নয়াদিল্লি: দেশের কর কাঠামোয় ইতিহাস গড়ে দেওয়া এক বড় পরিবর্তনের ঘোষণা করল কেন্দ্র। গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স বা জিএসটি-র কাঠামোতে আমূল সংস্কার এনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (PM Modi) একে ‘স্বাধীন ভারতের সবচেয়ে বড় সংস্কার’ বলে আখ্যা দিলেন। এই সংস্কারের ফলে বহু প্রয়োজনীয় সামগ্রীর উপর কর হ্রাস করা হয়েছে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু পণ্যের উপর থেকে সম্পূর্ণভাবে কর তুলে দেওয়া হয়েছে। নতুন জিএসটি স্ল্যাব ২২ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হবে—নবরাত্রির প্রথম দিন থেকেই মধ্যবিত্ত পরিবারের পকেটে স্বস্তি পৌঁছে দেবে এই সিদ্ধান্ত।
প্রধানমন্ত্রী মোদী জানান, “দেশবাসী নবরাত্রির প্রথম দিন থেকেই এর সুফল পাবেন। ধনতেরস এবং দীপাবলি হবে আরও আনন্দময়। এটি স্বাধীন ভারতের সবচেয়ে বড় সংস্কার।” ন্যাশনাল টিচার্স অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “১৫ আগস্ট লালকেল্লার প্রাচীর থেকে আমি ঘোষণা করেছিলাম যে দীপাবলি ও ছটের আগে দেশবাসী দ্বিগুণ সুখবর পাবেন। আজকের জিএসটি সংস্কার সেই প্রতিশ্রুতির প্রথম ধাপ।”
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “বিশ্বের প্রেক্ষাপটে ভারতকে শক্তিশালী করতে হলে সময়োপযোগী সংস্কার অপরিহার্য। এই জিএসটি সংস্কার পাঁচটি রত্ন নিয়ে এসেছে—কর ব্যবস্থাকে আরও সহজ করা, নাগরিকদের জীবনের মান উন্নয়ন, ভোগ ও বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করা, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানকে উৎসাহ দেওয়া এবং সহযোগী ফেডারেলিজমকে আরও মজবুত করা।”
গতকাল জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পূর্বের চারটি কর স্ল্যাবের পরিবর্তে এবার মাত্র দুটি স্ল্যাব থাকবে—৫ শতাংশ ও ১৮ শতাংশ। এর ফলে সাধারণ মানুষের উপর করের বোঝা কমবে বলে মনে করা হচ্ছে। জীবনরক্ষাকারী ওষুধ, চিকিৎসা বীমা, খাদ্যদ্রব্য, দুগ্ধজাত সামগ্রী, পাউরুটি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্যের উপর থেকে কর সম্পূর্ণভাবে তুলে দেওয়া হয়েছে। কৃষিপণ্য, সবুজ শক্তি প্রকল্প, ছোট গাড়ি ও মোটরবাইকের উপর কর কমানো হয়েছে।
এই সিদ্ধান্তে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো বড় স্বস্তি পাবে বলে বিশেষজ্ঞদের মত। খাদ্যপণ্য ও স্বাস্থ্যখাতে কর হ্রাসের ফলে দৈনন্দিন জীবনের খরচ কমবে এবং বাজারে চাহিদা বাড়বে। সরকারের মতে, এই সংস্কারের ফলে বিনিয়োগ বাড়বে, কর্মসংস্থান তৈরি হবে এবং ব্যবসা করার পরিবেশ আরও সহজ হবে।
প্রধানমন্ত্রী মোদি এই সুযোগে কংগ্রেসকেও কটাক্ষ করেন। তিনি অভিযোগ করেন, “কংগ্রেস সরকার যখন ক্ষমতায় ছিল তখন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, খাবার থেকে শুরু করে ওষুধ পর্যন্ত সবকিছুর উপর কর চাপিয়েছিল। আজকের ভারত সেই দিন থেকে অনেক এগিয়ে গিয়েছে।”
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, জিএসটি সংস্কারের এই পদক্ষেপ ভারতের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করবে এবং বিশ্ববাজারে দেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াবে। ব্যবসায়ীরা ইতিমধ্যেই এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং আশা করছেন, এই পদক্ষেপ অর্থনীতিকে নতুন দিশা দেবে।
এই সংস্কারের ফলে উৎসবের মরসুমে ক্রেতাদের মনোবল আরও বাড়বে। নবরাত্রি, ধনতেরস, দীপাবলি ও ছটপুজোর বাজারে এবার আরও বেশি ভিড় জমার সম্ভাবনা প্রবল। সরকারও আশা করছে, এই পদক্ষেপ ভোক্তা ব্যয় বাড়িয়ে সামগ্রিক অর্থনীতিকে ত্বরান্বিত করবে।