জন্মদিনের আগেই মণিপুর সফরে নরেন্দ্র মোদী

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর মিজোরাম ও মণিপুর সফরে (PM Modi Manipur Visit) যেতে পারেন বলে সরকারি সূত্রে খবর। এই সফর ঘিরে উত্তর-পূর্ব ভারতের…

Prime Minister Narendra Modi Manipur Visit

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর মিজোরাম ও মণিপুর সফরে (PM Modi Manipur Visit) যেতে পারেন বলে সরকারি সূত্রে খবর। এই সফর ঘিরে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে এখন থেকেই চাঞ্চল্যের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। বিশেষত, মণিপুরে জাতিগত হিংসার পরিপ্রেক্ষিতে এটি হবে প্রধানমন্ত্রীর প্রথম সফর, যা রাজনৈতিক ও সামাজিক দিক থেকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

প্রথমে মিজোরাম সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন বহুল প্রতীক্ষিত বৈরাবি-সাইরাং রেলপথের। নতুন এই ৫১.৩৮ কিলোমিটার দীর্ঘ রেললাইন উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে গোটা দেশের যোগাযোগ আরও সুদৃঢ় করবে বলে কেন্দ্র আশা করছে। রেলপথের মাধ্যমে রাজধানী আইজল সরাসরি যুক্ত হবে আসামের শিলচর শহরের সঙ্গে। এর ফলে পণ্য পরিবহণ থেকে শুরু করে যাত্রী চলাচল—উভয় ক্ষেত্রেই গতি আসবে এবং বাণিজ্যিক ক্ষেত্রেও মিজোরাম নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে।

   

মিজোরাম সরকারের একাধিক আধিকারিক জানিয়েছেন, আইজল থেকে প্রধানমন্ত্রী সরাসরি মণিপুরে উড়ে যেতে পারেন। তবে সফরের পূর্ণাঙ্গ সূচি এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হয়নি। ইম্ফলের সরকারি কর্তারা এখনো সফরের বিষয়ে চূড়ান্ত নিশ্চয়তা দিতে পারেননি।

এদিকে, মিজোরামের মুখ্যসচিব খিল্লি রাম মীনা সোমবার একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক ডেকেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সফরকে ঘিরে সমস্ত প্রস্তুতি খতিয়ে দেখার জন্য। বৈঠকে বিভিন্ন দফতর, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং প্রশাসনিক কর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বিশেষ করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা, যানবাহন চলাচলের নিয়ন্ত্রণ, অভ্যর্থনা এবং শহরের সাজসজ্জা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

সরকারি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সরকারি কর্মচারী, কৃষক, এবং বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণের বিশেষ ব্যবস্থা করা হচ্ছে। অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হবে আইজলের লাম্মাউল এলাকায়। স্থানীয় মানুষদের মধ্যেও এই প্রকল্প উদ্বোধন ঘিরে উৎসাহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

অ্যাক্ট ইস্ট নীতির বড় পদক্ষেপ
নতুন রেলপথটি কেন্দ্রের অ্যাক্ট ইস্ট নীতি-র একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিকে দেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত করার পাশাপাশি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাজারের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোই এই নীতির উদ্দেশ্য। বিশেষজ্ঞদের মতে, বৈরাবি-সাইরাং রেললাইন চালু হলে পণ্য আমদানি-রপ্তানি, পর্যটন, এবং ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে ব্যাপক সুবিধা হবে।

Advertisements

মণিপুর সফর: প্রতীকি না রাজনৈতিক?
প্রধানমন্ত্রীর মণিপুর সফরকে ঘিরে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মধ্যে বিশেষ আগ্রহ তৈরি হয়েছে। গত বছরের মে মাসে শুরু হওয়া জাতিগত সংঘর্ষে মণিপুর এখনও পর্যন্ত অশান্ত। বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে, হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে এখনও শিবিরে দিন কাটাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী যদি সত্যিই মণিপুর সফরে যান, তা হবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ।

বিরোধী শিবির দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ জানিয়ে আসছে যে, হিংসার ঘটনায় কেন্দ্রের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। মোদী সরকারের নীরবতা নিয়ে কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা সরব হয়েছেন বারবার। ফলে প্রধানমন্ত্রীর এই সফর কেবল প্রশাসনিক নয়, রাজনৈতিক বার্তাও বহন করবে। অনেকের মতে, লোকসভা নির্বাচনের আগে এই সফরের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার মণিপুরবাসীদের আশ্বাস দিতে চাইছে যে, দিল্লি তাঁদের দুরবস্থার পাশে রয়েছে।

নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ
মণিপুরে এখনো পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। বিভিন্ন এলাকায় উত্তেজনা অব্যাহত রয়েছে। ফলে প্রধানমন্ত্রীর সফর ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা হবে নজিরবিহীন। কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী, রাজ্য পুলিশ এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলি ইতিমধ্যেই সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। সফরের আগে একাধিক স্তরে নিরাপত্তা পর্যালোচনা বৈঠক হবে বলে জানা গেছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আসন্ন মিজোরাম ও মণিপুর সফরকে ঘিরে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজনৈতিক আবহে এক নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। একদিকে বৈরাবি-সাইরাং রেলপথের উদ্বোধন উন্নয়নের প্রতীক, অন্যদিকে মণিপুর সফর হতে পারে দীর্ঘদিন ধরে অশান্ত রাজ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনার কেন্দ্রীয় সরকারের বার্তা। মোদীর জন্মদিনের ঠিক আগে এই সফর তাঁর জন্য যেমন রাজনৈতিক তাৎপর্য বহন করছে, তেমনই উত্তর-পূর্ব ভারতের মানুষের জন্যও নতুন আশার আলো জাগাচ্ছে।