কাশ্মীরে জঙ্গি হামলার জেরে সৌদি সফর সংক্ষিপ্ত করছেন প্রধানমন্ত্রী

জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে সংঘটিত এক ভয়াবহ জঙ্গি হামলার (Pahalgam attack) পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) তাঁর সৌদি আরব সফর সংক্ষিপ্ত করে আজ রাতেই…

PM Narendra Modi Cuts Short Saudi Trip After Deadly Kashmir Terror Attack

জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে সংঘটিত এক ভয়াবহ জঙ্গি হামলার (Pahalgam attack) পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) তাঁর সৌদি আরব সফর সংক্ষিপ্ত করে আজ রাতেই ভারতে ফিরে আসছেন বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে। এই হামলায় ২৬ জনের প্রাণহানি হয়েছে, যা কর্তৃপক্ষের মতে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বেসামরিক নাগরিকদের উপর সবচেয়ে মারাত্মক আক্রমণ। সরকারি সূত্রের মতে, প্রধানমন্ত্রী মোদী, যিনি মঙ্গলবার জেদ্দায় দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে পৌঁছেছিলেন, সৌদি আরবে আয়োজিত সরকারি নৈশভোজ এড়িয়ে আজ রাতেই ভারতের উদ্দেশে রওনা দেবেন। তিনি মূলত বুধবার রাতে ফেরার কথা ছিল, কিন্তু এখন তিনি বুধবার ভোরে ভারতে পৌঁছাবেন।

হামলার বিবরণ

মঙ্গলবার দুপুর আনুমানিক ২:৩০টায় পহেলগামের বাইসারান উপত্যকায়, যা তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য ‘মিনি সুইৎজারল্যান্ড’ নামে পরিচিত, জঙ্গিরা পর্যটকদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এই অঞ্চলটি শ্রীনগর থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। জঙ্গিরা, যারা সামরিক পোশাক পরিহিত ছিল, পর্যটকদের উপর অন্ধভাবে গুলি চালায়, যারা খাবারের দোকানে সময় কাটাচ্ছিল, পনিতে চড়ছিল বা পিকনিক উপভোগ করছিল। হামলায় দুজন বিদেশি নাগরিকসহ ২৬ জন নিহত এবং অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ), যা নিষিদ্ধ পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈবার একটি প্রক্সি গোষ্ঠী, এই হামলার দায় স্বীকার করেছে।

   

প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া

হামলার খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন এবং তাঁকে জম্মু ও কাশ্মীরে পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য সেখানে যাওয়ার নির্দেশ দেন। মোদী এক্স-এ একটি পোস্টে বলেন, “আমি পহেলগাম, জম্মু ও কাশ্মীরে জঙ্গি হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। যারা এই জঘন্য কাজের পিছনে রয়েছে, তাদের ছাড়া হবে না। তাদের মন্দ উদ্দেশ্য কখনই সফল হবে না। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের সংকল্প অটুট এবং এটি আরও শক্তিশালী হবে।” তিনি নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।

অমিত শাহের পদক্ষেপ

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মঙ্গলবার রাত ৯টার কিছু পরে শ্রীনগরে পৌঁছান এবং বিমানবন্দর থেকে সরাসরি রাজভবনে যান। জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের মহাপরিচালক নলিন প্রভাত তাঁকে পরিস্থিতি সম্পর্কে ব্রিফ করেন। এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা, মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব গোবিন্দ মোহন এবং গোয়েন্দা ব্যুরোর পরিচালক তপন ডেকা। শাহ দিল্লিতে একটি উচ্চ-পর্যায়ের জরুরি বৈঠকের পর শ্রীনগরের উদ্দেশে রওনা দেন, যেখানে তিনি সিআরপিএফ, বিএসএফ এবং সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন। তিনি বলেন, “এই হামলার জন্য দায়ীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। আমরা তাদের উপর কঠোরতম পরিণতি চাপিয়ে দেব।”

মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহর বিবৃতি

জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ এই হামলাকে ‘অত্যন্ত বড়’ এবং ‘অভিশপ্ত’ বলে নিন্দা করেছেন। তিনি বলেন, “আমি এই হামলায় হতবাক। আমাদের অতিথিদের উপর এই আক্রমণ একটি জঘন্য কাজ। এই হামলার কারিগররা পশু, অমানবিক এবং নিন্দার যোগ্য। কোনো নিন্দার শব্দই এর জন্য যথেষ্ট নয়।” তিনি মৃত্যুর সংখ্যা এখনও নিশ্চিত করা হচ্ছে বলে জানান এবং এটিকে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বেসামরিক নাগরিকদের উপর সবচেয়ে বড় হামলা হিসেবে বর্ণনা করেন।

Advertisements

নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও তদন্ত

হামলার পরপরই নিরাপত্তা বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে বাইসারান উপত্যকা ঘিরে ফেলে। এই অঞ্চলটি পায়ে হেঁটে বা পনির মাধ্যমে প্রবেশযোগ্য, যা উদ্ধার কাজকে জটিল করে তুলেছে। স্থানীয়রা পনির মাধ্যমে আহতদের উপত্যকা থেকে নামিয়ে আনে, এবং একটি হেলিকপ্টার উদ্ধার অভিযানে ব্যবহৃত হয়। পহেলগাম হাসপাতালে ১২ জন আহত পর্যটক ভর্তি হয়েছেন, এবং চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাঁদের অবস্থা স্থিতিশীল। জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) বুধবার পহেলগামে পৌঁছে তদন্ত শুরু করবে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, হামলাকারীরা সম্ভবত কিশতওয়ার থেকে কোকেরনাগ হয়ে বাইসারানে প্রবেশ করেছিল, যা অনুপ্রবেশের নতুন পথ নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রধানমন্ত্রী মোদীর কাছে সমবেদনা জানিয়ে বলেন, “এই নৃশংস অপরাধের কোনো ন্যায্যতা নেই।” তিনি হামলার সংগঠক এবং কার্যকরীদের শাস্তির দাবি জানান এবং ভারতের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সহযোগিতা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও এক্স-এ পোস্ট করে বলেন, “কাশ্মীর থেকে আসা বিরক্তিকর খবর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছে।”

এই হামলা কাশ্মীরের পর্যটন শিল্পের জন্য বড় ধাক্কা, বিশেষ করে ৩ জুলাই থেকে শুরু হতে যাওয়া অমরনাথ যাত্রার আগে। ২০২৪ সালে কাশ্মীরে প্রায় ৩৫ লক্ষ পর্যটক এসেছিলেন, এবং পহেলগাম ছিল তাঁদের অন্যতম পছন্দের গন্তব্য। এই ঘটনা পর্যটকদের মধ্যে ভয়ের সঞ্চার করতে পারে এবং অঞ্চলের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। স্থানীয় নেতারা এই হামলাকে কাশ্মীরের আতিথেয়তা এবং জীবিকার বিরুদ্ধে আঘাত হিসেবে দেখছেন। সরকার এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে এখন কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই দ্রুত প্রতিক্রিয়া এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহের সরাসরি হস্তক্ষেপ ভারতের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শূন্য-সহনশীলতার নীতির প্রতিফলন। এই হামলার তদন্ত এবং পরবর্তী পদক্ষেপ কাশ্মীরের নিরাপত্তা পরিস্থিতির উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলবে।