অবশেষে ইতিহাসের আরেকটি অধ্যায়ের সাক্ষী থাকল অযোধ্যা। মঙ্গলবার রামমন্দিরের শিখরে আনুষ্ঠানিকভাবে গেরুয়া পতাকা উত্তোলন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই পতাকা উত্তোলনকে রামমন্দির নির্মাণের সম্পূর্ণতার প্রতীক হিসেবে বর্ণনা করেছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর (PMO)।
প্রধানমন্ত্রীর দফতরের আগের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, পতাকাটি ডান-কোণ ত্রিভুজাকৃতি — উচ্চতা ১০ ফুট, দৈর্ঘ্য ২০ ফুট। পতাকায় অঙ্কিত উজ্জ্বল সূর্যের প্রতীক ভগবান রামের শৌর্য ও দীপ্তির প্রতিনিধিত্ব করে। রয়েছে ‘ওঁ’ চিহ্ন এবং কোবিদার গাছের প্রতীকও। পতাকাটি মর্যাদা, ঐক্য এবং সাংস্কৃতিক ধারাবাহিকতার বার্তা বহন করবে — যা রামরাজ্যের আদর্শকেই তুলে ধরছে বলে জানায় PMO।
ঐতিহ্যের দুই স্থাপত্য ধারার মিলন
পতাকা উঠেছে উত্তর ভারতের ঐতিহ্যবাহী নাগরা স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত শিখরের মাথায়। চারদিকে ৮০০ মিটার বিস্তৃত ‘পারকোটার’ বৃত্তাকার প্রাচীর নির্মিত হয়েছে দক্ষিণ ভারতীয় স্থাপত্যরীতিতে। দুই ধারা পাশাপাশি উপস্থিত হওয়ায় রামমন্দিরের চরিত্রে যুক্ত হয়েছে বৈচিত্র্য ও ঐতিহ্যবহুল সাংস্কৃতিক সমাহার।
প্রধানমন্ত্রীর পূজা, দর্শন ও পরিক্রমা PM Modi hoists saffron flag in Ayodhya
দিনের শুরু থেকেই ভক্তিমগ্ন পরিবেশে অনুষ্ঠানপল্লি। অযোধ্যা সফরে প্রধানমন্ত্রী মোদী প্রথমে দর্শন করেন সপ্তমন্দির— যেখানে মহর্ষি বাসিষ্ঠ, মহর্ষি বিশ্বামিত্র, মহর্ষি অগস্ত্য, মহর্ষি বাল্মীকি, দেবী অহল্যা, নিশাদরাজ গুহ ও মাতা শবরির মন্দির অবস্থিত। এরপর প্রধানমন্ত্রী দর্শন করেন শেষাবতার মন্দির। রামদরবার গর্ভগৃহে ‘দর্শন’ ও ‘পূজা’ সেরে মোদী পরিদর্শন করেন মাতা অন্নপূর্ণা মন্দিরও। এর আগে শহরের রাস্তায় এক বর্ণাঢ্য রোডশোতেও অংশ নেন তিনি।
পবিত্র পঞ্চমী তিথিতে ইতিহাস
পতাকা উত্তোলনের দিনটি সাংস্কৃতিকভাবে আরও তাৎপর্যপূর্ণ। মঙ্গলবার ছিল শুদ্ধ মার্গশীর্ষ মাসের শুক্লার পঞ্চমী — শ্রী রাম ও সীতা মায়ের বিবাহ পঞ্চমীর শুভ তিথি। একই দিন শিখ গুরু তেগ বাহাদুরের শহিদ দিবসও, যিনি ১৭শ শতকে অযোধ্যায় ৪৮ ঘণ্টা ধ্যান করেছিলেন। দুই ঐতিহ্যের মিলনে দিনটির আধ্যাত্মিক মাহাত্ম্য আরও গভীর হয়ে উঠেছে।
ভগবান রামের জীবনের ইতিহাসে খোদাই
মন্দির কমপ্লেক্সের বহির্ভাগে স্থাপন করা হয়েছে বাল্মীকি রামায়ণের ওপর ভিত্তি করে ভগবান রামের জীবনের ৮৭টি খোদাই করা শিলাচিত্র। পারকোটার প্রাচীর বরাবর ভারতীয় সংস্কৃতির বিভিন্ন অধ্যায়ের ৭৯টি ব্রোঞ্জ ভাস্কর্যও — যা দর্শনার্থীদের সামনে আনে ঐতিহাসিক ও শিক্ষামূলক অভিজ্ঞতা।
নিরাপত্তায় নজিরবিহীন কড়াকড়ি
মোদীর সফর উপলক্ষে অযোধ্যায় নজিরবিহীন নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়। শহরে মোতায়েন করা হয়েছে মোট ৬,৯৭০ জন নিরাপত্তাকর্মী, যার মধ্যে ছিলেন ATS কমান্ডো, NSG স্নাইপার, সাইবার বিশেষজ্ঞ ও প্রযুক্তি দল। ড্রোনবিরোধী প্রযুক্তি, উন্নত নজরদারি ব্যবস্থা এবং রিয়েল-টাইম মনিটরিং চালু ছিল মন্দির এলাকা ও আশপাশে।
সোমবার সন্ধ্যায় উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ অযোধ্যায় গিয়ে সমস্ত প্রস্তুতি খতিয়ে দেখেন এবং কর্তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন।
