১৫ আগস্ট, স্বাধীনতা দিবসের সকালে লালকেল্লার আকাশে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর (Pm Modi) স্বাধীনতা দিবসের ভাষণ। এই দিনটি শুধু দেশের কাছে নয়, মোদীর (Pm Modi) রাজনৈতিক জীবনের ইতিহাসেও হয়ে রইল বিশেষ স্মরণীয়। কারণ, একসঙ্গে একাধিক রেকর্ড গড়লেন তিনি।
প্রথমত, টানা ১২ বার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে লালকেল্লা থেকে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পর জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার নজির এখন কেবল তাঁরই। এতদিন এই রেকর্ড ছিল প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর দখলে—তিনি টানা ১১ বার স্বাধীনতা দিবসের ভাষণ দিয়েছিলেন। ইন্দিরাকে পেছনে ফেলে এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে এখন নরেন্দ্র মোদী। শীর্ষে রয়েছেন দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু, যিনি মোট ১৭ বার এই ঐতিহাসিক মঞ্চ থেকে ভাষণ দেন।
এবারের ভাষণে মোদী (Pm Modi) আরেকটি বড় রেকর্ড তৈরি করলেন—নিজেরই পূর্বের রেকর্ড ভেঙে দিলেন। শুক্রবার সকালে ঠিক ৭টা ৩৩ মিনিটে ভাষণ শুরু করে ৯টা ১৮ মিনিটে শেষ করেন তিনি। অর্থাৎ, মোট ১০৫ মিনিট বা ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের ভাষণ। এর আগে, ২০২৪ সালে তাঁর ভাষণের দৈর্ঘ্য ছিল ৯৮ মিনিট (১ ঘণ্টা ৩৮ মিনিট), যা তখন পর্যন্ত সবচেয়ে দীর্ঘ ছিল। এরও আগে ২০১৬ সালে ৯৬ মিনিট এবং ২০২৩ সালে ৯০ মিনিটের ভাষণ দিয়ে দীর্ঘতার তালিকায় নিজের নামই বারবার এগিয়ে রেখেছেন মোদী। অন্যদিকে, তাঁর প্রধানমন্ত্রীত্বে (Pm Modi) স্বাধীনতা দিবসের সবচেয়ে ছোট ভাষণটি হয়েছিল ২০১৭ সালে—মাত্র ৫৬ মিনিটের।
প্রধানমন্ত্রীর এই দীর্ঘ ভাষণগুলিতে সবসময়ই থাকে উন্নয়ন, সংস্কার, ও ভবিষ্যতের দিশা নিয়ে এক বিস্তৃত রূপরেখা। এবারের ভাষণও ছিল ব্যতিক্রম নয়। মোদী দেশের অর্থনীতি থেকে শুরু করে কৃষি, শিল্প, প্রযুক্তি, শিক্ষা, প্রতিরক্ষা এবং সামাজিক উন্নয়ন—সব ক্ষেত্রের অগ্রগতি তুলে ধরেন। তিনি জানান, ভারতের উন্নয়নের গতি আগামী দিনে আরও ত্বরান্বিত হবে এবং বিশ্বমঞ্চে দেশের ভূমিকা হবে আরও গুরুত্বপূর্ণ।
এছাড়া, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অবদান এবং দেশের নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন তিনি। নতুন প্রজন্মকে দায়িত্বশীল নাগরিক হওয়ার আহ্বান জানান এবং ‘বিকশিত ভারত ২০৪৭’ স্বপ্ন বাস্তবায়নের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভারতের সাফল্য, যেমন—জি২০ সভাপতিত্ব, মহাকাশ গবেষণায় সাফল্য, এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, সেগুলিও ভাষণে গুরুত্ব পায়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘ ভাষণ কেবল সময়ের হিসাবে রেকর্ড নয়, বরং এতে তুলে ধরা নীতি ও পরিকল্পনাও গুরুত্বপূর্ণ। মোদীর ধারাবাহিকভাবে দীর্ঘ সময় ধরে বক্তব্য রাখার অভ্যাস তাঁর নিজস্ব রাজনৈতিক স্টাইলের অংশ হয়ে উঠেছে। একদিকে এটি তাঁর সমর্থকদের অনুপ্রাণিত করে, অন্যদিকে বিরোধীদের মধ্যে সমালোচনারও জন্ম দেয়। তবুও, পরিসংখ্যানের বিচারে তিনি যে স্বাধীনতা দিবসের ভাষণের ইতিহাসে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছেন, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
ভারতের স্বাধীনতা দিবস সবসময়ই জাতীয় গর্ব ও আত্মসমালোচনার মুহূর্ত হয়ে আসে। প্রতি বছরের মতো এবারও লালকেল্লার প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ ছিল দেশের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের এক সমন্বিত প্রতিচ্ছবি। আর সেই সঙ্গে ইতিহাসের পাতায় যুক্ত হল একাধিক নতুন রেকর্ড—যা আগামী বহু বছর ধরে আলোচনা ও তুলনার বিষয় হয়ে থাকবে।
এইভাবে, ২০২৫ সালের স্বাধীনতা দিবস কেবল জাতীয় উৎসব হিসেবেই নয়, বরং রাজনৈতিক ইতিহাসে এক বিশেষ অধ্যায় হিসেবেও স্মরণীয় হয়ে থাকবে—যেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একই দিনে টানা ভাষণ ও দীর্ঘতম ভাষণ, উভয় ক্ষেত্রেই শীর্ষে নিজের নাম তুললেন।