির জন্য সারা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তাঁর মৃত্যু দেশের জন্য এক বড় ক্ষতি, কিন্তু তাঁর অবদান ও স্মৃতি চিরকাল আমাদের প্রেরণা দেবে।