বন্দেমাতরম-এর ১৫০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে জাতীয় পর্যায়ে আলোচনা ও অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আবারও কংগ্রেসকে নিশানা করলেন। তিনি বলেন, ‘বন্দেমাতরম-এর ১০০ বছর পূর্তির সময় ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছিল একেবারেই ভিন্ন। সেই সময় কংগ্রেসের শাসনাধীন দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিল। ভারতীয় সংবিধানের শ্বাসরোধ করা হয়েছিল। অথচ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা এই মহাকাব্যিক রচনা ছিল স্বাধীনতার প্রতীক, দেশের মানুষের স্বাধীনচেতা মনকে উজ্জীবিত করা একটি গান।’
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় আরও বলেন, ‘বন্দেমাতরম শুধুমাত্র একটি গানের নাম নয়। এটি আমাদের দেশের জনগণের হৃদয়ে দেশের প্রতি ভালোবাসা এবং স্বাধীনতার জন্য লড়াই করার অনুপ্রেরণা জাগিয়ে তোলে। সেই সময় যখন দেশের সংবিধানকে বন্ধ করে রাখা হয়েছিল, তখনও এই গান মানুষের মধ্যে স্বাধীনতার আত্মা বজায় রেখেছিল। এটি প্রমাণ করে যে, সাহস ও চেতনার শক্তি কোন শাসনের বাঁধনেও বন্ধ করা যায় না।’ মোদী আরও উল্লেখ করেন, ‘বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের রচনা শুধু সাহিত্য নয়, এটি এক অসীম শক্তির উৎস। এই গান আমাদেরকে স্মরণ করায় যে স্বাধীনতার চেতনায় ভরা মানুষ কোনো বাধার কাছে হার মানে না। সে শক্তিই আমাদের আজকের দেশকে সমৃদ্ধ এবং স্বাধীন করেছে।’
তিনি কংগ্রেসের অতীতের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বলেন, ‘যখন ‘বন্দেমাতরম’-এর ১০০ বছর পূর্তি উদযাপন করা হচ্ছিল, তখন দেশের শাসনযন্ত্রের মাধ্যমে জনগণের স্বাধীনতা সীমিত করা হচ্ছিল। জরুরি অবস্থা কার্যকর ছিল, দেশের সংবিধান এবং মৌলিক অধিকারগুলিকে প্রায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সেই সময় দেশের মানুষ সাহস ও চেতনার শক্তিতে সংগ্রাম করেছিল। অথচ আজ আমরা এই ঐতিহাসিক গান উদযাপন করছি স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে।’
বন্দেমাতরম-এর জন্ম ১৮৭৫ সালে, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাসে। এই গান তখন থেকেই ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক হয়ে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর বক্তব্যে এই দিকটিকেও তুলে ধরেন এবং বলেন, ‘এটি কেবল একটি সাহিত্যকর্ম নয়; এটি দেশের জনগণের মধ্যে একতা, সাহস এবং দেশপ্রেমের অটুট চেতনা তৈরির একটি মাধ্যম।’
বক্তৃতার শেষ অংশে মোদী বলেন, ‘আজ আমরা যখন ‘বন্দেমাতরম’-এর ১৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করছি, তখন আমাদেরকে শুধু অতীত স্মরণ করতে হবে না, বরং এই চেতনাকে বর্তমান এবং ভবিষ্যতের প্রজন্মের মাঝে প্রজ্বলিত রাখতে হবে। আমাদের সংবিধান ও গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হবে, যাতে কোনো শক্তিই দেশের স্বাধীনতার চেতনা ধ্বংস করতে না পারে।’
এই উপলক্ষে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা এবং স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। দেশের নানা প্রান্তে বন্দর, স্টেডিয়াম ও পাবলিক প্লেসে ‘বন্দেমাতরম’-এর শ্রোতামঞ্চ তৈরি করা হয়েছে, যেখানে সাধারণ মানুষও এই ঐতিহাসিক দিন উদযাপন করতে পারছে।
