প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শুক্রবার ৯৭তম জন্মদিন উপলক্ষে প্রাক্তন উপ-প্রধানমন্ত্রী লাল কৃষ্ণ আদবানির ( LK Advani) সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এবং তাঁকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী মোদী এদিন এক্স-এ আদবানিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে লিখেছেন, “এই বছরটি বিশেষ কারণ আদবানিজিকে তাঁর অসামান্য জাতীয় সেবা জন্য ভারতরত্ন সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে। তিনি ভারতের অন্যতম শ্রদ্ধেয় রাষ্ট্রনায়ক, যিনি দেশের উন্নয়নে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। তাঁর বুদ্ধিমত্তা ও গভীর অন্তর্দৃষ্টির জন্য তিনি সর্বদা সম্মানিত। আমি সৌভাগ্যবান যে বহু বছর ধরে তাঁর দিকনির্দেশনা পেয়েছি। তাঁর দীর্ঘ এবং সুস্থ জীবন কামনা করি।”
এদিকে, বিজেপির জাতীয় সভাপতি জে.পি. নাড্ডা আদবানির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। নাড্ডা এক্স-এ লেখেন, “আমি আজ ‘ভারতরত্ন’ শ্রদ্ধেয় শ্রী লাল কৃষ্ণ আদবানিজিকে তাঁর বাসভবনে গিয়ে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছি এবং তাঁর আশীর্বাদ গ্রহণ করেছি। আমি প্রার্থনা করি যাতে তিনি সবসময় সুস্থ থাকেন এবং দীর্ঘকাল বাঁচেন।”
হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী নায়ব সিং সানিও আদবানির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান। এক্স-এ তিনি লেখেন, “আমি প্রাক্তন উপ-প্রধানমন্ত্রী, ভারতরত্ন শ্রদ্ধেয় শ্রী লাল কৃষ্ণ আদবানিজিকে তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে অভিনন্দন জানিয়েছি, যিনি দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। বিজেপি পরিবারের নেতা, যিনি রাজনীতিতে তাঁর নিষ্ঠা ও নীতির জন্য লক্ষ লক্ষ কর্মীর আদর্শ, আমি প্রার্থনা করি যাতে তিনি দীর্ঘজীবী হন, সুস্থ থাকেন এবং আমাদের সব সময় দিকনির্দেশনা দেন।”
লাল কৃষ্ণ আদবানি, যিনি ভারতের রাজনীতিতে দীর্ঘ সময় ধরে এক অমূল্য অবদান রেখেছেন, তিনি ১৯২৭ সালের ৮ নভেম্বর করাচিতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪২ সালে তিনি RSS-এ স্বয়ংসেবক হিসেবে যোগ দেন এবং পরে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আদবানি ১৯৮০ সালে বিজেপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের মধ্যে ছিলেন এবং ১৯৮৬ থেকে ১৯৯০, ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৮ এবং ২০০৪ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত পার্টির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দীর্ঘদিন পর্যন্ত বিজেপির সভাপতি ছিলেন এবং দলের প্রতিষ্ঠার পরবর্তী কয়েক দশকে দলের নীতি ও উদ্দেশ্যগুলির সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন।
এছাড়াও, আদবানি ১৯৯৯ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ভারত সরকারের উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০০২ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে, বিজেপি এবং ভারতের জাতীয় ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স (NDA) সরকার ভারতে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এসেছিল।
আদবানি একজন প্রথিতযশা নেতা, যিনি ভারতের ইতিহাসে বহু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। তিনি বরাবরই দেশের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ঐক্যের পক্ষে এবং ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির প্রতি নিজের বিশ্বাস বজায় রেখেছেন। তার নেতৃত্বের সময়েই বিজেপি এবং NDA সরকার অনেক গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও বিদেশ নীতি গ্রহণ করেছে, যা আজও ভারতীয় রাজনীতির অংশ।
এছাড়াও, ২০২৩ সালে ভারতরত্ন সম্মাননা পেয়ে আদবানি তাঁর জীবনের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান লাভ করেন। ভারতরত্ন সম্মাননা, যা ভারতের সর্বোচ্চ নাগরিক পুরস্কার, আদবানির দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন এবং দেশের প্রতি তাঁর অবদানকে সম্মানিত করার জন্য দেওয়া হয়।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, আদবানি বহু বছর ধরে ভারতের রাজনৈতিক দৃশ্যে বিরোধী দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা ছিলেন। তাঁর সংগ্রামী জীবন এবং রাজনীতিতে তাঁর দৃঢ় অবস্থান দেশের ইতিহাসে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বিজেপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের মধ্যে অন্যতম, আদবানি দলটির আদর্শ এবং লক্ষ্য নির্ধারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং অন্য নেতারা তাঁর জন্মদিনে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন, এটি শুধুমাত্র আদবানির দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন এবং অবদানের প্রতি সম্মান নয়, বরং ভারতের রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতেও তাঁর প্রভাবের একটি প্রশংসা। রাজনৈতিক ইতিহাসে আদবানি একটি চিরস্থায়ী নাম হয়ে থাকবে এবং তাঁর পথ প্রদর্শন ভারতীয় রাজনীতির ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকবে।