বিধানসভা ভবনের উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী

রায়পুর: ১ নভেম্বর ছত্তিশগড় রাজ্যের ইতিহাসে এক বিশেষ অধ্যায় রচিত হতে চলেছে। রাজ্যের প্রতিষ্ঠার ২৫তম বর্ষপূর্তিতে (Chhattisgarh Foundation Day 2025) নয়া রায়পুরে নবনির্মিত ছত্তিশগড় বিধানসভা ভবনের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য এবং বিশিষ্ট আমন্ত্রিত অতিথিরা।

Advertisements

২০০০ সালের ১ নভেম্বর মধ্যপ্রদেশ থেকে পৃথক হয়ে জন্ম নেয় ছত্তিশগড় ভারতের ২৬তম রাজ্য হিসেবে। সেই সময় রাজ্যের প্রথম বিধানসভা অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছিল রায়পুরের রাজকুমার কলেজ প্রাঙ্গণে, একটি অস্থায়ী তাঁবুর মধ্যে। তখন থেকেই রাজ্যের নিজস্ব স্থায়ী বিধানসভা ভবনের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছিল। অবশেষে ২৫ বছর পর নয়া রায়পুরে তৈরি হল অত্যাধুনিক, পরিবেশবান্ধব এবং ঐতিহ্যনির্ভর স্থাপত্যে গড়া নতুন বিধানসভা ভবন।

   

নয়া রায়পুরের সেক্টর ১৯-এ ৫২ একর জমির উপর নির্মিত এই বিধানসভা কমপ্লেক্সের খরচ হয়েছে ৩২৪ কোটি টাকা। এই ভবনের নকশায় একদিকে যেমন আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া, অন্যদিকে ছত্তিশগড়ের ঐতিহ্যবাহী শিল্প ও সংস্কৃতির প্রতিফলন। ভবনের অভ্যন্তরে বাস্তার ও সুরগুজা জেলার আদিবাসী শিল্পকলার প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। বাইরের স্থাপত্য রাষ্ট্রপতি ভবনের আদলে তৈরি, আর ভিতরে বিশাল গম্বুজটি রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী রাজপ্রাসাদের অনুপ্রেরণায় নির্মিত।

ভবনটি তিনটি প্রধান অংশে বিভক্ত বিধানসভা ভবন, সচিবালয় এবং কেন্দ্রীয় হল। রয়েছে পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থা, যেমন সোলার প্যানেল ও রেইনওয়াটার হারভেস্টিং। ভবনের ভেতরে একসঙ্গে ৭০০টিরও বেশি গাড়ি রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে মিডিয়া লাউঞ্জ, অডিটোরিয়াম, শিল্পকলা গ্যালারি, ক্যান্টিন এবং তিনটি আধুনিক মিটিং হল।

বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, নতুন বিধানসভায় পুরুষ, মহিলা, প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যদের জন্য আলাদা আলাদা সুবিধা রাখা হয়েছে। নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যসেবার জন্য তিনটি পৃথক মেডিক্যাল ইউনিটও স্থাপন করা হয়েছে।

Advertisements

প্রবেশদ্বারে স্থাপন করা হয়েছে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর মূর্তি—যাঁর নেতৃত্বে ২০০০ সালে ছত্তিশগড় রাজ্য গঠিত হয়েছিল। রাজ্যের মানুষ এই মূর্তিকে “ছত্তিশগড় গঠনের প্রেরণার প্রতীক” হিসেবে দেখছেন।

নতুন বিধানসভা ভবনে বর্তমানে ৯০ জন বিধায়ক বসবেন, তবে ভবিষ্যতে সদস্য সংখ্যা ১২০ জন পর্যন্ত বাড়ানোর সম্ভাবনা মাথায় রেখে বাড়তি জায়গা রাখা হয়েছে। এই প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়েছিল ২০২০ সালের ২৮ আগস্ট, কংগ্রেস সরকারের আমলে। সেই সময়ে ভার্চুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন সোনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধী।

রাজ্যের সংস্কৃতি ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ভবনের ভেতরে একটি জাদুঘর গড়ে তুলছে, যেখানে ছত্তিশগড়ের গত ২৫ বছরের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের ইতিহাস প্রদর্শিত হবে। সঙ্গে থাকবে উপজাতি সংস্কৃতি, হস্তশিল্প ও লোককলা বিষয়ক প্রদর্শনীও।

ছত্তিশগড়ের এই নতুন বিধানসভা ভবন শুধু একটি স্থাপত্য নয়, বরং রাজ্যের ২৫ বছরের উন্নয়নযাত্রার এক প্রতীক। আধুনিক প্রযুক্তি, ঐতিহ্য ও পরিবেশ সচেতনতার মেলবন্ধনে এই ভবন ভারতের প্রশাসনিক স্থাপত্যে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।