বিহার বিধানসভা নির্বাচনে (Bihar Assembly Election 2025) এনডিএ–র ঐতিহাসিক জয়ের পর আজই জাতীয় রাজধানীর বিজেপি কার্যালয়ে কর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দুপুর থেকে দিল্লির দফতরের বাইরে উৎসবের আবহ সৃষ্টি হয়েছে। ভোটের ফলাফলে এনডিএর দাপুটে লিড এবং বিজেপি–জেডিইউ জোটের সুস্পষ্ট সাফল্যের পর প্রধানমন্ত্রী দলীয় কর্মীদের ধন্যবাদ জানাতে স্বশরীরে উপস্থিত থাকবেন।
২০২৫ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিহারের বাতাস এনডিএর পক্ষে স্পষ্টভাবেই বইছে। নির্বাচন কমিশনের দুপুর ১২:৫২-র তথ্য অনুযায়ী, এনডিএ মোট ১৯৭টি আসনে এগিয়ে। এর মধ্যে বিজেপি ৯০, জেডিইউ ৮০, এলজেপি ২০, হাম ৩ এবং আরএলএম ৪টি আসনে এগোচ্ছে। অন্যদিকে মহাজোটের মধ্যে আরজেডি ২৮, কংগ্রেস ৪, সিপিআই(এমএল) ৪ এবং সিপিএম ১টি আসনে এগিয়ে। এছাড়া এআইএমআইএম পাঁচটি এবং বিএসপি একটি আসনে এগোচ্ছে।
২০১০ সালে এনডিএ পেয়েছিল ২০৬ আসন। এই বছর সেই রেকর্ডও ভাঙতে পারে এটাই বর্তমান প্রবণতা। নীতীশ কুমারের দীর্ঘদিনের শাসন এবং তাঁর জোটবদলের রাজনীতি এই নির্বাচনে বড় পরীক্ষা ছিল। বহু ভোটারের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিলেও ফলাফলের প্রবণতা বলছে তাঁর শাসন, উন্নয়নমুখী সিদ্ধান্ত এবং প্রশাসনিক অভিজ্ঞতার ওপর জনগণের আস্থা বজায় রয়েছে।
ভোট প্রচারের সময় প্রধানমন্ত্রী মোদী ও মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের যুগলবন্দী এনডিএকে বিশেষভাবে শক্তিশালী করেছে। একদিকে মোদির সর্বভারতীয় জনপ্রিয়তা, অন্যদিকে নীতীশের বাস্তবমুখী সুশাসন এই দুইয়ের সমন্বয়ই ভোটারদের বড় অংশকে এনডিএ-র দিকে টেনেছে। উন্নয়ন প্রকল্প, রাস্তা-বিদ্যুৎ-জল সরবরাহ, সুরক্ষা প্রকল্প এবং বিভিন্ন সরকারি সহায়তা মানুষের কাছে ইতিবাচক বার্তা হিসেবে পৌঁছেছে।
বিহারের ভোট ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন দেখা গিয়েছে, ২০২৫ সালের নির্বাচনে হিংসামুক্ত ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। ১৯৮৫ সালে ভোট-হিংসায় নিহত হয় ৬৩ জন, ১৯৯০-এ ৮৭ জন, ১৯৯৫-এ একাধিকবার ভোট স্থগিত হয়, ২০০৫ সালে ৬৬০টি বুথে পুনর্নির্বাচন হয়। সেই তুলনায় ২০২৫ সালের নির্বাচন একেবারেই শান্তিপূর্ণ শূন্য হিংসা এবং শূন্য পুনর্নির্বাচন। এনডিএ এটিকে উন্নত আইনশৃঙ্খলার প্রমাণ হিসেবে সামনে এনেছে।
বিহার ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম রাজ্য এবং এর প্রায় ৮৯ শতাংশ মানুষ গ্রামীণ অঞ্চলে বসবাস করেন। তাই গ্রামীণ ভোটব্যাঙ্কই নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এনডিএ দাবি করেছে এই নির্বাচনের ম্যান্ডেট ‘সম্মান’ ও ‘আত্মসম্মানের ভোট’। চাট পুজোকে কেন্দ্র করে মহাজোটের সমালোচনা, এবং মোদির উদ্যোগে চাট পুজোকে ইউএনইএসসিওর ঐতিহ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রচেষ্টাকেও বিজেপি জোরের সঙ্গে ব্যবহার করেছে।
নীতীশ কুমারের রাজনৈতিক পথচলা জেপি আন্দোলন থেকে শুরু করে আধুনিক বিহারের প্রশাসনিক রূপকার হিসেবে তাঁর উত্থান তাঁকে আজও বহু সম্প্রদায়ের কাছে গ্রহণযোগ্য করেছে। লোহিয়া, কর্পূরি ঠাকুর, ভি.পি. সিং-এর মতো নেতাদের ভাবধারায় বেড়ে ওঠা নীতীশ কুমার উন্নয়ন, স্থিতিশীলতা ও শান্তিপূর্ণ প্রশাসনের প্রতীক হিসেবে পরিচিত।
এবারের নির্বাচনের ফলাফল স্পষ্ট করে দিচ্ছে মোদি নীতীশ জোটই ২০২৫ সালের নির্বাচনের সবচেয়ে বড় ‘গেম চেঞ্জার’। এনডিএর এই রেকর্ড সাফল্যের পর বিজেপি সদর দফতরে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণকে ঘিরে তীব্র উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।


