নয়াদিল্লি: গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সফরে সোমবার ফ্রান্স ও আমেরিকার উদ্দেশে পাড়ি দেবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সোমবার ফ্রান্সের উদ্দেশে রওনা দেবেন তিনি। সেখান থেকে আমেরিকায় যাবেন মোদী। সব ঠিক থাকলে আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকও করবেন তিনি। ওই বৈঠকে নিশ্চিত ভাবেই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হতে চলেছে অভিবাসী প্রসঙ্গ। এর পাশাপাশি, নয়া মার্কিন শুল্কনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আলোচনা হতে পারে বলেও সূত্রের খবর৷
প্রধানমন্ত্রী মোদীর ফ্রান্স এবং আমেরিকা সফরের উদ্দেশ্য হল দুই দেশের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক আরও দৃঢ় করা, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করা। তাঁর এই সফর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভারতের প্রভাব ও সম্পর্কের ক্ষেত্রেও নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
১০ ফেব্রুয়ারি, সোমবার থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি, বুধবার পর্যন্ত ফ্রান্সে থাকবেন মোদী৷ ১০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় প্যারিসের এ্যালিজে প্যালেসে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর নৈশভোজের আসরে অংশ নেবেন৷ যেখানে উপস্থিত থাকবেন বিশ্বের শীর্ষ প্রযুক্তি কোম্পানির সিইও এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বরা।
১১ ফেব্রুয়ারি, ফরাসি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) অ্যাকশন সামিটে অংশ নেবেন মোদী। এই সম্মেলনে দুই দেশের নেতৃত্ব AI-এর নিরাপদ, মানবিক ও দায়িত্বশীল ব্যবহারের উপর গুরুত্ব আরোপ করবেন এবং একটি ঐতিহাসিক ঘোষণাপত্র গ্রহণের কথা রয়েছে। মোদীর এই উদ্যোগ ভারতের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে চলেছে, কারণ AI-র বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন উন্নয়ন, ব্যবহারের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক স্তরে পৌঁছানোই আমাদের লক্ষ্য৷
ফ্রান্স সফরের পরের দিন, ১২ ফেব্রুয়ারি, প্রধানমন্ত্রী মোদী ও প্রেসিডেন্ট মাখোঁ মার্সেই শহরে ভারতের কনস্যুলেট উদ্বোধন করবেন। ওই দিনই তাঁরা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে শহিদ ভারতীয় সেনাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মাজার্গস ওয়ার সমাধিস্থলে গিয়ে পুষ্পস্তবকে শ্রদ্ধা জানাবেন। এছাড়াও, ফ্রান্সের সঙ্গে পারমাণবিক শক্তি ক্ষেত্রেও নতুন পদক্ষেপ নিতে ছোট মডুলার রিয়াক্টর সংক্রান্ত একটি চুক্তি হতে পারে, যা দুই দেশের মধ্যে পারমাণবিক সহযোগিতা আরও শক্তিশালী করবে। এই সফরের একটি বিশেষ ঘোষণা হবে ২০২৬ সালকে “ভারত-ফ্রান্স উদ্ভাবন বর্ষ” হিসেবে ঘোষণা করা।
১২ ফেব্রুয়ারিই ফ্রান্স থেকে আমেরিকায় পৌঁছবেন মোদী৷ ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী সেখানেই থাকবেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বসবেন মোদী। প্রধান আলোচ্য বিষয় হবে বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, প্রযুক্তি, সন্ত্রাসবাদবিরোধী অভিযান এবং ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় নিরাপত্তা। আমেরিকায় শীর্ষ ব্যবসায়ী এবং ভারতীয় কমিউনিটির সদস্যদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন মোদী।
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক সময় মুখোমুখি বৈঠকে বসতে চলেছেন মোদী ও ট্রাম্প৷ কারণ, ইতিমধ্যে ১০৪ জন অবৈধবাসী ভারতীয়কে সেনা বিমানে চাপিয়ে দেশে ফিরেয়েছে আমেরিকা৷ কিন্তু, এর থেকেও যে বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে, সেট হল কী ভাবে তাঁদের পাঠানো হয়েছে৷ হাতে-পায়ে চেন বাঁধা অবস্থায় বিমানে চাপিয়ে যেভাবে তাঁরা দেশে ফিরেছেন, তা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়েছে। ভারতীয়দের সঙ্গে এমন ব্যবহারে মোদী সরকারের কূটনৈতিক সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। এই অবস্থায় মোদী-ট্রাম্পের মধ্যে মার্কিন অভিবাসী নীতি নিয়ে আলোচনা হবে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল৷
ফ্রান্স এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই সফরের মাধ্যমে ভারতের কূটনৈতিক, বাণিজ্যিক এবং প্রতিরক্ষা সম্পর্ক আরও গভীর হবে। ফ্রান্সের সঙ্গে প্রযুক্তি, বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং পারমাণবিক সহযোগিতা শক্তিশালী হবে, এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কও নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে। প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই সফর ভারতের আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ এক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা আগামী দিনে আরও নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে।