প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রথমবার নাগপুরে মোদী, ভাগবতের সঙ্গে বৈঠক

৩০ মার্চ নাগপুরে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (RSS) সদর দফতরে প্রথমবারের মতো সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রিত্ব গ্রহণের পর এটাই হবে তার প্রথম নাগপুর সফর…

Modi with RSS Chief Mohan Bhagwat

৩০ মার্চ নাগপুরে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (RSS) সদর দফতরে প্রথমবারের মতো সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রিত্ব গ্রহণের পর এটাই হবে তার প্রথম নাগপুর সফর এবং সংঘপ্রধান মোহন ভাগবতের সঙ্গে সরাসরি একান্ত বৈঠক। বিজেপির পরবর্তী সভাপতি নির্বাচন ও আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে এই বৈঠক বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

মোদীর নাগপুর সফর: কী গুরুত্ব?
নাগপুরকে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের আদর্শগত রাজধানী বলা হয়। RSS-এর সদর দফতর এখানেই অবস্থিত এবং সংঘের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলির বেশিরভাগই এখান থেকেই নেওয়া হয়। মোদীর এই সফরের মাধ্যমে স্পষ্ট যে, বিজেপির ভবিষ্যৎ কৌশল নির্ধারণে RSS-এর ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর বিজেপির পরবর্তী সভাপতি নির্বাচন এবং সংঘের ভূমিকা নিয়ে এই বৈঠক অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হতে পারে।

   

মোহন ভাগবতের সঙ্গে মোদীর বৈঠক: সম্ভাব্য আলোচনার বিষয়বস্তু
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং RSS প্রধান মোহন ভাগবতের মধ্যে এই একান্ত বৈঠকে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক বিষয় আলোচিত হতে পারে—
1. বিজেপির পরবর্তী সভাপতি নির্বাচন: জে.পি. নাড্ডার মেয়াদ শেষের পথে। নতুন সভাপতি নির্বাচনে সংঘের মতামত গুরুত্বপূর্ণ।
2. লোকসভা নির্বাচনের কৌশল: ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিজেপির জয়ের রণকৌশল চূড়ান্ত করতে RSS-এর পরামর্শ নেওয়া হতে পারে।
3. সংঘের ভূমিকা: নির্বাচনী প্রচারে RSS-এর ভূমিকা কতটা থাকবে এবং তারা কীভাবে বিজেপিকে সহায়তা করবে, তা নিয়েও আলোচনা হতে পারে।
4. হিন্দুত্ব এবং ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতি: সাম্প্রতিককালে বিজেপি হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির উপর বেশি জোর দিচ্ছে। রাম মন্দির উদ্বোধনের পর হিন্দু ভোটকে আরও দৃঢ় করার জন্য RSS কীভাবে সহায়তা করতে পারে, সেটাও আলোচনার বিষয় হতে পারে।
5. মোদীর উত্তরসূরি নিয়ে আলোচনা?: ২০২৯ সালের পর মোদীর ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিকল্পনা এবং তার উত্তরসূরী নিয়ে RSS-এর মতামত নিয়েও আলোচনা হতে পারে।

বিজেপির সভাপতি নির্বাচন: RSS-এর ভূমিকা
বিজেপি এবং RSS-এর সম্পর্ক বরাবরই গভীর। যদিও বিজেপি রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বাধীন, কিন্তু RSS তার আদর্শিক স্তম্ভ। তাই দলের সভাপতি নির্বাচনেও সংঘের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে।
বর্তমান সভাপতি জগৎ প্রকাশ নাড্ডা-র মেয়াদ শেষের পথে এবং বিজেপির নতুন সভাপতির নাম শীঘ্রই ঘোষণা করা হবে। সংঘের অনুমোদন ছাড়া এই নির্বাচন সম্ভব নয়। সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে—
অমিত শাহ (প্রাক্তন সভাপতি, বর্তমানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী)
ভূপেন্দ্র যাদব (সাংগঠনিক দক্ষতায় পারদর্শী)
ধর্মেন্দ্র প্রধান (RSS-এর ঘনিষ্ঠ)
এদের নাম উঠে আসতে পারে। তবে শেষ সিদ্ধান্ত মোদী-ভাগবতের আলোচনার পরই হবে।

মোদীর সফরের রাজনৈতিক বার্তা
এই সফর এবং বৈঠকের মাধ্যমে মোদী একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিতে চাইছেন—
1. সংঘের সঙ্গে তার সম্পর্ক দৃঢ়: প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সংঘের সদর দফতরে তার প্রথম সফর দেখিয়ে দিচ্ছে যে, তিনি RSS-এর প্রতি এখনও দায়বদ্ধ।
2. ভোটের আগে হিন্দু ভোট একত্রিত করা: মোদী চাইছেন, RSS পুরো শক্তি দিয়ে নির্বাচনে বিজেপির প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়ুক, যাতে হিন্দু ভোট একত্রিত থাকে।
3. বিজেপির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব ঠিক করা: সভাপতি নির্বাচন নিয়ে সংঘের মতামত নেওয়া এবং দলীয় সাংগঠনিক কাঠামো মজবুত করাই প্রধান লক্ষ্য।

নাগপুরে মোদীর এই সফর এবং সংঘপ্রধান মোহন ভাগবতের সঙ্গে একান্ত বৈঠক শুধুমাত্র সৌজন্য সাক্ষাৎ নয়। এর মাধ্যমে বিজেপির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব, নির্বাচনী কৌশল এবং সংঘের ভূমিকা আরও স্পষ্ট হতে চলেছে। আসন্ন লোকসভা নির্বাচন ও বিজেপির সাংগঠনিক পরিবর্তনের আগে এই বৈঠক বড় রাজনৈতিক বার্তা বহন করছে। এখন দেখার, RSS কীভাবে বিজেপিকে সমর্থন করে এবং পরবর্তী সভাপতি নির্বাচনে সংঘের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।