Wednesday, November 26, 2025
HomeBharatসত্যজিৎ এর বাড়ি পুনর্নির্মাণের লক্ষ্যে ইউনুসকে প্রস্তাব মোদীর

সত্যজিৎ এর বাড়ি পুনর্নির্মাণের লক্ষ্যে ইউনুসকে প্রস্তাব মোদীর

ভেঙে ফেলা হয়েছে ময়মনসিংহে সত্যজিৎ রায়ের বাড়ি। এবারে সেই বাড়ির পুনর্নির্মাণের জন্য ইউনুস সরকারকে প্রস্তাব দিলেন নরেন্দ্র মোদী (PM Modi) কলকাতা ও ময়মনসিংহের মধ্যে সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধনের এক অভূতপূর্ব উদ্যোগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশের ইউনুস সরকারের কাছে সত্যজিত রায়ের পৈতৃক বাড়ি পুনর্নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছেন।

Advertisements

এই উদ্যোগের লক্ষ্য হল ময়মনসিংহে অবস্থিত এই ঐতিহাসিক বাড়িটিকে একটি সাহিত্য জাদুঘরে রূপান্তরিত করা এবং ভারত ও বাংলাদেশের ভাগ করা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা।

   

এই প্রস্তাবের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী জির এই অনুকরণীয় উদ্যোগের জন্য আমি গভীর কৃতজ্ঞতা ও প্রশংসা জানাই। সত্যজিত রায়ের পৈতৃক বাড়ি পুনর্নির্মাণের জন্য ভারত সরকারের প্রস্তাব একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ।”

সত্যজিত রায়, বাংলা চলচ্চিত্র ও সাহিত্যের এক মহান ব্যক্তিত্ব, তাঁর অপু ত্রয়ী, চারুলতা, প্রতিদ্বন্দ্বী-এর মতো চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বিশ্ব দরবারে বাংলার সংস্কৃতিকে তুলে ধরেছেন। তাঁর সিনেমাগুলি মানবিক আবেগ ও সমাজের সূক্ষ্ম দিকগুলিকে অপূর্বভাবে উপস্থাপন করেছে। চলচ্চিত্র নির্মাণের পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন প্রখ্যাত লেখক, চিত্রকর এবং সঙ্গীত পরিচালক।

তাঁর দাদা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ছিলেন বিখ্যাত শিশুসাহিত্যিক ও প্রকাশক, যাঁর প্রতিষ্ঠিত ‘উপেন্দ্রকিশোর প্রকাশনা’ বাংলা শিশুসাহিত্যে একটি মাইলফলক। সত্যজিত রায়ের পৈতৃক বাড়ি ময়মনসিংহে অবস্থিত, যা বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের মালিকানাধীন।

এই বাড়িটি সম্প্রতি ভেঙে ফেলা হয়েছে, যার জন্য ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে দুঃখ প্রকাশ করেছে।প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই প্রস্তাব বাংলা সংস্কৃতির প্রতি তাঁর গভীর শ্রদ্ধা ও দুই দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।

এই বাড়িটিকে একটি সাহিত্য জাদুঘরে রূপান্তরিত করার মাধ্যমে সত্যজিত রায় ও তাঁর পরিবারের অবদানকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা সম্ভব হবে। এই উদ্যোগ শুধুমাত্র সত্যজিত রায়ের স্মৃতিকে সম্মান জানানোর জন্যই নয়, বরং ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক সহযোগিতার একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে।শুভেন্দু অধিকারী তাঁর বক্তব্যে বলেছেন, “এই পদক্ষেপ আমাদের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যকে সম্মান জানাবে। এই চিন্তাশীল সিদ্ধান্ত এবং আমাদের ইতিহাস সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতির জন্য আমি অত্যন্ত গর্বিত।”

তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে এই প্রকল্প দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্পর্ককে আরও জোরদার করবে এবং সত্যজিত রায়ের অবদানকে বিশ্বব্যাপী প্রচারে সহায়তা করবে।সত্যজিত রায়ের কাজ বাংলা সংস্কৃতির একটি অমূল্য সম্পদ। তাঁর ‘অপু ত্রয়ী’ বিশ্ব চলচ্চিত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়। তাঁর সিনেমাগুলি গ্রামীণ বাংলার জীবন, মানুষের সুখ-দুঃখ, এবং সামাজিক পরিবর্তনের গভীর চিত্র তুলে ধরেছে।

Advertisements

তিনি শুধু একজন চলচ্চিত্র নির্মাতাই ছিলেন না, তাঁর লেখা গল্প, উপন্যাস এবং শিশুসাহিত্যও বাঙালির মনে গভীর ছাপ ফেলেছে। তাঁর সৃষ্ট ফেলুদা এবং প্রোফেসর শঙ্কু চরিত্রগুলি আজও পাঠকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এছাড়া, তিনি ‘সন্দেশ’ পত্রিকার মাধ্যমে শিশুসাহিত্যে অবদান রেখেছেন, যা তাঁর পিতামহ উপেন্দ্রকিশোর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।ময়মনসিংহে অবস্থিত এই পৈতৃক বাড়ি সত্যজিত রায়ের পরিবারের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

এই বাড়িটি উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর আমল থেকে রায় পরিবারের সাংস্কৃতিক ও সাহিত্যিক কার্যকলাপের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। এটি পুনর্নির্মাণের মাধ্যমে একটি জাদুঘরে রূপান্তরিত হলে তা দুই দেশের তরুণ প্রজন্মকে সত্যজিত রায় ও তাঁর পরিবারের অবদান সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দেবে।

এই জাদুঘর কেবল সত্যজিত রায়ের চলচ্চিত্র ও সাহিত্যকর্মের প্রদর্শনীই নয়, বরং ভারত-বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি প্রতীক হিসেবে কাজ করবে।বাংলাদেশের ইউনুস সরকারের কাছে এই প্রস্তাব পাঠানোর পর এখন সবার নজর রয়েছে তাঁদের প্রতিক্রিয়ার দিকে। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক মহলও এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে।

একজন বাংলাদেশী সাংস্কৃতিক কর্মী বলেন, “সত্যজিত রায় শুধু ভারতের নন, তিনি আমাদেরও গর্ব। তাঁর পৈতৃক বাড়ি পুনর্নির্মাণের এই প্রকল্প আমাদের দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ককে আরও গভীর করবে।”এই প্রকল্প শুধুমাত্র সত্যজিত রায়ের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনই নয়, বরং দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক সহযোগিতার একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

‘গোপনে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছে কেন্দ্র, বাংলায় কথা বললেই গ্রেফতার,’ বিস্ফোরক মুখ্যমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই উদ্যোগ বাংলা সংস্কৃতির প্রতি তাঁর প্রতিশ্রুতি এবং দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জোরদার করার ইচ্ছাকে প্রতিফলিত করে। এই প্রকল্প সফল হলে, ময়মনসিংহের এই জাদুঘর ভারত ও বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐক্যের একটি জীবন্ত প্রতীক হয়ে উঠবে।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments